1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বকাপে ফেবারিট কারা?

রাজীব হাসান
২৭ মে ২০১৯

ইংল্যান্ডের উচিত বাংলাদেশকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া৷ কেন? বাংলাদেশের ভূমিকার কারণেই তো ওয়ানডেতে ওরা এখন কী অবিশ্বাস্য একটা দল! নিজেরা ৩৫০ করে ফেলছে অনায়াসে, কিংবা প্রতিপক্ষের ৩৫০-৩৬০ তাড়া করছে এমনভাবে, যেন বাঁ হাতের খেল!

https://p.dw.com/p/3J4iR

ফেবারিট প্রশ্নে চোখ বন্ধ করে সবাই ইংল্যান্ডের ব্যালট পেপারে মেরে দিচ্ছে সিল৷ নিকট অতীতে আর কোনো বিশ্বকাপে এমন ‘ইংল্যান্ড, ইংল্যান্ড' রব ওঠেনি৷ আর এর সবকিছুর পরিবর্তনের শুরুটাই হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের একটি ধাক্কা থেকে৷ যে ধাক্কার নাম– বাংলাদেশ!

‘‘ইংলিশ কন্ডিশন কিন্তু খুব দ্রুত বদলে যায়’’

২০১৫ সালের ৯ মার্চ৷ অ্যাডিলেড৷ দিনক্ষণ আর মাঠের নামটা ভুলতে ইংলিশদের অনেক দিন সময় লাগবে৷ ওই দিনই যে পুঁচকে বাংলাদেশ তাদের বাড়ির ঠিকানা ধরিয়ে দিয়েছিল হাতে, যে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের ১০৯ বছর পর খেলেছিল নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ! ওই দিনই ইংল্যান্ডের ২০১৯ মিশন শুরু৷ নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ—এই তথ্য মাথায় রেখে মহা গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত সেদিনই নিয়েছিল ইংলিশরা৷ ওয়ানডে দলের খোলনলচে বদলে ফেলতে হবে৷ বদলে ফেলতে হবে ওয়ানডে খেলার ধরন৷ দলে নিয়ে আসতে হবে ক্লিন হিটারদের৷ আর সব পরিবর্তন করা হবে একটি মূল জায়গা অপরিবর্তিত রেখে৷ ইংল্যান্ডের অধিনায়ক থেকে যাবেন মরগান, যিনি কিনা আদতে একজন আইরিশ! 

ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে এবারের মতো ‘সিরিয়াস' খুব কমই ছিল ইংল্যান্ড৷ দুদিকে তিন-তিন ছয়টি আড়কাঠি পুঁতে রাখার খেলাটা ইংলিশরা কোথায় ছড়িয়ে দেয়নি? ক্রিকেটের আবিষ্কারকের গর্বিত দাবিদার, কিন্তু  একবারও জিতল না ট্রফিটা৷ ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২—এই চার আসরের তিনবারই ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড৷ শেষের দুবার তো হারতে হলো একটুর জন্য৷ ১৯৮৭-তে মাত্র ৭ রানে হারালো অস্ট্রেলিয়া৷ ৫ বছর পর ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জিতলো পাকিস্তান৷ সেবার ইংল্যান্ড হেরেছিল মাত্র ২২ রানে৷ গত ছয় আসরে তো তারা সেমিফাইনালেই যেতে পারেনি৷ এর মধ্যে তিনবার বিদায় নিয়েছে প্রথম রাউন্ডেই৷

‘‘দলটা খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে’’

তবে এবার অনেকে ইংল্যান্ড দলটা দেখে সত্যিই নড়েচড়ে বসছে৷ পাকিস্তানের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া সিরিজে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া প্রথম ম্যাচ বাদ দিলে বাকি চার ম্যাচে ইংল্যান্ড তুলেছে ১৪২৪ রান! এই সিরিজ ৪-০তে জেতার পর ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরার লোক আরো বেড়ে গেছে৷

ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা নিয়ে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের এবার খুব ভালো সম্ভাবনা আছে৷ দলটা খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে৷ আসলে ২০১‌৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ইংল্যান্ড দলটা পুরো বদলে গেছে৷ আর গত দুই বছর ধরে ওদের পারফরম্যান্সটা খুব ভালো৷ ওয়ানডেতে তারা সেই দল, তিনশ'র বেশি তাড়া করতে গিয়ে ৯০ শতাংশ সময়েই সফল৷ যেহেতু বিশ্বকাপে সবাই ভাবছে যে, ব্যাটিং উইকেটে খেলা হবে, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং আক্রমণ কিন্তু দুর্দান্ত৷ পাশাপাশি ওদের বোলিং আক্রমণটাও ভালো৷ ইংল্যান্ডের ফর্মও খুবই ভালো৷ সব মিলিয়েই ইংল্যান্ডের এবার বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা বেশি দেখছি৷''

২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া হাবিবুল বাংলাদেশের সম্ভাবনাও দেখছেন এবার, ‘‘এবার বিশ্বকাপে একক ফেবারিট নেই৷ আমার চার ফেবারিট ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ৷ এবার দলগুলোর মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি নেই৷ প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে জিতবে এমন দলের সংখ্যা এবার কম৷ আগের বিশ্বকাপে কিন্তু শক্তির ব্যবধানে এগিয়ে থাকা দলগুলোর সংখ্যা বেশি ছিল৷ বিশ্বকাপ খেলার সময় দলগুলোর বর্তমান ফর্ম খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বেশ ছন্দে থেকে খেলতে যাবে৷ সবকিছু পক্ষে গেলে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব৷ ২০০৭ বিশ্বকাপেও আমরা টানা ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে গিয়েছিলাম৷ সেবার বেশ কটি অঘটনও ঘটিয়েছিল বাংলাদেশ৷''

জাতীয় দলের সাবেক কোচ সারওয়ার ইমরান মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিশ্বকাপ এলেই কেমন জেগে ওঠে অস্ট্রেলিয়া৷ বিশ্বকাপ জিতেছে ৫ বার! গত পাঁচ আসরের চারবারই ট্রফিটা নিয়ে গেছে৷ বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে কোচের দায়িত্ব পালন করা ইমরান বলছেন, ‘‘এবারের ফেবারিট তো সবাই জানে৷ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত৷ গত এক বছর ধরে ইংল্যান্ডের রেকর্ডের কারণে ওরা এগিয়ে৷ আর অস্ট্রেলিয়ার দুই খেলোয়াড় ফিরে আসায় ওরাও শক্তিশালী হয়ে উঠবে, যে দুই খেলোয়াড় আইপিএলেও ভালো করেছে৷ অস্ট্রেলিয়া এমন একটা দল, বিশ্বকাপে যাদের সব সময় হিসাবের মধ্যে রাখতে হয়৷'' বিশ্বকাপের চমক হিসেবে তিনি অবশ্য বাংলাদেশ নয়, বললেন আফগানিস্তানের কথা৷

আবার জাতীয় দলের সাবেক তারকা শাহরিয়ার নাফীস বলছেন, বাংলাদেশের নাম রাখতে হবে শুধু আবেগ থেকে নয়, ক্রিকেটীয় যুক্তিতেও৷ ‘‘আপাতদৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড একটু এগিয়ে আছে৷ ২০১৫ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর গত চার বছর ধরে দলটা গুছিয়ে নিয়েছে৷ গত চার বছর ধরে, বিশেষ করে ওয়ানডেতে ওরা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে৷ ঘরের মাঠে ওদের পারফরম্যান্স অবিশ্বাস্য৷ এর মধ্যে ওদের চারশ' সাড়ে চারশ'র স্কোর আছে৷ তিনশ', সাড়ে তিনশ' রান তাড়া করে জিতছে৷ ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ড ভয়ংকর এক দল৷ সব বিবেচনায় এখন পর্যন্ত আমার ফেবারিট ইংল্যান্ড৷ এবার বিশ্বকাপের যে ফরম্যাট, তাতে খেলা খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে৷ সবার সঙ্গে সবার খেলা৷ ফলে সবারই সম্ভাবনা থাকবে র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার৷ সব বিবেচনায় ক্রিকেটীয় যুক্তিতেই আমি বাংলাদেশের কথাও বলবো৷ গত বিশ্বকাপের পর চার বছর ধরে বাংলাদেশ ভালো খেলছে৷ কন্ডিশন নিয়ে একটা ভয় ছিল৷ গত আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর সেটাও কেটে গেছে৷ অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ কিন্তু এগিয়ে৷ এবার বেশ ভালো সম্ভাবনাই থাকবে৷ গত বিশ্বকাপের তুলনায় এবার আরো ভালো করব, এটাই প্রত্যাশিত,'' বলেছেন নাফীস৷

‘‘গত এক বছর ধরে ইংল্যান্ডের রেকর্ডের কারণে ওরা এগিয়ে’’

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার এবং জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলী খান বলেছেন, ‘‘বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টটাই একটা চ্যালেঞ্জ৷ বিশ্বকাপের মতো ক্রিকেটে এত বড় আসর আর নেই৷ ফলে এখানে আমাদেরকে সেই পর্যায়ের ক্রিকেটই খেলতে হবে৷ চ্যালেঞ্জ হবে কয়েকটি দল৷ ভারত চ্যালেঞ্জ হবে৷ ইংল্যান্ডতো এবার প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ক্রিকেট খেলছে৷ এখন এক নম্বর দল ওরা৷ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ কীভাবে জিততে হয় সেটা সবচেয়ে ভালো জানে৷ বেশ কবার ওরা কাপটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে৷ বাংলাদেশের আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে ইংলিশ কন্ডিশন৷ ইংলিশ কন্ডিশন কিন্তু খুব দ্রুত বদলে যায়৷ এখন ইংল্যান্ডে প্রতিটা ম্যাচে বেশ রান উঠছে৷ কন্ডিশন আবার বদলে যেতে পারে৷ তখন কিন্তু হঠাৎ করে বোলাররা আবার ভালো করতে পারে৷ তখন চ্যালেঞ্জটা হবে ব্যাটসম্যানদের৷''

অস্ট্রেলিয়ার গত পাঁচ আসরের দাপটের মধ্যে কেবল ভারতই পেরেছিল বিশ্বকাপ জিততে৷ ২০১১ সালে শচীন টেন্ডুলকারকে তাঁর আশৈশব স্বপ্নটা পূরণ করে দিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল৷ এবারও ভারতের দলটাও কত মজবুত! ওদের বাদ পড়াদের দিয়েই একটা বিশ্বকাপ দল বানিয়ে ফেলা যায়৷ র‍্যাঙ্কিংয়েও দুইয়ে থাকা ভারতের মূল শক্তি হয়ে উঠতে পারে তাদের ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণ৷ সারওয়ার ইমরান বলছিলেন, ‘‘ভারতের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং— তিনটাই এখন অন্য রকম পর্যায়ে চলে গেছে৷ বিশ্বকাপের সেরা দলের তালিকা করলে ওদের এক-দুই-তিনে রাখতেই হবে৷ আগে ভারতের বোলিং নিয়ে একটু দুর্বলতা ছিল৷ কিন্তু এখানে ওরা দারুণ উন্নতি করেছে৷ সেটা পেস বোলিং এবং স্পিন বোলিং দুই জায়গাতেই৷ ভারত ও ইংল্যান্ড এই দুটি দলকে আমি সেরা দুই ফেবারিটের তালিকায় রাখব৷'' 

‘‘ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ড ভয়ংকর এক দল’’

দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না, সম্ভবত ওদের ‘চোক' করার ইতিহাসের কারণেই! কত ভালো ভালো দল নিয়ে আসে বিশ্বকাপে৷ গতবার ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ‘সেমিফাইনালের দল' হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নিউজিল্যান্ড৷ ১১ বারের ৭ বারই যে ওরা সেমিফাইনাল খেলেছে! পাকিস্তান দুই বছর আগে এখানেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে গিয়েছিল৷ মহড়া টুর্নামেন্টে জিতে গেলে আসলটা কেন নয়? তবে এবারের বিশ্বকাপের চমক হতে পারে বাংলাদেশ৷ পঞ্চপাণ্ডবের একসঙ্গে শেষ বিশ্বকাপ৷ শেষটা ওঁরা রাঙিয়ে দিতে তো চাইবেই৷ গতবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলেছে৷ এবার বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের লক্ষ্য সেমিফাইনাল৷

আতহার অবশ্য আরো বড় স্বপ্নই দেখতে পাচ্ছেন, ‘‘আমাদের পাঁচজন আছে, যাঁরা দলের মূলশক্তি৷ এদের পাশাপাশি আরো যাঁরা উঠে এসেছে, সৌম্য-লিটন, মেহেদি-মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিন; সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলটা ভালোর দিকে যাচ্ছে৷ ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা খেলেছি, গতবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল; ২০১৯-এ বাংলাদেশ ফাইনালে উঠবে এবং ফাইনালটা জিতবে—এটাই আমার প্রত্যাশা৷ তবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যে পাঁচজনের কথা বললাম, ওরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারবে কিনা, সেটাই৷''

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷