1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বিবাহবিচ্ছেদ

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী১৩ জানুয়ারি ২০১৬

কথাটা বলেছেন এমন এক জার্মান আইনজীবী, যিনি একা ৬০ হাজার বিবাহবিচ্ছেদের মামলার দায়িত্বে ছিলেন৷ তাঁর মতে মানুষজন বিয়ে করেই এই ভেবে যে, ঠিকমতো না চললে ডিভোর্স করে দেওয়া যাবে৷

https://p.dw.com/p/1HcYR
Symbolbild Scheidung Ehescheidung
ছবি: picture-alliance/dpa

হলিউডে বা লাস ভেগাসে নাকি শোনা যায়, আজ বিয়ে, কাল ডিভোর্স! জার্মানিতে ব্যাপারটা অতটা সহজ নয় – আবার খুব যে একটা শক্ত, এমনও নয়৷ স্বামী-স্ত্রীর এক বছর বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে, একেবারে সম্পর্ক ভেঙে; সেই সঙ্গে তা আবার জোড়া লাগার কোনো সম্ভাবনা থাকলে চলবে না৷ অথবা দু'পক্ষের মধ্যে অন্তত একপক্ষকে সেই সম্ভাবনা প্রকাশ্যভাবে নাকচ করতে হবে৷

ডিভোর্সের বাকি যা সব খুঁটিনাটি, যেমন সম্পত্তি ভাগ, খোরপোশ, সন্তানের অভিভাবকত্ব – এ সব তো আছেই৷ বড় কথা হলো, বিয়ে কার দোষে ভাঙছে, তার সাক্ষ্যপ্রমাণের দরকার নেই৷ তাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজনের আপত্তি সত্ত্বেও বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে৷ জোর করে কাউকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে রাখার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷

কিছু পরিসংখ্যান, এই ধরা যাক ২০১৩, ২০১৪ সাল মিলিয়ে৷ ২০১৪ সালে জার্মানিতে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ডিভোর্স হয়েছে৷ এর মধ্যে অর্ধেক দম্পতির অপ্রাপ্তবয়স্ক কাচ্চাবাচ্চা ছিল৷ গড়ে এই সব বিয়ে টিঁকেছে ১৪ বছর ৮ মাস৷ এই হারে ডিভোর্স চলতে থাকলে জার্মানিতে এক বছরে যত দম্পতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তাদের ৩৫ শতাংশ আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হবেন৷

দেখা যাচ্ছে, পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই বেশি ডিভোর্সের আবেদন করে থাকেন – ৫২ শতাংশ; পুরুষরা সে তুলনায় ৪০ শতাংশ৷ বাকি ৮ শতাংশের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে আবেদন করেছেন৷ মনোবিদরা বলেন, মহিলারা আবেগ-অনুভূতির দিক দিয়ে দেউলিয়া বিবাহ বা অতৃপ্তিকর সম্পর্ক অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য টিঁকিয়ে রাখতে রাজি নন৷ তার একটা কারণ দৃশ্যত এই যে, পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি ‘একলা' থাকতে পারেন; অপরদিকে তাঁরা তাঁদের সামাজিক ‘নেটওয়ার্কের' কাছ থেকে অনেক বেশি অন্তরঙ্গতা ও সাহায্য পান৷

কার্যকারণ

পরিসংখ্যানই বলে, জার্মানিতে বিবাহবিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় কারণ হল স্ত্রী অথবা পুরুষ – বিশেষ করে পুরুষদের বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক৷ অন্যান্য কারণগুলো পরিসংখ্যান ছাড়াই বোধগম্য: যেমন কমিউনিকেশন গ্যাপ বা বোঝাপড়ার অভাব; স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবনে ভাঁটা পড়েছে; বাড়িতে কর্তা কুটোটি নাড়েন না; সেই সঙ্গে গোঁয়ার্তুমি; ছেলেপিলে মানুষ করা নিয়ে মতান্তর; ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, অর্থাৎ বাড়িতে মারধোরের ঘটনা ঘটলে তো আর অন্য কোনো কারণ অনুসন্ধান করার প্রয়োজনই নেই৷

খেয়াল করবেন, এ সব কারণ যে অন্যান্য দেশে ও সমাজে উপস্থিত নেই, তা নয়৷ জার্মান সমাজে এই সব কারণে একটি বিবাহ ভেঙে যেতে পারে, আইনগত ও সরকারিভাবে একজন দম্পতি বিচ্ছিন্ন হতে পারেন৷ জার্মানিতে ২৫ বছর বিবাহের পর বিচ্ছেদের ঘটনাও কিছু বিরল নয়, হয়ত দু'টি মানুষ জীবনের পথ চলার অবসরে কখন যে একজন অপরের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন, তা তাঁরা বুঝতেই পারেননি, সেই কারণে৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

শুধু বিবাহই নয়, যে কোনো সম্পর্কই তো এক ধরনের বাঁধন৷ তবে কি কখনো-সখনো শুধুমাত্র বাঁধন কেটে মুক্তির আশাতেই মানুষ বিয়ে ভেঙে দেয় না? দেবে না কেন, নারী-পুরুষের সম্পর্কে ঘটে না বা ঘটতে পারে না, এমন কিছু নেই৷ যে কারণে সেই সম্পর্কে নিয়ে নাটক-নভেল-চলচ্চিত্রের স্রোত কোনোদিনই বন্ধ হয়নি, হবে না৷

তাহলে জার্মানির বিবাহবিচ্ছেদ পরিস্থিতিতে নতুনটা কী? নতুনটা নারী-পুরুষের সম্পর্কে নয়; নতুনটা নারী-পুরুষের সহবাস থেকে শুরু করে বিবাহবিচ্ছেদ, এমনকি তার পর অবধি উভয়ের পরস্পরের প্রতি আচরণে ও তার আইনগত ও সামাজিক কাঠামোয়৷ নারী-পুরুষের আদিম সম্পর্ককে যেন আনা হয়েছে সভ্যতার কাঠামোয়, সমানাধিকারের কাঠামোয়৷

প্রেম থেকে বিবাহ বা বিবাহের পরে প্রেম – শেষমেষ যদি তা বিচ্ছেদেই সমাপ্ত হয়, তাহলেও তা একটি বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনীই থেকে যায়৷ জার্মানিতে ডিভোর্স সংক্রান্ত কলহ, তিক্ততা, মনোমালিন্য, শঠতা, কপটতার নাটককে বলা হয় ‘রোজেনক্রিগ', মানে গোলাপ ফুলের যুদ্ধ৷ সমাজ খেয়াল রাখে, যাতে সেই যুদ্ধ সভ্যতা ও ন্যায়বিচারের মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়৷

হয়ত সেই কারণেই এত ডিভোর্স সত্ত্বেও কোনো জার্মানকে কখনো হায়হুতাশ করতে শুনিনি – সমাজ রসাতলে গেল, দেশ রসাতলে গেল৷ গেছে কি? আপনারা কি বলেন?

বিবাহবিচ্ছেদ শুধু ব্যক্তির সমস্যা নয়, সমাজেরও৷ এ কথা কি আপনি বিশ্বাস করেন?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান