1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতার কাশ্মীরিদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

পায়েল সামন্ত
১৬ আগস্ট ২০১৯

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী কাশ্মীরিদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷ কারও কাছে, এর ফলে কাশ্মীরের মানুষের জাতিসত্তা আক্রান্ত হল৷ একাংশের বক্তব্য, উন্নয়নের দিকে এগোবে কাশ্মীর৷ 

https://p.dw.com/p/3O03j
Indien Menschen aus Kaschmir in Kalkutta
ছবি: DW/P. Samanta

৩৭০ ধারা বিলোপের ফলে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা আর নেই৷  কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি৷ নিজের রাজ্য থেকে দূরে থাকলেও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে যে কোনো সিদ্ধান্ত প্রবাসী কাশ্মীরিদেন প্রভাবিত করে৷ কাশ্মীর নিয়ে ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তেমনই প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে কলকাতায় বসবাসকারী কাশ্মীরিদের মধ্যে৷  কলকাতায় কাশ্মীরিরা বসবাস করেন তাঁদের ব্যবসার সূত্রে৷  মূলত শাল বা গরমের পোশাকের ব্যবসা করেন তাঁরা৷  নিউ মার্কেটে রয়েছে বেশ কয়েকটি এমন দোকান, যার মালিক ও কর্মচারীরা কাশ্মীরের বাসিন্দা৷ কেউ এক, দুই বা তিন দশক আগে নিজের রাজ্য ছেড়ে রুটি-রুজির সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন৷ 
শুধু এই বাংলা নয়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসার প্রয়োজনে কাশ্মীরের মানুষরা বসবাস করেন৷ ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষের ক্ষেত্রেও সেই কথা খাটে৷ তবে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদ, জঙ্গি কার্যকলাপ, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ইত্যাদি কাশ্মীরিদের সম্পর্কে একটা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে অবশিষ্ট ভারতীয়দের৷ কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গও সে দিক থেকে ব্যতিক্রম নয়৷ কলকাতার কাশ্মীরিদের কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া মিলেছে, তা মূলত দুই ধরনের৷ কাশ্মীর নিয়ে উদ্বেগ আছে, কিন্তু এখানে তাঁদের কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না৷  দ্বিতীয়ত, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের সিদ্ধান্ত তাঁরা সমর্থন করছেন না৷ 
কলকাতার নিউ মার্কেট, মির্জা গালিব স্ট্রিট, সদর স্ট্রিটে কাশ্মীরিদের শীতের পোশাকের দোকান রয়েছে৷ কাশ্মীর এম্পোরিয়াম দোকানটি চালান মহম্মদ জইনুল৷  তাঁর সঙ্গে আলাপ করেই বোঝা গেল, মুক্ত কণ্ঠে মনের কথা খোলসা করতে প্রস্তুত নন৷ অনুরোধ রক্ষা করে যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে তেমন ক্ষোভের আঁচ নেই৷ দীর্ঘ দিন এখানে বসবাসের ফলে ভাঙা বাংলায় কথা বলতে পারেন৷  তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘কাশ্মীরে ফোন পাওয়া যাচ্ছে না৷  সব বন্ধ আছে৷  সব কাশ্মীরিরা চিন্তায় আছে৷ অনেকে ঈদে চলে গিয়েছে, সবাই যেতে পারেনি৷ সব স্বাভাবিক হয়নি এখনো৷’’ সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে না বিপক্ষে, এই প্রশ্নে সাবধানী জইনুল৷  বলেন, ‘‘সরকার যা করছে তার ব্যাখ্যা সরকারই দিতে পারবে৷  এ নিয়ে আমি কী বলব৷  সব ঠিক পথে এগোলে সবারই ভালো৷’’ তবে ব্যবসার কোনো অসুবিধা নেই, এ কথা অবশ্য স্পষ্ট ভাবে জানালেন শাল ব্যবসায়ী৷  তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখানে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই৷  শীত পর্যন্ত যা বিক্রি করা হবে, সব সামগ্রী এসে গিয়েছে৷  আমাদের সামগ্রী সারা বছর ধরে আসে না, নির্দিষ্ট সময় আসে৷ ফলে সমস্যা হয় না৷’’
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুসারে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ছিল৷  তারা ছিল অন্যান্য রাজ্যের থেকে আলাদা৷  কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে বিল পাশ করিয়ে সেই মর্যাদা খারিজ করে দিয়েছে৷  এখন সারা ভারতের মতো একই আইন প্রযোজ্য হবে কাশ্মীরিদের ক্ষেত্রে৷  একে মর্যাদাহানি হিসেবে দেখছেন কলকাতায় বসবাসকারী কাশ্মীরিদের বড় অংশ৷  অকপটে জানাচ্ছেন তাঁদের খেদ, কিন্তু ক্যামেরার সামনে তাঁরা মুখ খুলতে রাজি নন৷  নিজেদের নাম-পরিচয় জানাতেও আপত্তি৷  নিউ মার্কেট থেকে হাঁটা পথে যাওয়া যায় মির্জা গালিব স্ট্রিটে৷  সেখানে একটি শালের দোকানের মালিক বললেন, ‘‘কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল৷  তা কেড়ে নেওয়া হল কেন? এতে কোনো অসুবিধা হচ্ছিল না৷ এর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের যোগ নেই৷’’ এখানকার একটি দোকানের কর্মচারী বলেন, ‘‘কাশ্মীরের যুবকদের জঙ্গিদের কবল থেকে উদ্ধার করে মূল স্রোতে ফেরানো জরুরি ছিল৷  তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হত৷  তাহলে বিচ্ছিন্নতার বোধ কেটে যেত৷  হিংসাও কমে যেত৷’’
এই এলাকার সদর স্ট্রিটেও কয়েকটি কাশ্মীরি পোশাকের দোকান রয়েছে৷  অনেকে ঈদে কাশ্মীর চলে গিয়েছেন৷  কয়েকজন দোকান সামলাচ্ছেন৷  এঁদের সঙ্গে বিরোধী দলের বক্তব্যের মিল রয়েছে৷ কিন্তু, সেটা প্রকাশ্যে বলতে চান না তাঁরা৷  পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর পশ্চিমবঙ্গে কাশ্মীরি শাল বিক্রেতারা আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন৷  তাই কথাবার্তায় এঁরা খুবই সংযত৷  এক যুবক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কাজের খোঁজে ঘর ছেড়ে এত দূরে আছি৷  আমার এলাকায় কাজ পেলে থাকতাম, পাকিস্তান কাশ্মীরি ছেলেদের হিংসার জন্য প্ররোচনা দিতে পারত না৷ কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে সরকার পদক্ষেপ নিলে ভালো হত৷’’
কলকাতায় বসবাসকারী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পরিবার এই সিদ্ধান্তে খুশি৷  তারা ভাবছে, এর ফলে কাশ্মীরে হিংসা দূর হবে৷  নিজেদের রাজ্যে ফেরা সম্ভব হবে৷ কলকাতার কাশ্মীর সভার প্রধান নরেন্দ্র কল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি শেষমেশ কোথায় দাঁড়াবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়৷ আরও কিছু দিন গেলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে৷ কাশ্মীরের মাটিতে পণ্ডিতদের যে অধিকার, সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷’’ 
অন্য রাজ্যে বসবাসকারী কাশ্মীরিরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অনিন্দ্য বটব্যাল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বোঝার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে৷ ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরিদের মধ্যে কেউ কেউ পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷  কিন্তু, এ বার পরিস্থিতি সেরকম নয়৷  এখনো তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি৷’’ সব কাশ্মীরি বিশেষ মর্যাদা রদ করায় ক্ষুব্ধ, এ কথা মানতে চাননি অধ্যাপক৷  তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাশ্মীরের সব মানুষ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে অখুশি নয়, সেটা দেখাই যাচ্ছে৷  কিছু অংশের মানুষের ভিন্নমত থাকতেই পারে৷  কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের কাশ্মীরিদের কাছ থেকে সেই মতের প্রতিফলন মিলতে পারে৷’’

কাশ্মীরের সব মানুষ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে অখুশি নন: বটব্যাল

সরকার যা করছে তার ব্যাখ্যা তারাই দিতে পারবে: জইনুল