1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুনো হাতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

বনজঙ্গল ধ্বংস করে বসতি গড়ে তুললে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংঘাত অনিবার্য৷ ভারতের দক্ষিণের একটি অঞ্চলে হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত কমাতে এক অভিনব উদ্যোগ সাফল্য দেখাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3irwO
ছবি: DW

কফি চাষি হিসেবে তিরুমালাপ্পার জন্য সকালটা মোটেই ভালো ছিল না৷ হাতির পাল এসে সব তছনছ করে দিয়ে গেছে৷ কফি বিনসের খেতে হাতির তাণ্ডবের চিহ্ন এই প্রথম নয়৷ এবার সৌভাগ্যবশত শুধু ঘরের দরজা নষ্ট হয়েছে৷

গত সাত বছরে হাতির উৎপাতের কারণে তাঁর প্রায় সাত হেক্টর ধানের খেত এবং অনেক কফি বিনস ও পাম গাছের ক্ষতি হয়েছে৷ তিরুমালাপ্পা বলেন, ‘‘এখানে আমাদের জীবনের উপর হাতির অনেক প্রভাব রয়েছে৷ পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে উঠেছে৷ রোজগারের তাগিদে আমাকে কিছু চাষ তো করতেই হবে৷ কিন্তু হাতি প্রায়ই অনেক কিছু নষ্ট করে দেয়৷’’

সর্বশেষ ঘটনাটি অবশ্য অন্যরকম ছিল৷ প্রায় শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে তিনি প্লান্টেশনে বড় বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে পেরেছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিরুমালাপ্পা বলেন, ‘‘আমি খবর পেলাম, যে এই এলাকায় একটা হাতি দেখা গেছে৷ আমার এক মজুর ধানের খেতে ছিল৷ তার কাছে ফোন ছিল না বলে আমি এমন একজনকে জানিয়েছিলাম যে, তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল৷ হাতি খুব কাছে এসে গিয়েছিল৷ ওই মজুর কোনোরকমে পালিয়েছে৷ সাবধান না করলে তার উপর হামলা ঘটতে পারতো৷’’

হাতি আর মানুষের সংঘাত কমাতে অভিনব উদ্যোগ

হাতি ও মানুষের সংঘাত

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হাসান শহরের আশেপাশের অঞ্চল হাতির সংখ্যার বিচারে তালিকার উপরদিকে রয়েছে৷ বনজঙ্গল, প্লান্টেশন ও ধানের খেতে হাতি বিচরণ করে৷ আগে গোটা অঞ্চল জুড়ে প্রায় শুধু জঙ্গল ছিল৷ গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শুরু থেকে সেখানে মানুষের বসতি বাড়তে থাকে৷ তখনই আদি বাসিন্দাদের সঙ্গে মানুষের প্রথম সংঘাত শুরু হয়৷ আজ সেই জঙ্গল টুকরো টুকরো অংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ বাড়িঘর ও গোটা গ্রাম হাতির বিচরণক্ষেত্রের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে৷

বন দফতর বার বার হাতির অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় মানুষকে সতর্ক করে দেয় এবং গ্রামবাসীকে সজাগ থাকার আবেদন জানায়৷ মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত এড়াতে বন দফতরের কর্মীরা সব সময়ে সজাগ থাকেন৷

আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ

বিনোদ কৃষ্ণন পাঁচ বছর ধরে হাসান শহরে বাস করছেন৷ তিনি ‘নেচার কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’ নামের এক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠনের জন্য কাজ করেন৷ এই সংগঠন আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে স্থানীয় মানুষকে হাতির পাল সম্পর্কে সতর্ক করার চেষ্টা করে৷ কৃষ্ণন হাতি ও মানুষ – দুই পক্ষেরই প্রাণ বাঁচাতে চান৷ তিনি জানালেন, ‘‘এই অঞ্চলে গত দশ বছরে প্রায় ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মানুষ জানতেই পারে নি যে সেই অঞ্চলে হাতির পাল বেড়াচ্ছে৷ জানলে দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যু সম্ভবত এড়ানো যেত৷’’ 

২০১৭ সালে এই সংগঠন হাসান জেলার ২২০টি গ্রাম নিয়ে এক আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করে৷ স্থানীয় মানুষ মোবাইল ফোনের সাহায্যে বিনামূল্যে সেই প্রণালীতে নিজেদের নথিভুক্ত করতে পারেন৷ যেমন একটি বার্তায় সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হলো, যে হাম্পাপুরা ও কাগনুর গ্রামের কাছে বুনো হাতি দেখা গেছে৷ সবাইকে সজাগ থাকার আবেদন জানানো হলো৷

এই পরিষেবার গ্রাহকরা কন্নড় ভাষায় হাতির অবস্থান সম্পর্কে এমন সতর্কতা বার্তা পান৷ এসএমএস, ভয়েস মেসেজ এবং আটটি ডিজিটাল বোর্ড ও এলইডি হ্যাজার্ড লাইটের মাধ্যমে সতর্কতা বার্তা পাঠানো হয়৷ বিনোদ কৃষ্ণন বলেন, ‘‘আমরা এমন ব্যবস্থা চালু করার পর হাতির কারণে মাত্র একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ গত বছর এই অঞ্চলে একটিও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে নি৷ হাসান জেলায় বহুকাল এমনটা ঘটে নি৷’’

পারস্পরিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত

সরকারি বন দফতরও এই প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠনকে সাহায্য করে৷ বন দফতর স্থানীয় মানুষকে হাতির চিহ্ন দেখে হাতির পাল শনাক্ত করার প্রশিক্ষণ দেয়৷ এভাবে স্থানীয় মানুষের জন্য হাতির অবস্থান সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য নিশ্চিত করা যায়৷ এই তথ্য প্রেরণ ব্যবস্থার কল্যাণে মানুষ ও হাতির মধ্যে সম্পর্কও বদলে গেছে৷ প্রকল্পের সমন্বয়ক বিনোদ কৃষ্ণন বলেন, ‘‘আমি যে সবচেয়ে জরুরি পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, তা হলো মানুষ আর হাতির পেছনে ধাওয়া করছে না৷ আগে একটি কফির প্লান্টেশন থেকে অন্য একটিতে হাতির পাল তাড়িয়ে দেওয়া হতো৷ আমরা চাষিদের সঙ্গে অনেক শলাপরামর্শ করে তাঁদের বোঝাতে পেরেছি, যে দিনের বেলা হাতির পালকে বিরক্ত করা ঠিক নয়৷ অবশেষে তাঁরা সেটা মেনে নিয়েছেন৷ ফলে হাতির উপরও চাপ কমে গেছে৷’’

এই সতর্কতা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাণী ও মানুষের মধ্যে সংঘাত কমানো গেছে৷ তবে এটা সামান্য একটা সান্ত্বনামাত্র৷ কারণ আরও জঙ্গল ধ্বংস করে সেখানে বসতি তৈরি হচ্ছে৷ ফলে মানুষ ও হাতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সম্ভাবনা নাজুক থেকে যাচ্ছে৷

জুহি চৌধুরী/এসবি