1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাচ্চাদের ইংরেজি শেখাতে চান জার্মান পিতা-মাতা

১৪ জুন ২০১০

জার্মানিতে ইদানিং বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের ইংরেজি শেখানোর ওপর জোর দিচ্ছেন৷ দ্বিভাষী স্কুলের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন তারা৷ জার্মানের পাশাপাশি ইংরেজিও ভাল করে শিখতে হবে – বাবা মায়ের দাবি এটাই৷

https://p.dw.com/p/No7F
ছবি: Beate Wand

জার্মান এবং ইংরেজি –দু'টি ভাষাতেই বাচ্চাদের পড়ানো হচ্ছে৷ এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ল্যাংগুয়েজ ইমারশান'৷ ভাষা শেখানোর এই অভিনব পদ্ধতিতে বাচ্চাদের কার্যত নতুন ভাষার মধ্যে ‘ডুবিয়ে' দেওয়া হয় – অর্থাৎ তারা ক্লাসের মধ্যে যাই করুক না কেন, তা নতুন ভাষায় প্রকাশ করা হয়৷ বিভিন্ন স্কুলে ক্রমেই এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে৷ গোটা জার্মানিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার স্কুল রয়েছে৷ মাত্র সাতশ' স্কুলে বর্তমানে এই পদ্ধতিটি মেনে চলা হচ্ছে৷ এর চাহিদা বেড়েই চলেছে৷

গতবছর বিভিন্ন স্কুলে এই ‘ল্যাংগুয়েজ ইমারশান' প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ প্রায় অর্ধেক স্কুলই জোর দিচ্ছে ইংরেজি ভাষার ওপর৷ বেশ কিছু বিষয় পড়ানো হচ্ছে পুরোপুরি ইংরেজি ভাষায়৷ তবে এর পাশাপাশি আরো ১৪টি বিভিন্ন ভাষা শেখানো হচ্ছে স্কুলগুলোতে৷ এর মধ্যে রুশ, পোলিশ, জাপানি এবং ফার্সি উল্লেখযোগ্য৷

বার্লিনের একটি কিন্ডারগার্টেনে ছোট ছোট বাচ্চারা ইংরেজি শিখছে৷ জুতোর ফিতা বাঁধার আগেই তাদের শিখতে হচ্ছে ফিতার ইংরেজি কি৷ এটাকেই বলা হচ্ছে ‘ল্যাংগুয়েজ ইমারশান'৷ বাচ্চাদের বয়স ৬ মাস থেকে পাঁচ বছর৷ এই বয়সেই বাচ্চাদের পাঠানো হচ্ছে এমন একটি স্কুলে, যেখানে একটি মাধ্যমেই কথা বলা হচ্ছে এবং তা হলো ইংরেজি৷ তবে প্রয়োজনে জার্মান ভাষাও ব্যবহার করা হচ্ছে৷ বাচ্চারা ইংরেজি ভাষায় গান গাইছে৷ ছবি আঁকার রং, তুলি, দুপুরের খাবার, খাওয়ার পর হাত ধোয়া - সবকিছু বলা হচ্ছে ইংরেজিতে৷ বাবা-মায়েরা অত্যন্ত আনন্দিত৷ একজন বাবা জানালেন, তাঁর মেয়েকে তিনি দশ মাস বয়সেই এই স্কুলে ভর্তি করেছেন৷ এখন মেয়ের বয়স দুই বছর৷

Kinder mit Messlatte Flash-Galerie
ছবি: picture alliance/dpa

তিনি জানান, ‘‘পুরো বিষয়টি দারুণ৷ বাড়িতে আমরা শুধু জার্মান ভাষায় কথা বলি৷ কিন্তু তারপরেও আমরা খেয়াল করেছি, যে ও যখন কোন শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে তখন পুরোপুরি ইংরেজিতেই কথা বলে৷ ইংরেজি ভাষাটি আমার মেয়ে পুরোপুরি বোঝে৷ কোন প্রশ্ন করলে দ্রুত উত্তর দেয়৷ আমরা এখন শুধু অবাক হয়ে দেখি!''

এই তো গেল একজন বাবা৷ শিক্ষিকারা কী বলছেন ? সিলভিয়া হুল্চ এর আগে কোনদিন দ্বিভাষী কোন স্কুলে পড়াননি৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা যখনই যা বলি, বাচ্চারা তা বুঝতে পারছে৷ সরাসরি উত্তর না দিলেও আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতে পারে৷ আমার মনে হয় ওরা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি, যে দুটো ভাষায় ওদের কথা বলতে হচ্ছে – দুটো ভাষায় ওদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে৷ পুরো বিষয়টি ওদের কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে৷ আমি নিজেও যদি এমন সুযোগ পেতাম! কারণ আমি নিজেই ইংরেজি শেখা শুরু করি পঞ্চম শ্রেণী থেকে৷ আমার কাছে ইংরেজি খুব কঠিন মনে হত৷ আমি ইংরেজি ব্যাকরণ বুঝতে পারতাম না৷ আমি কখনোই খুব ভাল নম্বর পাইনি৷''

জেসন ভন ইংরেজিভাষী৷ দু'বছর আগে যখন তিনি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন, তখন শুধুমাত্র তিনিই বাচ্চাদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতেন৷ বাচ্চারা সাদরে জেসনকে, জেসনের ভাষাকে গ্রহণ করেছে – এটা দেখে তিনি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন৷ জেসন জানালেন, ‘‘জার্মান বাচ্চারা নতুন কোন ভাষা বা নতুন কিছু দেখে ভয় পায় না৷ তাদের কাছে ইংরেজি ভাষা খুব আকর্ষণীয় এবং চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে৷''

১৯৬০ সাল থেকে ‘দ্বিভাষী' বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে৷ এপর্যন্ত যা ফলাফল এসেছে, তাতে জানা গেছে যে কোন বাচ্চা একই সঙ্গে দু'টো ভাষা শিখলে তাদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে দ্রুত৷ যে কোন বিষয় শিখতেও তারা সময় কম নেয়৷ বড় হয়ে অন্য যে কোন ভাষাও তারা দ্রুত শিখতে পারে৷ ছোটবেলায় দ্বিভাষী হওয়ায় শেখার ক্ষমতাও বেড়ে যায় অনেক৷ অনেক বাবা-মা রয়েছেন যারা জার্মান নন, বিদেশী৷ তাদের মতে, এই স্কুল যে কোন বাচ্চার জন্য উপযুক্ত একটি স্কুল৷ একজন মা জানান, ‘‘আমি চীন থেকে এসেছি৷ আমার যমজ ছেলে৷ আমি আমার বাচ্চাদের সঙ্গে চীনা ভাষায় কথা বলি৷ বাচ্চারা স্কুলে ইংরেজি আর জার্মান শিখছে৷ বাচ্চারা তিনটি ভাষা একসঙ্গে শিখছে৷ আমার স্বামী, আমার বা বাচ্চাদের জন্য তা খুব সহজ নয় – কিন্তু আগামী দু-তিন বছরের মধ্যেই আশা করছি এর সুফল আমরা পাবো৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদন: সঞ্জীব বর্মন