1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাকা রাস্তায় ঢালতে আপত্তি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৭ মে ২০২০

লকডাউনের জেরে সংকটের মুখে আউটডোর বিজ্ঞাপনের ব্যবসা৷ রাস্তায় লোক না থাকায় বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে আর অর্থ দিতে রাজি নন বিজ্ঞাপনদাতারা৷

https://p.dw.com/p/3btjp
ছবি: DW/P. Samanta

কবি লিখেছিলেন, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে'৷ কলকাতা-সহ পৃথিবীর সব আধুনিক শহরের মুখ সত্যিই বিজ্ঞাপনে ঢেকে গিয়েছে৷ হোর্ডিং-এর মাধ্যমে সেই বিজ্ঞাপনী প্রচার এখন করোনায় আক্রান্ত! যেসব বাণিজ্যিক সংস্থা প্রচারের লক্ষ্যে আউটডোর বিজ্ঞাপন দেয়, তারা ক্রমশ হাত গুটিয়ে নিচ্ছে৷ ব্যবসা বন্ধ থাকায় এই সংস্থাগুলি আর্থিক ক্ষতির মুখে৷ একই সঙ্গে সংকটের মুখে পড়েছে প্রচারের কাজ করা বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি৷ আউটডোর বিজ্ঞাপন এজেন্সির শীর্ষ সংগঠনের দাবি, এর ফলে এই রাজ্যে ১০ লাখ মানুষের রুটি-রুজির সংকট তৈরি হয়েছে৷ 

‘‘এখন কাজ না থাকায় পাঁচজনের সংসার টানতে পারছি না’’

কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের রেল স্টেশন থেকে বাস স্ট্যান্ড, সড়কের ধার থেকে বাড়ির ছাদ, সর্বত্র বিজ্ঞাপন দেখা যায়৷ হোর্ডিং-এ বড় থেকে ছোট কর্পোরেট সংস্থা তাদের পণ্যের প্রচার তুলে ধরে৷ বিজ্ঞাপন দেয় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও৷ খোদ রাজ্য সরকার থেকে রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং দেখা যায় শহরে৷ এই বিজ্ঞাপন সাধারণ মানুষদের সামনে তুলে ধরার গোটা প্রক্রিয়া পরিচালনা করে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি৷ পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের এজেন্সির সংখ্যা হাজার দশেক৷ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অসংখ্য কর্মী, যাঁদের মধ্যে অনেকে ইলেকট্রিশিয়ান ও ফ্লেক্স ফিটার-ও আছেন৷ অর্থাৎ, কেউ বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং লাগিয়ে দেন, কেউ তাতে আলোর ব্যবস্থা করেন৷ বিজ্ঞাপনদাতাদের বক্তব্য, লকডাউনের ফলে রাস্তায় লোকজন না থাকায় তাঁদের হোর্ডিং কেউ দেখছে না৷ সেই কারণে তারা আর এজেন্সিকে টাকা দেবেন না৷ সাধারণভাবে আউটডোর হোর্ডিং লাগানোর পর প্রথম এক থেকে তিন মাস বিজ্ঞাপনদাতাদের টাকা দিতে হয় না৷ তারপর থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সংস্থা এজেন্সির প্রাপ্য মেটায়৷ কিন্তু, লকডাউন কার্যকর হওয়ার আগের, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রাপ্য টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আউটডোর অ্যাডভার্টাইজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল (ওএএডব্লিউবি)-এর সভাপতি অরূপ চৌধুরীর৷ তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের পর হোর্ডিং-এর জন্য কেউ টাকা দেবে না, এটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু, ২৪ মার্চ পর্যন্ত রাস্তায় মানুষ ছিল৷ তাই সেই দিন পর্যন্ত আমাদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়া উচিত৷ আমরা সেই আবেদনই করেছি৷ নইলে শুধু বিজ্ঞাপন এজেন্সি নয়, গোটা শিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷'' 
গোটা পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থা৷ বিজ্ঞাপনী ফ্লেক্স ছাপানোর ব্যবসাকে এই হিসেবের মধ্যে ধরা হয়নি৷ রাজ্যে এই ধরনের ছাপাখানার সংখ্যা হাজার পাঁচেক৷ একটি মুদ্রণ যন্ত্র থাকলেও সেখানে কমপক্ষে জনা চারেক কর্মী কাজ করেন৷ অনেক ইউনিটে ৮-১০টি মুদ্রণ যন্ত্র থাকে৷ এখন এ সব ছাপাখানার হাতে নতুন কাজ নেই৷ বহু মানুষ অন্যান্য শিল্পের মতো কর্মহীন৷ পরে অবস্থা ফিরবে, এমন আশু সম্ভাবনা নেই৷ দুর্গাপুজোর সময় কলকাতার সব রাস্তা হোর্ডিং-এ ভরে যায়৷ কিন্তু, এ বছর সেই ছবি হয়তো পাল্টাতে চলেছে৷ ফলে লকডাউন উঠে গেলেও ফ্লেক্স ছাপানোর ইউনিট কতটা সচল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ ফ্লেক্স লাগানোর কাজে যুক্ত বেলঘরিয়ার মলয় বৈদ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ঠিকাদারের অধীনে কাজ করি৷ দিনে ১৫০-২০০ টাকা পাই৷ প্রত্যেক ঠিকাদারের অধীনে চার-পাঁচজন কাজ করেন৷ রাজ্যে ঠিকাদার আছে পাঁচ হাজারের মতো৷ এখন কাজ না থাকায় পাঁচজনের সংসার টানতে পারছি না৷''
লকডাউনের জন্য দোকানপাট বন্ধ থাকায় কেনাবেচা হচ্ছে না৷ ফলে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদক সংস্থার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই তারা বিজ্ঞাপনের বাজেটে কাটছাঁট করছে৷ মোবাইল নির্মাতা সংস্থা ‘ভিভো'-র বিপণন শাখার ময়ূখ উকিল বলেন, ‘‘লকডাউন উঠে যাওয়ার পর পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, এখন বলা সম্ভব নয়৷ এখন আমাদের পণ্যের কেনাবেচা বন্ধ৷ পরবর্তীতে ব্যবসায় স্বাভাবিক গতি ফিরে এলে বিজ্ঞাপনের কথা ভাবা হবে৷'' তবে তাঁর আশ্বাস, আউটডোর বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে মার্চ পর্যন্ত এজেন্সির পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে৷
ক্ষতি সামাল দিতে একাধিক কর মকুবের আর্জি জানিয়েছে ওএএডব্লিউবি৷ তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখেছে৷ অরূপ বলেন, ‘‘পুরনিগম, পুরসভা ও পঞ্চায়েত বিজ্ঞাপনের জন্য আমাদের কাছ থেকে যে কর আদায় করে, সেটা মকুব করার অনুরোধ করা হয়েছে৷ একইভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে রেলওয়েকে৷ কর দিতে হলে আউটডোর বিজ্ঞাপনের ব্যবসা ধ্বংসের দিকে চলে যাবে৷''