1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌বিজ্ঞাপনেও অধর্মের খোঁজ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চুল কাটার দোকানের বিজ্ঞাপনে কেন দেবী দুর্গার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, এই নিয়েও এখন সমস্যা, হাঙ্গামা হচ্ছে বাংলায়, বিহারে এবং উত্তরপ্রদেশে৷ আপত্তি উঠছে শারদসংখ্যার প্রচ্ছদ নিয়েও৷

https://p.dw.com/p/2jh5r
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

বাংলাভাষায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ছোটদের পত্রিকা অনেক বছর ধরেই তাদের পুজোসংখ্যার প্রচ্ছদে দেবী দুর্গার এমন চরিত্র চিত্রণ করে আসছে৷ কখনও দুর্গা সপরিবার পুজোমণ্ডপে মুখের সামনে মোবাইল ধরে সেলফি তুলছেন, আবার কখনও দুর্গা মহিষাসুরের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন মহাকাশযানে চড়ে৷ এমন উদাহরণও আছে, যেখানে আস্ত মহাকাশযানের মুখ কোনোটা দুর্গার আদলে, কোনোটার মুখ অসুরের মতো৷ লড়াই চলছে ত্রিশূল আর খড়গের নয়, আধুনিক লেজার গানের৷ কখনও এইসব ছবি নিয়ে সমস্যা হয়ন৷ কারণ, এসব ছবি বার বার বাঙালির উদার ধর্মীয় সংস্কৃতিকেই প্রমাণ করেছে, যেখানে আগমনী গান বাঁধা হয় দুর্গাকে মেয়ে হিসেবে কল্পনা করে৷ যেখানে এই দেব-দেবীরা আসলে বাঙালির ঘরের লোক৷ কাজেই ছোটদের পত্রিকার পুজোসংখ্যার প্রচ্ছদে শিল্পীর এই স্বাধীনতা সব বাঙালি খোলা মনেই মেনে নিয়েছে৷

কিন্তু সমস্যা হলো এবার৷ বাংলার নামী একটি পত্রিকা গোষ্ঠী প্রতিবছরই একাধিক পুজোসংখ্যা প্রকাশ করে৷ এবার তাদের একটি প্রচ্ছদে গনেশ-জননী দুর্গাকে শিল্পী এঁকেছেন শিশু জিশুকে কোলে নিয়ে বসে থাকা মা মেরি'র মতো কল্পনা করে৷ আপত্তি উঠল, কেন অন্য ধর্মের প্রতীকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হলো হিন্দুদের আরাধ্য একজন দেবীকে৷ অনেকেরই সেই সময় প্রথম খটকা লেগেছিল, যে দুর্গা যে আদতে হিন্দুদের দেবী, বাঙালিরা কখনও সেভাবে ভেবে উঠতে পারেনি৷ যে কারণে সারা বাংলায় এই উৎসবে অ-হিন্দুরাও এই উৎসবে সামিল হন৷ কিন্তু হিন্দুত্বের রক্ষকরা ফের আপত্তি তুললেন ওই পত্রিকা গোষ্ঠীর আরও একটি শারদ সংখ্যার প্রচ্ছদ নিয়ে, যেখানে অজন্তার গুহাচিত্রের শৈলীতে দুর্গাকে কল্পনা করা হয়েছে, এবং সেই ছবির ঊর্ধাঙ্গে একটি উত্তরীয় ছাড়া কোনও আবরণ নেই৷ হই-চই শুরু হয়ে গেল যে, ওই পত্রিকা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ণ করছে৷

এই প্রেক্ষাপটে কোনও চুল কাটার দোকানের বিজ্ঞাপনে দুর্গার সপরিবার উপস্থিতি রীতিমতো খেপিয়ে তুলেছে ওই হিন্দুত্ববাদীদের৷ কারণ, ওই চুল কাটার বিখ্যাত দোকানগুলির মালিক জাভেদ হাবিব, যিনি ধর্মত মুসলমান৷ যদিও বিজ্ঞাপনটি নেহাতই নির্দোষ, যাতে দেখা যাচ্ছে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী হাবিব'‌স-এর বিউটি সালোঁতে রূপচর্চায় ব্যস্ত এবং দেব-সেনাপতি কার্তিকও ফেসপ্যাক নিয়ে বসে আছেন৷ নেহাতই মজা করে পুরো দৃশ্যটি রচনা করা, যে মজা, যে রসিকতার ঐতিহ্য বাংলায় বহু যুগের৷ কিন্তু জাভেদ হাবিবের এই বিজ্ঞাপন নিয়ে এমন হই-চই হলো, বিশেষ করে সোশাল মিডিয়ায়, এমন গালিগালাজ যে, জাভেদ হাবিব বিজ্ঞাপন দিয়ে বলতে বাধ্য হলেন যে, তাঁদের বিজ্ঞাপন কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত৷ বিজ্ঞাপনটি তাঁরা তুলে নিচ্ছেন৷ কিন্তু তাতে আক্রোশ কমেনি, কারণ জাভেদ হাবিব মুসলিম, এবং সফল ব্যবসায়ী, আর হয়ত সেটাই তাঁর একমাত্র অপরাধ৷ ফলে বাংলার উত্তেজনা ছড়ালো প্রতিবেশী বিহারে, এমনকি সুদূর উত্তরপ্রদেশেও৷ হামলা, ভাঙচুর হলো জাভেদ হাবিবের সালোঁতে৷ স্পষ্ট বোঝা গেল, উৎসবের মুখে এরকম একটা অজুহাতের জন্যেই যেন কেউ কেউ তৈরি হয়ে বসে ছিল৷

‘এটা নিছকই মজা, বাঙালি সংস্কৃতিরই অঙ্গ’

বাংলা বিজ্ঞাপন জগতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত কীর্তীশ তালুকদার৷ তিনি জানালেন, বিজ্ঞাপনের বয়ান লেখার সময় তাঁরা সবসময়ই সতর্ক থাকেন, যাতে কারো ধর্মীয় আবেগে আঘাত না লাগে৷ কিন্তু জাভেদ হাবিবের এই বিজ্ঞাপনটিতে এমন কিছু দেখছেন না কীর্তীশ, যাতে এত শোরগোল হতে পারে৷ তাঁর কাছেও এটা নিছকই মজা, যেটা আবারও আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিরই অঙ্গ৷

প্রিয় পাঠক, মন্তব্য করতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...