1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাদুড়ও হতে পারে ভয়াবহ রোগের উৎস

১৮ অক্টোবর ২০১১

রোগ ব্যাধির জন্ম অনেক কিছু থেকেই হতে পারে৷ এই যেমন খাদ্য দ্রব্য, তেমনি নানা প্রাণীর কাছ থেকেও ভয়াবহ রোগ ব্যাধির জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে৷ মানুষের চোখের আড়ালে থাকা বাদুড়ও হতে পারে তেমনি অনেক রোগের উৎস৷

https://p.dw.com/p/12tZr
ভয়াবহ রোগের উৎস বাদুড়ছবি: DW

বিজ্ঞানীরা রোগ ব্যাধির উৎস খুঁজতে চলে গিয়েছেন এবার ঘানার গভীর জঙ্গলে৷ আফ্রিকার এই দেশটিতে অনেক সময় মানুষ রহস্যময় রোগে মারা যায়৷ এসব রোগের কারণ সাধারণ মানুষের কাছে অজানা থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন আশেপাশের প্রকৃতি থেকেই এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে৷ তাই তারা ঘানার মানুষের খাদ্যাভাসের পাশাপাশি সেখানকার প্রাণীকূল নিয়েও গবেষণা চালিয়ে দেখছেন৷ তার মধ্যে অন্যতম হলো সেখানকার গভীর জঙ্গলের গুহায় থাকা বাদুড়৷ এই গবেষণায় যেমন রয়েছেন জীববিজ্ঞানীরা তেমনি রয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরাও৷

Fledermäuse Viren Partnerschaft
জার্মানির জীববিজ্ঞানী স্টেফান ক্লোসে ঘানায় সক্রিয়ছবি: DW

জার্মানির জীববিজ্ঞানী স্টেফান ক্লোসে বেশ কয়েক বছর ধরে ঘানায় ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন৷ বাদুড়ের কাছ থেকে কী ধরণের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে তা নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন৷ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সেখানকার স্থানীয় গবেষকরাও৷ কোকো গাছের গভীর জঙ্গলে তাঁরা খুজে পেলেন একটি গুহা, যার ভেতর বাস করে হাজার হাজার বাদুড়৷ বাদুড় ধরতে গুহামুখে তারা একটি চিকন নাইলনের জাল পাতলেন৷

ক্লোসে বলেন, ‘‘ এই ধরণের কাজ বেশ রোমাঞ্চকর, কারণ কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা দেখতে পেয়েছি যে মানুষের মধ্যে রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে৷ আর এই রোগ আসছে বাদুড়ের কাছ থেকে৷ আমরা হয়তো একটি উপায় খুঁজে পাবো কীভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়৷''

অন্ধকার পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করেন যতক্ষণ পর্যন্ত বাদুড়গুলো খাবার খুঁজতে গুহার বাইরে বের হয়ে আসে৷ আর এই সময় অনেক বাদুড় আটকা পড়ে জালে৷ এমনই এক বাদুড় ধরে ক্লোসে বললেন, ‘‘আমার হাতে একটি বাদুড় রয়েছে, আর এগুলো খুঁজতেই আমরা এখানে এসেছি৷ এই বাদুড়টির নাম হেপোজেটোহুসকাবেহুপা৷ এটা খুব অস্থির হয়ে আছে আর নড়াচড়া করছে৷ আমার মাথার হেলমেটে পাওয়ারফুল লাইট লাগানো থাকলেও তাতে এর কোন সমস্যা হচ্ছে না, কারণ বাদুড় দেখতে পায় না৷''

Fledermäuse Viren
ঘানায় পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই সব বাদুড়কেছবি: DW

এসব বাদুড় নিয়ে গবেষণা করতে থাকলেন গবেষকরা৷ খতিয়ে দেখলেন তাদের আচরণ, তাদের কাছ থেকে কীভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেসব৷ এবং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, কোন ধরণের ভাইরাস এইসব বাদুড় থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷

স্থানীয় শহর কোমাসির বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে এই নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা চালাচ্ছেন জার্মান এবং ঘানার বিজ্ঞানীরা৷ তারা বাদুড়র থেকে পাওয়া স্যাম্পল নিয়ে খতিয়ে দেখছেন তাতে ইবোলো কিংবা সার্স ভাইরাস রয়েছে কিনা৷ এইসব ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত বহু মানুষ মারা গেছে৷ সেখানকার গবেষক থিয়া বিঙ্গার বললেন, ‘‘যেমনভাবে স্প্যানিশ ফ্লু ভাইরাস গোটা ল্যাটিন অ্যামেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তেমনি ইবোলা ও সার্স ভাইরাসও এখানে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ যদিও ইবোলা অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েনি৷ ঠিক তেমনিভাবে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে যে কোন ভাইরাস যে কোন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ এটা মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে৷''

Flash-Galerie Future Now Viren Ghana
জর্মানির আরেক বিজ্ঞানী স্টেফান দ্রস্টেনছবি: DW

বিজ্ঞানীদের মতে, কেবল বাদুড় নয় অনেক বন্য প্রাণী থেকেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ সমস্যা হলো, এসব বন্য প্রাণীর মাংস আবার স্থানীয় লোকদের কাছে বেশ প্রিয়৷ তারা জঙ্গলে গিয়ে এসব বন্য প্রাণী মেরে নিয়ে আসে এবং বাজারে বিক্রি করে৷ কিন্তু অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে পশুর মাংস কাটা এবং পরে তা রান্নার কারণে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এমনকি অনেকে বাদুড়ের মাংসও খেয়ে থাকে৷ গবেষকরা এই ব্যাপারে স্থানীয় মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ কিন্তু মানুষের মধ্যে বদ্ধমুল কুসংস্কারের কারণে সেটা এত সহজ হচ্ছে না, যেমনটি জানালেন কুমাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্যামুয়েল অপোং৷ স্থানীয় মানুষের এই কুসংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্নার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে৷ এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে, তারা যে মাংস খাচ্ছে তা রোগ বালাইয়ের জীবাণু থেকে মুক্ত৷

বিজ্ঞানীদের ভাইরাস খোঁজার এই প্রচেষ্টা কেবল গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ নয়, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারেও তা ছড়িয়ে পড়েছে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই