1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৌদ্ধ নেতাকে গ্রেপ্তারের নেপথ্যে কী?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ অক্টোবর ২০১৭

বাংলাদেশে উ শি মং নামে এক বৌদ্ধ নেতাকে মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের মদত দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তিনি বাংলাদেশের নাগরিক৷ তাঁর স্ত্রী আরাকান লিবারেশন পার্টির নেতা৷ তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনি একজন সমাজ সেবক৷

https://p.dw.com/p/2mYcF
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Shrestha

উ শি মং-এর বয়স ৬৭ বছর৷ মিয়ানমার যাওয়ার সময় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ১৯ অক্টেবর তাঁকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা৷ তাঁর কাছ থেকে একটি ল্যাপটপও জব্দ করা হয়৷ আটকের পর তাঁকে ঢাকার বিমান বন্দর থানায় হস্তান্তর করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে৷

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-ই-আজম মিয়া ডয়চে ভেলেক জানান, ‘‘তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত৷ আমরা পুলিশ হেফাজতে এনে তাকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করব৷ এখন তিনি কারাগারে আছেন৷''

Noor E Azam Mia - MP3-Stereo

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি জানান, ‘‘তিনি মিয়ানমারে স্বাধীনতাকামীদের অর্থের জোগানদাতা৷ তার ল্যাপটপে কিছু ছবি পাওয়া গেছে, যা আমরা তদন্ত করে দেখছি৷ ওই সব ছবির মধ্যে সশস্ত্র অবস্থায় তার স্ত্রী'র ছবিও আছে৷''

ইন্দোনেশিয়ার সংবাদমাধ্যম জাকার্তা পোস্ট জানিয়েছে, সহিংসতায় জর্জরিত রাখাইন প্রদেশে ‘রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন' নামে একটি দাতব্য সংস্থা চালান উ শি মং৷

উ শি মং-এর  বোন এথিন রাখাইন বাংলাদেশের  আওয়ামী লীগ দলীয় একজন সাবেক সংসদ সদস্য৷ তিনি সংরক্ষিত নারী আসনে চট্টগ্রাম থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন৷ এথিন রাখাইন বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী মিরা রাজা লিন মিয়ানমারে থাকেন৷ তাঁর সঙ্গেই দেখা করতে মিয়ানমারে যাচ্ছিলেন তাঁর ভাই৷ তিনি দাবি করেন, উ শি মং-এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা৷ তাঁর মতে, উ শি মং রাখাইনে শান্তির জন্য কাজ করেন৷ মুসলিম ও বৌদ্ধদের সবাইকেই সাহায্য করার চেষ্টা করেন তাঁর ভাই৷

এথিন রাখাইন আরো বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের স্ত্রী মিরা রাজা লিন মিয়ানমারে শান্তি আন্দোলনে ছিলেন৷ তিনি সেখানকার পরিচিত বিদ্রোহী নেতা৷''

তাঁর পরিবারের এক সদস্য ফোনে দাবি করেন যে, ‘‘মং-এর স্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি'র পরিচয় আছে৷'' 

রাখাইনে একটি নারীদের সংগঠনের প্রধান লিন৷ আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)-রও একজন সিনিয়র সদস্য তিনি৷ লিন আগে গেরিলা নেতা ছিলেন৷

এদিকে বাংলাদেশি এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, ‘‘এএলপি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোহিঙ্গাবিরোধী ছিল৷''

উ শি মং-এর বোনের স্বামী কেও শি অং  কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মং-এর জন্ম বাংলাদেশে৷ তাঁর পূর্ব পুরুষরাও এখানকার নাগরিক৷ উ শি মং-কে মিয়ানমারে যাওয়ার সময় আটক করা হয়৷ তাঁর স্ত্রী মিয়ানমারে থাকেন৷ তিনি সেখানেই যাচ্ছিলেন৷ তাঁর কাছে একটি ল্যাপটপ এবং অল্প কিছু মিয়ানমারের মূদ্রা পাওয়া যায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘মং-এর স্ত্রী আরাকান লিবারেশন পাটি ((এএলপি)-র নেতা৷ ওই দলটি বার্মায় কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়৷ এখন ওই দলটি বার্মায় শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে কাজ করছে৷ মং-এর স্ত্রী চিফ পিস নেগোশিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন৷ কিন্তু মং-এর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নাই৷ কারণ, মং বাংলাদেশের নাগরিক৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মং অনেক দাতব্য কাজ করেন৷ তাঁর এনজিও রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বরগুণা, পটুয়াখালী এবং বক্সবাজার এলকায় কাজ করে৷ এছাড়া তিনি ওইসব এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ বাংলাদেশে তার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প কারাখানা আছে৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘মং কোনো ধরনের সন্ত্রাসী বা উগ্রগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত না৷''

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং উগ্র বৌদ্ধপন্থীদের হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ জাতিসংঘের হিসেবে গত দু' মাসে এ পর্যন্ত ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷

Keo shi ong - MP3-Stereo

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, কয়েক হাজার মানুষকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা করেছে৷ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ঘর-বাড়ি৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলোও স্যাটেলাইটের ছবি'র মাধ্যমে দাবি করেছে, রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ গ্রামেরই আর অস্তিত্ব নেই৷

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা৷ পালিয়ে আসা আমিরুল ইসলাম নামের এক রোহিঙ্গা এএফপি'কে জানিয়েছেন, তাঁর ভাইকে এক বাংলাদেশি মগ হত্যা করেছে৷

অভিযোগ রয়েছে, মগ নামের উপজাতি বৌদ্ধদের কেউ কেউ  মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনে সক্রিয় উগ্রবাদীদের সঙ্গে কাজ করছে৷ তাদের কেউ কেউ দেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতেও সক্রিয়৷