বো শিলাই'এর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩বো শিলাই'এর বিরুদ্ধে মামলায় বাস্তব অভিযোগগুলোর কোনোকালেই কোনো গুরুত্ব ছিল না৷ দুর্নীতির অভিযোগে যে সব টাকার অঙ্কের উল্লেখ করা হয়েছে - তা সে যে ক'মিলিয়নই হোক না কেন - চীনে বাস্তব দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে তা প্রায় হাস্যকর বলা চলে৷ গোড়া থেকেই উদ্দেশ্যটা ছিল রাজনৈতিক৷
অপরদিকে চীনের আদালতগুলোতে এ'ধরনের মামলা হামেহাল দেখা যায়: রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ঠান্ডা করে দেওয়া৷ তবুও বো শিলাই হাজার হোক পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন; নিজেই নিজের মামলায় ওকালতি করেছেন৷ মামলাও চলেছে সাধারণের চেয়ে বেশি সময় ধরে৷ আদালত স্বয়ং মাইক্রোব্লগের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ার নানা খুঁটিনাটি জানিয়েছে - যদিও সে সবই সেন্সর হয়ে তবে প্রকাশিত হয়েছে৷
নিরপেক্ষ বিচার নয়
চীনের আদালতগুলো নিরপেক্ষ নয়; তারা পার্টির নির্দেশ মেনে চলে৷ বো শিলাই'এর মতো একটি সাড়া জাগানো মামলায় এ'সব নির্দেশ আসে পার্টির সর্বোচ্চ পর্যায়, অর্থাৎ পলিটব্যুরোর স্থায়ী পরিষদ থেকে৷ বিশেষ করে এ'ধরনের রাজনৈতিক মামলার প্রতিটি ধাপ আগাগোড়া পূর্বপরিকল্পিত থাকে৷ মামলা চলে দিন দু'য়েক ধরে৷ অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করে অনুতাপ প্রদর্শন করে৷ শেষমেষ যে রায় ঘোষিত হয়, তা স্পষ্টতই আগে থেকে ঠিক করা ছিল৷
বো শিলাই কিন্তু তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এই চিত্রনাট্য না মেনে নিয়ে, আগে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহার করেন এবং সরকারি পক্ষের সাক্ষীদের জেরা করে তাদের হাস্যাস্পদ করে তোলেন৷ এর ফলে কম্যুনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব আরো একবার বো শিলাই'এর দণ্ডের পরিমাণটা ভেবে দেখতে বাধ্য হন৷
এই প্রক্রিয়া চলে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে: পার্টির সর্বোচ্চ মহলেও বো শিলাই'এর যে এখনো পর্যন্ত কতোটা সমর্থন আছে, এটা যেন তারই প্রমাণ৷ নয়তো সিদ্ধান্তে আসা সহজ হতো৷ কিন্তু এবার যে বার্তা দেওয়া হলো, তা হচ্ছে: দলে কোনো বিভাজন নেই; নেতৃবর্গের কর্তৃত্ব নিয়েও কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না; পার্টির অলিখিত নিয়মাবলী লঙ্ঘনের অর্থ, তোমাকে বিদায় নিতে হবে৷
‘‘রাজপুত্তুর''
বো শিলাই অবশ্য কোনোদিনই নিয়মকানুনের ধার ধারেননি৷ যে কম্যুনিস্ট পার্টিতে ‘‘যৌথ নেতৃত্বের'' ধারনাটা প্রতিষ্ঠিত হতেই এতোটা সময় লেগে গেছে, সেখানে বো শিলাই নিজেকে পাদপ্রদীপের আলোয় এনেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন, জনতার প্রিয় হবার চেষ্টা করেছেন এবং জনতার প্রতি সরাসরি আবেদন করেছেন৷
কম্যুনিস্ট বিপ্লবের এক প্রবীণ বিপ্লবীর সন্তান হিসেবে তিনি ছিলেন একজন ‘‘রাজপুত্তুর'' - কাজেই তাঁর আত্মবিশ্বাসের কোনো অভাব ছিল না৷ নিজের পথে এবং মতে চলতে গিয়ে তিনি বহু শত্রু বানিয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ক্ষমতাশালী৷ অপরদিকে বো শিলাই চীনা সমাজে ক্রমবর্ধমান অসাম্যের সমালোচনা করেন এবং আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার যারা শিকার হয়েছে, তাদের হয়ে ওকালতি করেন৷ কাজেই তথাকথিত ‘‘নব্য বাম'' তাঁকে মাথায় তুলে রেখেছিল৷
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য বো শিলাই'এর হাতে দশ দিন সময় থাকবে৷ বো খুব সম্ভবত আপিল করবেন৷ কিন্তু তা'তে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না: কম্যুনিস্ট নেতৃত্ব দৃশ্যত বো শিলাই'কে দীর্ঘদিনের জন্য লৌহ যবনিকার আড়ালে পাঠাতে বদ্ধপরিকর৷ তবে বো শিলাই'এর নব মাওপন্থি রাজনীতি যে খোদ রাষ্ট্র- তথা সরকারপ্রধান শি চিনপিং'এর তাঁবেই মঞ্জরিত হতে চলেছে, সেটাও ভাগ্যের একটা রসিকতা৷
অথবা মেধাস্বত্ব চুরির মামলা!