1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বকাপ থেকে জার্মানির বিদায়ে শোকে আচ্ছন্ন ‘বিদেশীরাও’

৮ জুলাই ২০১০

জার্মান দলেও যেমন বিদেশী বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের ছড়াছড়ি, তেমন জার্মানির অভিবাসী সমাজও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েছিল বিশ্বকাপের দিনগুলিতে৷ ‘মাল্টিকালচারাল' সমাজের স্বপ্ন কি বাস্তব হয়ে গেল ?

https://p.dw.com/p/ODjH
ত্বকের রঙ নয় – পতাকার রঙই হয়ে উঠেছিল জাতির পরিচয়ছবি: AP

বার্লিনের ‘নয়ক্যোলন' পাড়ায় নানা দেশের মানুষের বসবাস৷ তাদের ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতি আলাদা৷ কিন্তু বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে মেতে উঠেছিল গোটা পাড়া৷ ‘নয়ক্যোলন'এর বাসাল পরিবারের কথা দিকে-দিকে ছড়িয়ে পড়েছে৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষে লেবাননি বংশোদ্ভূত এই জার্মান পরিবারের দেশাত্মবোধ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে৷ বাড়ির ছাদ থেকে বিশাল জার্মান পতাকা ঝুলিয়ে চরম বামপন্থীদের রোষের শিকার হয়েছিল এই পরিবার৷ জার্মানির ম্যাচ থাকলেই দোকানের সামনে বসে যেতো উৎসব৷ টেলিভিশন বসিয়ে, চেয়ার-টেবিল পেতে দল বেঁধে খেলা দেখার মজাই যে আলাদা ! কিন্তু স্পেনের কাছে জার্মানির পরাজয়ের পর গোটা এলাকায় যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷

Afrikaner mit deutscher Fahne
দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ অভিবাসীরাওছবি: picture-alliance / dpa

দোকানের অন্যতম মালিক ইব্রাহিম বাসালকে তো আর জনসমক্ষে দেখাই যাচ্ছে না৷ বুধবার সেমিফাইনাল ম্যাচের পর দোকানের এক কোণে বসে মুখ ঢেকে তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, আমরা ফাইনালে পৌঁছতে পারবো৷ কিন্তু আমি খুবই হতাশ৷'' তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন স্বর্ণকেশী এক জার্মান জাতভাই৷ বললেন, ‘‘আরে, আমরা তো হৃদয়ের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি৷'' কিন্তু ইব্রাহিমের মন খারাপ, কোনো কথাতেই তিনি সান্ত্বনা পাচ্ছেন না৷

বার্লিনের ‘নয়ক্যোলন' পাড়ায় অভিবাসী পরিবারদের এই ‘দেশাত্মবোধ' গোটা দেশের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে৷ একদিকে সমাজের মূল স্রোতে বিদেশি বা বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের শেষ নেই৷ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুটবল নিয়ে যেভাবে একই সুরে মেতে উঠেছিল এই এলাকার মানুষ, তা থেকে অনেক শিক্ষা নিতে পারেন তাত্ত্বিকদের দল – এমনটাই এখন বার বার শোনা যাচ্ছে৷ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জার্মান দলের সাফল্যের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করে নিয়েছেন মানুষ৷ এ যেন জার্মান জাতীয় ফুটবল দলেরই প্রতিচ্ছবি ! সেই দলেও যে বিদেশী বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের ছড়াছড়ি৷ তাদের নিয়েও মেতে উঠেছিল স্বর্ণকেশী, নীল-নয়নের ‘মূল স্রোতের' জার্মানরা৷

Nationalspieler mit Migrantionshintergrund Özil Cacau Podolski Khedira Flash-Galerie
ও্যজিল, কাকাউ, পডলস্কি, কেদিরা – জার্মান দলের বিদেশী বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের অন্যতমছবি: picture-alliance/dpa/AP/DWMontage

‘ধমনীতে জার্মান রক্ত থাকলে তবেই জার্মান হওয়া যায়' – ফ্যাসিবাদীদের এই ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে আধুনিক জার্মান সমাজের নায়ক হয়ে উঠেছেন মেসুত ও্যজিল, জেরোম বোয়াতেং'এর মতো ফুটবল তারকা থেকে শুরু করে জাভিয়ার নাইডু'র মত গায়ক বা রঙ্গা যোগেশ্বরের মত টেলিভিশন সঞ্চালক৷

বিশ্বকাপে জার্মানির এবারের দলটির প্রায় অর্ধেকই বিদেশি বংশোদ্ভূত৷ চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল তাই এই দলটিকে বলছেন, জার্মানির আন্তর্জাতিক দল৷ এত অভিবাসী খেলোয়াড় থাকাটা আশ্চর্যজনক- এই কথা বলেছেন অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্লাউস বাডে৷ তার মতে, জার্মানির ইতিহাসই অভিবাসীদের সঙ্গে সহজ হওয়ার পথে মূল বাধা৷ তিনি বলেন, জার্মানিতে যে সব তুর্কিরা আছে, তাঁরা নিজেদের জাতিসত্ত্বা নিয়ে গর্বিত৷ কিন্তু এই বিষয়টাতেই বিব্রত জার্মানরা৷ দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধে তাঁদের ভূমিকাই এই অবস্থা তৈরি করেছে৷ তবে তিনি এটাও বলেন, এই অবস্থা ধীরে ধীরে কেটে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷

Klaus Bade
অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্লাউস বাডেছবি: PA/dpa

অভিবাসীদের নিয়ে দুটি বিষয় নিয়ে এখনি চিন্তা-ভাবনা করার পরামর্শ দিয়েছেন বাডে৷ একটি হলো শিক্ষার মান এবং অন্যটি হলো তাদের ভিন্ন গোত্রীয় ভাবার মানসিকতা৷ তিনি বলেন, এখন থেকে না ভাবলে পরে এগুলো সমাজে ক্ষত হয়ে দেখা দিতে পারে৷ টানা আট বছর থাকলে জার্মানি অভিবাসীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আইনগত অধিকার দিয়ে থাকে৷ তবে অইউরোপীয় দেশগুলোর কেউ জার্মানির নাগরিকত্ব চাইলে তাঁকে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়৷ এটাও একটা সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন বাডে৷

জার্মানিতে অভিবাসনের মূল স্রোতটি আসে গত শতকের ’৬০ ও ’৭০ এর দশকে৷ তবে অভিবাসন বাড়াতে জার্মানির তেমন ভূমিকা নেই বলে মনে করেন বাডে৷ তিনি বলেন, যারা এসে গেছে, তারা থাকতে থাকতে এখানেই বাস গেঁড়েছে৷ পরিকল্পিতভাবে অভিবাসী আনার বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ ছিল না৷

জন্মহার কমে যাওয়ায় আগামী দিনে দেশে কর্মীর অভাব দেবে৷ তাই অভিবাসীদের আকর্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বাডে৷ তিনি বলেন, অভিবাসীদের বিষয়ে আরো আন্তরিক হতে হবে৷ বাডে একইসঙ্গে বলেন, তারপরও যতটা ভাবা হয়েছিলো, অভিবাসীদের আপন করে নিতে জার্মানি তার চেয়ে বেশি কাজ দেখিয়েছে৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম / সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ