1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেগমপাড়া: ক্ষমতা ছাড়া অর্থপাচার সম্ভব?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৭ নভেম্বর ২০২০

ক্যানাডায় বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম আর সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে আট হাজার কোটি টাকার আলোচনা এখন বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার করে বিদেশে সম্পদ গড়ে তোলার নতুন নতুন খবরে বিস্ময় সৃষ্টি হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3lvFg
Gebündelte Hundertdollarscheine Geldstapel
ছবি: Stefan Klein/imagebroker/picture alliance

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানিয়েছেন ক্যানাডায় অর্থপাচারকারী যে ২৮ জনের তালিকা তার কাছে আছে তারমধ্যে ২৪ জনই সরকারি কর্মকর্তা৷ বাকিরা রাজনীতিবিদ৷ সরকারি কর্মকর্তারা এত টাকা কোথায় পেলেন?

আইনজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে টাকা পাচার বন্ধে শক্ত আইন থাকলেও পাচার বন্ধ হচ্ছে না৷ এটা ক্ষমতা না থাকলে সম্ভব নয়৷ আর অবৈধ অর্থ আয় বন্ধ না হওয়ায় তাদের হাতে পাচার করার মতো অর্থ জমছে৷ সরকার চাইলে এই পাচারকারীদের সহজেই চিহ্নিত করতে পারে৷ তারপর আইনি প্রক্রিয়ায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এই টাকা ফেরত আনা সম্ভব৷ এরজন্য প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷

সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে আট হাজার কোটি টাকা

সিঙ্গাপুরের এক ব্যাংকে বাংলাদেশি একজনের পাচার করা আট হাজার কোটি টাকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ওই টাকা ফেরত আনার সব ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ কিন্তু টাকা কার, তা আমরা এখনই প্রকাশ করছিনা৷''

তবে দুদকসহ বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে, ওই টাকা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া একজন আসামির৷ তার বাড়ি চট্টগ্রাম এলাকায় এবং তিনি বিএনপি নেতা ছিলেন৷ তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে জানা যায়, তারা এখন সবাই দেশের বাইরে রয়েছেন৷ দুদক সূত্র বলছে, পরিবারের সদস্যরাও ওই টাকা এখন দাবি করছে না৷

খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘এর বাইরেও আমরা অষ্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, মালয়েশিয়াসহ আরো অনেক দেশে বিভিন্ন ব্যক্তির পাচার করা অর্থের খোঁজ পাচ্ছি৷ ওই অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি জটিল, তবে আনা সম্ভব৷’’

অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি জটিল: দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচারকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ নয়৷ তারা বলেন, এপর্যন্ত মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছেন চার হাজারের কিছু বেশি বাংলাদেশি৷ তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার ক্যাটাগরি আলাদা, চাইলেই তাদের চিহ্নিত করা যায়৷ আবার মালয়েশিয়া সরকারের সেকেন্ড হোমের যে ওয়েবসাইট আছে, সেখানেও তাদের সংখ্যা ও তালিকা আছে৷ সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় উদ্যোগ নিলেই তাদের ব্যাপারে তথ্য পেতে পারে৷

এছাড়া ক্যানাডার বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে দুর্নীতিবাজদের গড়ে তোলা বেগমপাড়ার ব্যাপারে আন্দোলন করছে৷ তাদের কাছ থেকেও প্রাথমিক তথ্য নেয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ২৮ জনের কথা বলেছেন তাদের ব্যাপারেও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন৷ বিভিন্ন দেশে বাস করা বাংলাদেশিদেরও পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে কাজে লাগানো যেতে পারে৷ ব্যবহার করা যেতে পারে ‘মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স আইন ২০১২'৷

দুদক সূত্র জানিয়েছে, এপর্যন্ত বাংলাদেশের ৬০ ব্যক্তির অর্থপাচারের তথ্য চেয়ে ১৮টি দেশে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতের নাম রয়েছে৷ ইতিমধ্যে ৩০ জনের ব্যাপারে চিঠির জবাব পাওয়া গেছে৷

হাইকোর্ট এরইমধ্যে অর্থপাচারকারীদের তালিকা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে৷ খুরশিদ আলম বলেন, ‘‘শুধু দুদক নয়, সরকারের আরো কয়েকটি সংস্থা এনিয়ে কাজ করছে৷''

অর্থপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব আছে৷ আর পাচার হওয়া অর্থের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিশ্বের ১৬২টি দেশের সাথে বাংলাদেশের মিউচুয়্যাল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স চুক্তি আছে৷ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে তৈরি আন্তর্জাতিক সংগঠন এগমন্ট গ্রুপের সদস্য বাংলাদেশ৷ এটি বিভিন্ন দেশের ১৬৬টি ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সংগঠন৷ ইন্টারপোলের সহায়তাও নেয়া যায়৷

ক্ষমতাধর না হলে অর্থপাচার করা যায় না: অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ

‘রাষ্ট্র চাইলে সম্ভব'

বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং বিরোধী আইন অনেক শক্ত৷ তারপরেও কাজ হচ্ছে না কেন? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘আসল কথা হলো সদিচ্ছা৷ ক্ষমতাধর না হলে অর্থপাচার করা যায় না৷ আর ক্ষমতাসীনরাই ক্ষমতাধর৷ তাই সদিচ্ছার অভাবে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তাই পাচার বন্ধ হচ্ছেনা৷ রাষ্ট্র যদি চায় তাহলে সম্ভব৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে অর্থ পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা অনেক জটিল৷ প্রথমে যিনি পাচার করেছেন তার বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্তভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে৷ তারপরে অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে৷ এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ তার চেয়ে সহজ হলো পাচারকারীদের দেশে ফেরত আনা৷ তাদের ফেরত আনলে তাদের মাধ্যমেই পাচারের অর্থ ফেরত আনা সহজ৷''

সরকারি কর্মকর্তারা অর্থপাচার করায় নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে৷ বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তারাই বিভিন্ন পর্যায়ে পাচার ঠেকানো এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত৷ এখন তারাই যদি পাচার করেন তাহলে তো সংকট অনেক গভীরে৷ সর্ষের মধ্যেই ভূত৷''

তার মতে, দুর্নীতি আগে বন্ধ করতে হবে৷ দুর্নীতির টাকাই পাচার হয় বেশি৷ সরকারি কর্মকর্তারা এত টাকা কোথায় পান?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য