1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিডিআর বিদ্রোহে আহত তরুণের বাঁচার গল্প

২৪ নভেম্বর ২০১০

আক্তার হোসেনের বয়স সতের বছর৷ এই বয়সের ছেলেরা যা করে, মানে অবসরে সাইকেল নিয়ে এখানে সেখানে ছোটাছুটি৷ মাঝে মাঝে ক্রিকেট বল পিটিয়ে চার ছক্কার হিসেব কষা৷ আক্তারও এসব করেছে, তবে তার মূল কাজটা ছিল চা বিক্রি৷

https://p.dw.com/p/QGgR
Bangladesh, Rifles, army, officers, Pilkhana, mutiny, ঢাকা, বিডিআর, বিদ্রোহ,
ঢাকায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় মুখ ঢেকে এক জওয়ান (ফাইল ছবি)ছবি: DW

ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় চা বিক্রি করে সংসার চালাতো আক্তার৷ ২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি রাইফেলস স্কয়ারের কাছেই ছিল আক্তার৷ অনেক লোকের ভিড় সেখানে, তাই চা বিক্রিটা ভালোই জমছিল৷ কিন্তু হঠাৎই সবাই কেন যেন ছুটতে শুরু করলো৷ কোন কিছু বুঝি ওঠার আগেই দু'টি বুলেট বিঁধে গেল আক্তারের শরীরে৷

গুলিবিদ্ধ আক্তার

সেই গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই দৌড়াতে শুরু করলো আক্তার৷ কিন্তু মিনিটখানেকের বেশি টিকলো না তার গতি৷ শরীরের শক্তি শেষ, তাই রাস্তায় পড়ে গেল আক্তার, তার রক্তে ভেসে যাচ্ছিল পিচ ঢালা রাস্তা৷ যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো সে৷ তিনি বলেন, চারদিকে অনেক মানুষ ছিল৷ কিন্তু কেউ আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি৷ শেষে এক রিকশাচালক আমাকে সাহায্য করেন৷ আমার গায়ের জামাটা ছিঁড়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু রক্ত থামছিল না৷

বিডিআর বিদ্রোহের শিকার আক্তার

বুঝতেই পারছেন, গত বছরের বিডিআর বিদ্রোহে আহতদের একজন আক্তার৷ সে বেঁচে গেলেও সেই বিদ্রোহে প্রাণ হারায় ৭৪ জন, যাদের মধ্যে ৫৭ জনই ছিলেন সেনাকর্তা৷ তাই, এত হতাহতের মাঝে কারই বা সময় আছে আক্তারের খোঁজ নেয়ার৷ মাসখানেক ঢাকা মেডিকেলে কাটিয়ে সরকারের কিছু সহায়তা নিয়ে আক্তার তাই চলে গেল গ্রামের বাড়ি, বরিশালে৷ তারপর এক সময় অনুভব করল ডান হাতটা একেবারেই কাজ করছে না তাঁর৷

Bangladesh Rifles, Dhaka, BDR, Dhaka, Bangladesh, Army
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে সেনা অ্যাকশন (ফাইল ছবি)ছবি: Harun-ur-Rashid Swapan

এবার সহায়তায় হকার

আক্তার কিন্তু হাল ছাড়েনি৷ শুরু করল ঢাকা-বরিশাল আসা-যাওয়া৷ এক হকারের মাধ্যমে সে হাজির হল ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে৷ সেই সংস্থা পত্রিকার খবর ছাপলো, আক্তারকে সহায়তার জন্য৷

অস্ট্রেলিয়ার পথে আক্তার

আক্তারের ভাগ্য ভালো বলতে হবে৷ পত্রিকার খবর দেখে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী এটোম রহমান৷ নানা চেষ্টার পর এবছরের জুনে আক্তার উড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ায়৷

ক্যাবরিনি হাসাপাতালে অপারেশন

অস্ট্রেলিয়ায় আক্তারের সহায়তায় এগিয়ে আসে চিলড্রেন ফার্স্ট ফাউন্ডেশন৷ এর আগে তৃষ্ণা কৃষ্ণা নামক দুই বাংলাদেশি জমজ বোনের অপারেশনেও সহায়তা করেছিল এই সংগঠন৷ এটোম রহমানের কাছ থেকে আক্তারের দায়িত্ব বুঝে নেয় চিলড্রেন ফার্স্ট৷ মেলবোর্নে আগস্টে শুরু হয় তার চিকিৎসা৷

সফল অপারেশন

ক্যাবরিনি হাসপাতালে দু'ঘন্টা কাঁচি চলে আক্তারের উপর৷ অর্থোপেডিক সার্জন জন গ্রিফিৎস'এর নেতৃত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তার আক্তারের হাতে শক্তি ফেরানোর কাজে লেগে পড়েন৷ সফল হয় সে অপারেশন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জন গ্রিফিৎস জানান, আক্তারের ডান হাত এবং বুকের অবস্থা বেশ খারাপ ছিল৷ তবে প্রথম চেষ্টাতেই সফল হন তাঁরা৷ তিনি বলেন, এখন সে তাঁর হাত মাথার উপর তুলতে পারে৷ নিত্যদিনের কাজেও তার হাত এখন সচল৷ তাঁর কাধও এখন প্রায় পুরোপুরি কাজ করছে৷ অথচ আগে সেটা একেবারেই কাজ করতো না৷

আক্তার এখন অনেকটাই সুস্থ৷ উচ্ছ্বসিত এই তরুণ মেলবোর্ন থেকে ডয়চে ভেলেকে বলেন, হাত এখন উপরে তুলতে পারি৷ অনেক অনেক ভালো এখন৷

দেশে ফেরা

চিকিৎসা শেষে গত সপ্তাহ দেশেও ফিরে এসেছেন আক্তার হোসেন৷ অবুঝ এই তরুণ চিন্তিত পরিবার নিয়ে৷ লেখাপড়া খুব বেশি হয়নি৷ তবুও স্বপ্ন বড় ছেলে হিসেবে পরিবারটাকে চালাবেন তিনি৷

আক্তার চান, ভালো কোন কাজ করতে৷ বাংলাদেশের মানুষের কাছে তার আর্জি, একটি কাজ দিন৷ যাতে করে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারি৷ কেউ কি আক্তারের জন্য সেই চেষ্টা করবে?

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারুক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান