1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা কেমন করে একাত্ম হবে নতুন দেশে

১২ জুলাই ২০১০

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা কে না নিতে চায় ? সবাই চায় বিদেশে যাবো, পড়াশোনা করবো৷ ইদানিং আসছেও জার্মানিতে অনেকে৷ আর বিদেশে আসার পর হঠাৎ করেই তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ, দেশ এবং সংস্কৃতি দেখে হোঁচট খাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/OGew
বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা পড়ছেন একসঙ্গেছবি: AP

কীভাবে একজন বিদেশি ছাত্র বিদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে? বিদেশি একটি ছাত্র বা ছাত্রীকে আপন করে নেওয়ার জন্য অতিথি দেশই বা কী করতে পারে ? জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ খোলাখুলিভাবেই জানিয়েছে এ কথাগুলো৷ বিশ্ববিদ্যালয়টি আয়োজন করেছে বিশেষ একটি সেমিনারের৷

আমি বিদেশে পড়তে চাই৷ নতুন একটি দেশে যাচ্ছি৷ সে দেশের মানুষের প্রতি আমার আচার-আচরণ কেমন হওয়া উচিত ? আমার সঙ্গেই বা তারা কীভাবে কথা বলবে ? কোন ধরণের প্রশ্ন তারা আমাকে করতে পারে ? ঠিক এধরণের প্রশ্নের যথার্থ উত্তর খুঁজে পেতে জার্মানির ভুর্ৎসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে৷ সেমিনারের নাম দেয়া হয়েছে ‘গ্লোবাল সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল কম্পিটেন্স'৷ গত দু'বছর ধরে এই প্রকল্পটি চলছে৷ এই প্রকল্পে কাজ করছে ভুর্ৎসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদ৷ এই অনুষদগুলোর অধীনে পঞ্চাশটি বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে পড়াশোনা করা যায়৷ ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য শিখতে বিভিন্ন ট্রেনিং পর্যন্ত নিচ্ছে৷

ইয়োহানা জানাল, ‘‘আরেকবার জানাবেন কি, এখানে কী করা হচ্ছে ? '

কিমের উত্তর,‘‘হুমমমমমম, আমি খেলাধুলা নিয়ে পড়াশোনা করছি, এর সঙ্গে রয়েছে ইংরেজি আর শিক্ষা৷ আর আপনি ? মনোবিজ্ঞান চতুর্থ সেমেস্টার৷ পরীক্ষা কি এর মধ্যে হয়ে গেছে ?'

ইয়োহানা বলল, ‘‘না৷ পরীক্ষা এখনো হয়নি৷ পরীক্ষা এখনো সামনে৷''

কিমের সাধাসিধে উত্তর,‘‘হমমমমমম....''

Die neue Universität in Würzburg
জার্মানির ভুর্ৎসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয় সেমিনারটিছবি: Mahmoud Yacoub

কিম এবং ইয়োহানা ‘গ্লোবাল সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল কম্পিটেন্স' সেমিনারে অংশগ্রহণ করছে৷ তাদের কথাবার্তা থেকে বিশেষ কিছু বোঝা গেল কি ? দু'জন ছাত্রী পড়াশোনার বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে৷ তারপরেও কিন্তু কিছু একটা লক্ষ্য করা গেছে৷

কিম নিজেই তা স্বীকার করল, ‘‘আমার কাজ ছিল নিজের পরিচয় দেওয়া৷ আর প্রতিটি উত্তরের আগেই আমি ‘হু, হাঁ' করেছি৷ যখন এসব দিয়ে উত্তর দেওয়া হয় তখন প্রতিপক্ষকে খুব বেশি কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়না৷''

তবে ইয়োহানা বলল অন্য কিছু, ‘‘প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে আমি ‘আপনি' করে কথা বলছি৷ এটা আমার জন্য বেশ কঠিন৷ আমার মনে হয় আপনি করে বলায়, দূরত্ব বাড়ে৷ আমি এক বছর আর্জেন্টিনায় ছিলাম৷ সেখানে একজন ষাট বছরের বুড়ো সম্পূর্ণ অপরিচত একজন ছাত্রীকে তুমি করে বলছে আর ছাত্রীটিও বুড়ো ভদ্রলোককে তুমি সম্বোধন করছে৷''

বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রীতি-নীতি

একেক দেশে, একেক নিয়ম, রীতি৷ এসবই শেখানো হচ্ছে ‘গ্লোবাল সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল কম্পেটেন্স'-এর সেমিনারে৷ এই সেমিনারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একে অপরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা, কথা বলা৷ সবমিলে প্রায় ১৮ জন ছাত্র-ছাত্রী এই কোর্সে অংশগ্রহণ করছে৷ কীভাবে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মিশতে হবে তা তারা শিখছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে ১৮টি জুতোর খালি বাক্স৷ বাক্সে লেখা রয়েছে নানা ধরণের শব্দ৷ বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে অপছন্দের জিনিসগুলো৷ একটি বাক্সের ওপর লেখা রয়েছে ‘ভোদকা'৷ এর অর্থ রাশিয়া বা রাশিয়ার এমন কিছু যা অপছন্দের৷ একটি বাক্সে লেখা ‘মুখ রক্ষা করা' এর অর্থ চীন৷ চীনে কাউকে অপমান করা বা ছোট করা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ বাক্স দিয়ে এই খেলার অর্থ হল অপছন্দের জিনিসগুলো বাক্সবন্দি করা, এগুলোকে কোন অবস্থাতেই সঙ্গে নেওয়া যাবে না৷ কথাগুলো জানান, মারিয়া লুইসা মারিসকাল মেলগার৷

মেলগার জানান, ‘‘যে কোন ধরণের বদ্ধমূল ধারণা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বেরিয়ে আসতে হবে৷ কোন বদ্ধমূল ধারণা থাকলে স্বাধীনভাবে কোন কিছু ভাবাও যায় না৷ সহজ কথা সবাইকে অত্যন্ত সহনশীল হতে হবে, অন্য দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য গ্রহণ করতে শিখতে হবে কিন্তু সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে নয়৷''

আইনজীবি মারিসকাল মেলগার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পার্থক্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জেনেছেন৷ পাঁচ বছর আগে যখন তিনি জার্মানিতে আসেন তখন থেকেই৷ তিনি জানালেন,‘‘আমার পরিবারের বেশ কিছু সদস্য বলিভিয়ার নাগরিক আর বেশ কিছু ব্রাজিলের নাগরিক৷ এখন তারা অনেকেই আফ্রিকায় বসবাস করছে৷ আমার ভাই বোনেরা ইংল্যান্ডে৷ আমি জার্মানিতে৷ আমার মনে হয়, একেক দেশে থাকা, তাদের নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি মেনে চলাই আমাকে সাহায্য করেছে এধরণের একটি কোর্স পরিচালনা করতে৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক