1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেলো ‘পাই নোয়ার’

১৩ নভেম্বর ২০১০

এক সময় ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলের ডেয়ারি পণ্য আর সেখানকার ‘পাই নোয়ার’ জাতের গরুকে এক নামে চিনতো পৃথিবীর মানুষ৷ কারণ ব্রিটানি’র এই পাই নোয়ার গরুর দুধ থেকে তৈরি ক্রিম যেমন জিভে জল আনা স্বাদের তেমনটির জুড়ি আর কোথাও নেই৷

https://p.dw.com/p/Q7jv
প্রায় বিলুপ্তই হয়ে যেতে বসেছিল পাই নোয়ারছবি: Slow Food Association

ব্রিটানি খ্যাত তার উৎপাদিত দুগ্ধজাত সামগ্রীর জন্য৷ কিন্তু গত শতাব্দীতে এই পাই নোয়ার গরু পৃথিবী থেকে প্রায় বিলুপ্তই হয়ে যেতে বসেছিল৷ আশার কথা, সম্প্রতি এর প্রজননের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় পর আবারো পাই নোয়ার গরুদের দেখা মিলছে৷

পাই নোয়ার আদতে ব্রিটানির স্মারকই হয়ে উঠেছিল৷ উনিশ শতকের শেষের দিকে ফরাসি জাতের গরুর মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে পরিচিত৷ ফ্রান্সে তখন এই গরুর সংখ্যা ছিল প্রায় অর্ধ মিলিয়ন৷ এর পুষ্টিকর স্বাদু দুধের তৈরি ক্রিম বিস্কুটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীময়৷

একটি আধুনিক পাই নোয়ার গরু প্রজনন কেন্দ্র চালান জাক কোচি, তিনি এ'সম্পর্কে বলেছেন, গত বিশ্বযুদ্ধের আগে এই গরু মূল্যবান হয়ে উঠেছিল৷ নোয়ারের দুধ সেসময় ‘জাম্বো দ্য প্যারিস' নামের একটি বিশেষ জাতের শুকরকে খেতে দেওয়া হতো৷ এই দুধ খেলে ভালো মানের শুকর ছানা জন্মাতো৷ ব্রিটানিতে খুব ভালো মাখনও তৈরি হতো এই পাই নোয়ার -এর দুধ থেকে, প্যারিস থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত যার কদর ছিল৷

জাক কোচি আর তার স্ত্রী মিলে পাই নোয়ার প্রজনন খামারটি চালাচ্ছেন৷ তাদের কেন্দ্রে এপর্যন্ত কুড়িটি পাই নোয়ার গরু এবং এদের বাচ্চা-কাচ্চা রয়েছে৷ কোচি দম্পতি তাদের খামারে উৎপাদিত চিজ সরাসরি ক্রেতাদের কাছেই বিক্রি করেন৷

আর্নড বিউভাইস আর তাঁর স্ত্রী দুজনে মিলে ব্রিটানিতে একটি রেস্তোরাঁ চালান৷ পাই নোয়ারের এই ফিরে আসার খবরটি তাদেরকে আপ্লুত করেছে৷ কেননা এর সঙ্গে যে তাঁদের শৈশব স্মৃতি জড়িয়ে৷ আর্নড বলেছেন, ‘আমার মনে আছে, যখন আমি ছোটটি ছিলাম, মাঠে অনেক পাই নোয়ারকে চরতে দেখেছি৷ এখনকার প্রজন্ম তা দেখেই নি৷'

ষাটের দশকের শুরুর দিকে, যখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খামারের ধারণাটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে সেসময় এই জোয়ারের কাছে পাই নোয়ারের ডেয়ারি মালিকরা প্রায় একধরণের আত্ম সমর্পণেই বাধ্য হয়েছিলেন৷ ফ্রিসিয়ানা আর হলস্টেন জাতের গরু প্রচুর দুধ দেয় আর যেহেতু মান নয়, পরিমাণের ওপরই দুধের দাম নির্ভর করে, তাই ডেয়ারি ব্যবসায় স্বল্পভোজী পাই নোয়ারকে হঠিয়ে আসন গেড়েছিল ফ্রিসিয়ানা আর হলস্টেন৷ এভাবে পাই নোয়ারের চাহিদা কমতে থাকায় ১৯৭০ সালের দিকে এর সংখ্যা অর্ধ মিলিয়ন থেকে কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৩৫০টিতে! প্রায় বিলুপ্তই হতে বসেছিল ব্রিটানিয়ার ঐতিহ্যবাহী বিশেষ এই গরুর জাতটি৷

কিন্তু বাজার চলতি হলেই তো সবকিছু হয় না৷ পাই নোয়ারের সমঝদারদের কাছে তাই এই পিছু হঠাই সবকিছু নয়৷ এই গরুর প্রসঙ্গে কোন কথা পাড়লে পাই নোয়ারের খামারি জাক কোচির চোখ আনন্দ আর গর্বে এমনিতেই যেভাবে চক চক করে ওঠে যে, মনে হয় তিনি যেন তাঁর নিজের সন্তানের কোন সাফল্যের কথাই বলছেন৷ যদিও নানান বিপত্তি রয়েছে তবুও কোচিদের প্রচেষ্টায় সংখ্যায় বেড়েছে পাই নোয়াররা৷ এর খামারিরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে পাই নোয়ারের প্রতি তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হয়, যাতে ব্রিটানিতে আরো অনেকেই এই স্থানীয় জাতটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নতুন আরো অনেক খামার খোলে৷

কুড়ি বছর ধরে জাক কোচি পাই নোয়ার ব্রিডার্স ইউনয়নের প্রেসিডেন্ট৷ তারা সকলে মিলেই চেষ্টা করেছেন পাই নোয়ার যেন হারিয়ে না যায়৷ যদিও এখনো তাঁদের অনেকটা পথই পেরোতে হবে, তবুও আশার কথা হচ্ছে- এই ২০১০ সালে পাই নোয়ারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ছয়শো'তে৷ এটি একটি আশার কথাই বটে৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক