1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ প্রিয় যে জার্মানি প্রবাসীর

২৭ জুলাই ২০২০

ঢাকার নবাবগঞ্জের বাসিন্দা রেসাদ রাকিব জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সফল ক্যাবল ব্যবসায়ী হিসেবে৷ আখেন শহরে তার কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়াতেও রপ্তানি হয়৷

https://p.dw.com/p/3fxKj
জার্মানি প্রবাসী ব্যবসায়ী রেসাদ রাকিবছবি: DW/A. Islam

‘ব্যবসার জন্য জার্মানির চেয়ে বাংলাদেশ ভালো’

বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রেসাদ রাকিব৷ প্রাকৃতিক নৈসর্গের জন্য বিখ্যাত জার্মানির আইফেল অঞ্চলের এই বাসিন্দা জার্মানিতে পাড়ি জমান ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে৷ এরপর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ইউরোপের দেশটিতে সফল ক্যাবল বা তার ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন রাকিব৷ স্পেশাল ক্যাবল জিএমবিএইচ-এর মালিক রেসাদ রাকিব বলেন, ‘‘ক্যাবল বা তার সম্পর্কে আমি জানি৷ ফলে এই ব্যবসা করতে গিয়ে আমি যদি কোথাও ভুল করি, তাহলে তা বুঝতে পারবো৷ আর অন্য কোনো কিছুর ব্যবসা করলে, অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হতো৷ আর তখন ভুল করলে বুঝতে পারতাম না৷''

নিজেকে প্রস্তুত করেছেন যেভাবে

বাংলাদেশে থাকতেই পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা করতেন রেসাদ রাকিব৷ ঢাকার নবাবগঞ্জে কেটেছে তার ছোটবেলা৷ কয়েকটি লঞ্চ ছিল তার পরিবারের৷ সেগুলো দেখাশোনার পাশাপাশি ক্যাবল ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হন তিনি৷ জার্মানিতে আসার পর শুরুতে বার্লিনে জার্মান ভাষা শিখেছেন এবং পরবর্তীতে সেখানকার টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ক্যাবল সিস্টেম বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ 

তবে জার্মানিতে পড়াশোনা শেষ করার পরপরই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হয়নি৷ বরং ক্যাবল উৎপাদনকারী জার্মান প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকুরি করেছেন তিনি৷ ক্যাবল বা তার পরীক্ষার কাজটি বেশ ভালো পারেন রেসাদ রাকিব৷ ফলে কর্মী হিসেবে তার ছিল বাড়তি কদর৷ ইউরোপে ক্যাবল ব্যবসায়ী হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে৷ রাকিব বলেন, ‘‘১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে এখানে ব্যবসা শুরু করি৷ তখন এটা ছিল ব্রোকারি (দালালি) ব্যবসা৷ অর্থাৎ, আমি ইটালি থেকে পণ্য কিনে এনে এখানে বিক্রি করতাম৷''

তবে ইটালি থেকে পণ্য কিনে এনে জার্মানিতে বিক্রি করার এই ব্যবসা নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না রাকিব৷ তার কাছে এটাকে ব্যবসার চেয়ে ‘ব্রোকারি' মনে হতো বেশি৷ তাই আইফেলের সিমারাথে নিজের বাড়ির নীচ তলায় এই গোডাউনের পাশাপাশি এক পর্যায়ে আখেন শহরে গড়ে তোলেন ক্যাবল তৈরির নিজস্ব কারখানা৷ বাড়ি থেকে গাড়িতে বিশ মিনিট লাগে সেই কারাখানায় পৌঁছাতে৷

খদ্দেরের সঙ্গে ‘বিশ্বাস স্থাপন' জরুরি

জার্মানিতে ব্যবসা করতে গিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে এই বাংলাদেশি জার্মান ব্যবসায়ীর৷ তিনি মনে করেন, খদ্দেরের সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন এবং সেটা ধরে রাখাটা ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি আর ইউরোপে ব্যবসার মূল ভিত্তিও এটি৷

রেসাদ রাকিব বলেন, ‘‘ধরেন, এখন যে গাড়িটা চালাচ্ছি - মার্সিডিজ৷ এ ধরনের গাড়ি চালালে অনেক কোম্পানি বলে যে, না, তোমার কাছে অনেক পয়সা আছে৷ তোমাকে এই অর্ডার দেবো না৷ আমাকে তখন আসলেই অর্ডার দেয় না৷ আবার অনেক কোম্পানি আছে তারা বলে যে, তুমি স্যুট, টাই, মার্সিডিজ না নিয়ে এলে তোমাকে আমরা অর্ডার দেবো না৷ আমি যদি বলি কেন? তখন বলে যে, তোমার কাছে যদি এসব না থাকে, তার মানে তোমার কাছে বেশি পয়সা নেই৷ তুমি অনেক সস্তা কাচামাল ব্যবহার করবে৷ সেজন্য তোমাকে অর্ডার দেবো না৷''

সাফল্যের পেছনে পরিবার

আখেনের ক্যাবল কারখানাতে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে৷ বিশ্বে যতরকমের তার সাধারণত ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় সবগুলোই এখানে উৎপাদন সম্ভব৷ রাশেদ রাকিব নিজে খদ্দেরের চাহিদা অনুযায়ী তারের নকশা তৈরি করেন৷ 

আর আখেন শহর জার্মানির এমন এক অঞ্চলে অবস্থিত যেখান থেকে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, লুক্সেমবুর্গের মতো দেশগুলোতে সহজেই পণ্য পাঠানো যায়৷ এ কারণে এই শহরকেই ব্যবসার জন্য বেছে নিয়েছেন তিনি৷

রাকিবের কারখানায় স্বয়ংক্রিয় মেশিনও ব্যবহার করা হয়৷ তবে, প্রতিটিক্ষেত্রেই সতর্ক নজর রাখেন তিনি৷ জার্মানি প্রবাসী এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ২৩ জন লোক কাজ করে, তিন শিফটে৷ আমরা এখানে সব ধরনের কম্পাউন্ডই তৈরি করি৷ ইউরোপের প্রায় সব দেশে রপ্তানির পাশাপাশি এশিয়ায় মালয়েশিয়াতেও আমরা আমাদের পণ্য রপ্তানি করি৷ জার্মানিতে এরকম আরো কোম্পানি আছে৷ কিন্তু আমি মনে করি, আমরা ফ্লেক্সিবল বেশি৷ আর খুব দ্রুত সবকিছু করতে পারি৷ সেজন্য এই করোনার সময়েও আমাদের কাছে যথেষ্ট অর্ডার আছে৷ অনেক জার্মান কোম্পানি এখন বন্ধ আছে৷ কিন্তু আমাদেরটা চলছে৷''

ক্যাবল বা তার ব্যবসায় নিজের এই সাফল্যের পেছনে পরিবারের অবদানকেই বড় করে দেখেন রেসাদ রাকিব৷ ব্যবসা শুরুর পুঁজি তিনি পারিবারিক সঞ্চয় থেকে পেয়েছেন৷ তাঁর স্ত্রী ডা. তসলিমা রাকিব জার্মানিতে সুপরিচিত একজন চিকিৎসক৷ রাকিব বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী সবসময় আমার পাশে ছিল এবং আছে৷ আমি আগে অনেক পণ্য কিনতাম ইটালি থেকে৷ তখন সে আমার সঙ্গে ইটালি গেছে৷ মাঝরাতে গাড়ি চালিয়ে সেখানে গিয়েছি, আবার পরের দিন রাতে ফেরত এসেছি৷''

বিদেশিদের উপর ভরসা, তবে ভালো বাংলাদেশ

রেসাদ রাকিবের কারখানাতে বাংলাদেশি বলতে শুধু তিনি এবং তার ছেলে রাসুল রাকিব৷ শুরুতে কয়েকজন বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেছেন তার কারখানাতে৷ তবে তাদের কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় এখন শুধু ইউরোপীয়দের উপরই ভরসা করছেন তিনি৷

ব্যবসার জন্য অবশ্য জার্মানির চেয়ে বাংলাদেশকে সুবিধাজনক মনে করেন রাকিব৷

তিনি বলেন, ‘‘ম্যাটেরিয়ালের কথা চিন্তা করলে জার্মানিতে সবকিছুই আছে, সবকিছুই সহজে পাওয়া যায়৷ যেভাবে চান, সেভাবেই পাবেন৷ অন্যদিকে, বাংলাদেশে সেটা পাওয়া একটু কষ্টকর, কারণ, অনেক কিছু আমদানি করতে হয়৷ তবে ব্যবসার লাইনটা বাংলাদেশে জার্মানির চেয়ে সহজ৷ এই দেশে নিয়ম-কানুন অনেক কড়াভাবে পালন করতে হয়৷ বাংলাদেশেও করতে হয়, তবে সেটা এদেশের মতো এতে কড়া বা কঠিন নয়৷''

ক্যাবল ব্যবসা থেকে বছরে সাড়ে চার মিলিয়ন ইউরো আয় করেন রেসাদ রাকিব৷ এর মধ্যে ৪২ শতাংশ লাভ তার৷