1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌ব্র্যান্ড ব্যাপারটাই বোকাবোকা!‌’

১৬ নভেম্বর ২০১৮

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বত্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখের ছবি দেওয়া বিশাল সব ব্যানার, প্ল্যাকার্ড৷ অনেক বছর ধরেই বিরোধিতার গুঞ্জন ছিল জনান্তিকে৷ সেই আপত্তি এবার সরব হলো৷

https://p.dw.com/p/38Oxb
ছবি: DW/S. Bandyopadhyay

চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত যদিও সবিনয়ে বলছেন যে, তিনি এমন কিছু একটা বৈপ্লবিক কাণ্ড ঘটাননি, আসলে কিন্তু তিনি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন৷ এতদিন যে আলোচনা, বিদ্রূপ, কটাক্ষ ঘরোয়া আড্ডা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল, তা এবার এক ঝটকায় এসে পড়েছে বাইরে, সবার চোখের সামনে এবং ঝড় তুলেছে৷ চলতি ২৪ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এক আলোচনাসভায় মূল প্রসঙ্গটি ছিল, সিনেমা আসলে কার?‌ সে বিষয়ে বলতে উঠে বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত হঠাৎই বলে বসেন, সিনেমা পরিচালকের নয়, প্রযোজকের নয়, এমনকি দর্শকদেরও নয়৷ এই চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গনে সর্বত্র যাঁর ছবির ছড়াছড়ি, রাস্তাঘাটে সব জায়গায় যাঁর ছবি দেখা যায়, সিনেমা আসলে তাঁর৷

অনীক দত্ত যদিও ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি কিছুটা রসিকতার ছলেই কথাটা বলেছেন, কিন্তু ব্যাপারটা দৃশ্যত তাঁর খারাপ লেগেছে, তাই বলেছেন৷ আমজনতা কিন্তু বক্তব্যটা লুফে নিয়েছে৷ গুনতি শুরু হয়েছে, নন্দন-রবীন্দ্র সদন-শিশির মঞ্চ লাগোয়া চত্বরে ঠিক ক'টা পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড আছে, যাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সহাস্য মুখের ছবি দেখা যাচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠছে, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী চলচ্চিত্র শিল্পে এমনকি বিশেষ অবদান রেখেছেন যে, চলচ্চিত্র উৎসব প্রাঙ্গন তাঁর মুখের ছবিতেই ভরিয়ে রাখতে হবে৷ বদ রসিকতা হচ্ছে যে, ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের ‘‌মা-মাটি-মানুষ’ স্লোগানটি চলচ্চিত্র উৎসবের সময় নাকি বদলে হয়ে যায়— ‘‌সিনে-মা-মাটি-মানুষ’!‌

ফিল্ম জগৎ থেকে আমি (‌প্রতিক্রিয়া)‌ খুব একটা আশাও করিনি: অনীক দত্ত

বলা বাহুল্য যে, এর বিরোধিতাও হচ্ছে বেশ জোরেশোরেই৷ অনেকেই বলছেন, একটা সময় যে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব তৎকালীন শাসকদলের পেটোয়া লোকজনেদের একচেটিয়া ছিল, তা এখন সাধারণের নাগালে নেমে এসেছে বলে কিছু লোকের সহ্য হচ্ছে না৷ কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে অনীক দত্তকে সেই পূর্বতন শাসক দলের ‘‌দালাল’ বলেও চিহ্নিত করছেন৷ এবং প্রত্যাশিতভাবেই নীরব চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন৷ বিখ্যাতরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে‌ পারলেই বেশি স্বস্তি বোধ করছেন৷ অনেকে মৃদু স্বরে বিরোধিতাও করছেন৷ এ ব্যাপারে অনীকের নিজের বক্তব্য, ‘‌‘দেখুন, ফিল্ম জগৎ থেকে আমি (‌প্রতিক্রিয়া)‌ খুব একটা আশাও করিনি৷ হ্যাঁ, প্রতিক্রিয়া একটা হয়েছে৷ যেরকম ভেবেছিলাম, সেরকম প্রতিক্রিয়াই হয়েছে৷ বেশিরভাগই কিছু বলতে চাননি৷ দু-একজন যাঁরা বলেছেন, একজন দু'জন বাদ দিয়ে, কয়েকজন.‌..‌ অল্প সংখ্যক সমর্থন করেছেন৷ তাৎক্ষণিকভাবে, মঞ্চের ওপর একজন একটা ছোট মন্তব্য করেছেন, একজন সেটার বিরোধিতা করেছেন৷’’

কিন্তু চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গনে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারের প্রচারের বাড়াবাড়ি নিয়ে যে আপত্তি জানাবেন, সেটা কি আগে থেকেই ঠিক করে গিয়েছিলেন, না ওখানে, মঞ্চে বসে মনে হয়েছে?‌ অনীক জানালেন, একেবারেই আগে থেকে ঠিক করা নয়৷ কিন্তু ওই নন্দন চত্বরে পৌঁছে, চতুর্দিকে অত ব্যানার দেখে তাঁর একটু খারাপ লেগেছিল এবং সেটাই তিনি জানিয়েছেন৷ তার বেশি কিছু নয়৷ এবং ব্যাপারটা তিনি কিছুটা রসিকতার ছলেই বলেছিলেন৷ সেটা যে বিরাট বীরত্বের কাজ করেছেন বা বৈপ্লবিক কিছু করেছেন, তেমনটা তিনি মনে করেন না৷

কিন্তু যে কোনো সরকার বা তার প্রধান নিজের প্রচার তো চাইতেই পারে!‌ সেটা তো দোষের কিছু নয়!‌ অনীক দত্ত নিজে বিজ্ঞাপন জগতের সঙ্গেও যুক্ত৷ বিজ্ঞাপনী ছবিও বানান৷ তিনি যদি আজ রাজ্য সরকারের প্রচারের দায়িত্ব পান যে, এই সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর একটা ‘‌ব্র্যান্ড ইমেজ’ তৈরি করতে হবে, তা হলে তিনি কি চলচ্চিত্র উৎসবের মতো একটা সুযোগকে কাজে লাগাতেন না?‌ এ ব্যাপারে অনীক দত্তের বক্তব্য খুব সোজাসাপটা— ‘‌‘‌ব্র্যান্ড কথাটা নিয়ে আমার নিজেরই একটু (‌অস্বস্তি)‌ রয়েছে৷ অদ্ভুত লাগে, এবং বোকাবোকাও লাগে ব্র্যান্ড কথাটা৷ .‌.‌.‌আমি ফিল্মটা বানাই৷ আমি বিজ্ঞাপনের সেই লোকটা নই যে, আমি ঠিক করি, এই ব্র্যান্ডটা কীভাবে তুলে ধরা হবে৷ আমি অবশ্যই তার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ, যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যে তুমি ছবিটা করো৷’’ এবং অনীক খুব পরিষ্কারভাবেই বলে দিচ্ছেন, যে কোনো দায়িত্ব তাঁকে দিলেই যে তিনি করবেন, এরকম কোনো কথা নেই৷ ‘‌‘‌আমাকে আগেও বলা হয়েছিল৷ (‌কিন্তু)‌ আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই একাত্ম নই৷ সুতরাং সেটা যে একজন পেশাদার হিসেবে করে দেবো, সেটাও করিনি৷’’

এবং ঘটনা হচ্ছে, এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে অনীকের বিতর্কিত মন্তব্যে যতটা না রাজনীতি উৎসাহিত হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে একটা পরিমিতিবোধের প্রশ্ন৷ কতটা প্রচার চলতে পারে, কোথায় থামা উচিত, কখন সংযত হওয়াই শোভন— সেই প্রশ্ন উঠেছে৷ ২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতি চলচ্চিত্র উৎসবের শতবর্ষের বাংলা সিনেমার মাইলফলক ছবিগুলি সংরক্ষণের একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ সেই নিয়ে আলোচনা, কর্মশালা হয়েছে৷ তার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরেই যেটা হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষের নাগালে এসেছে চলচ্চিত্র উৎসব, সেটা এবার আরো ব্যাপক হয়েছে৷ সেই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, কী দরকার এমন আত্মপ্রচারের, যেখানে ভালো কাজই কথা বলতে পারে?‌