1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্লগার হত্যা বিষয়ে তিনটি তথ্য

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম মূলত রাজনীতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, শরণার্থী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যু কভার করেন৷ পাশাপাশি জার্মানি ও ইউরোপে জীবনযাপনের নানা দিকও তুলে ধরেন তিনি৷
আরাফাতুল ইসলাম
১১ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে দেশটির সরকার এই নিয়ে বিশেষ ভাবিত নয়৷ বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি ধরার চেয়ে ব্লগারদের লেখালেখির দিকে মনোযোগী বেশি৷

https://p.dw.com/p/1ITEy
নিহত নাজিমুদ্দিন সামাদ
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. M. Ahad

১.

ব্লগার হত্যার শুরু ২০১৩ সালে হলেও তার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০১৫ সালে৷ এখন পর্যন্ত খুন হওয়া সকল ব্লগার সেক্যুলার আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, যে আদর্শ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও ধারণ করে বলে দাবি করে৷ খুন হওয়া ব্লগারদের কেউই সরকারবিরোধী ছিলেন না৷ বরং যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো ইস্যুতে সরকারের সমর্থক ছিলেন৷ প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে সরকার তাদের রক্ষায় তৎপর না কেন?

এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে ভয়৷ নাস্তিক ব্লগারদের বিচারের দাবিতে গত কয়েকবছরে একাধিকবার রাজপথ কাঁপিয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামের উগ্রপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী৷ মুক্তমনাদের ইন্টারনেটে লেখালেখির ঘোর বিরোধী তারা৷ আর এটা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, বর্তমান সরকার কোনভাবেই হেফাজতকে ক্ষেপাতে রাজি নয়৷ তাই কোনো ব্লগার খুন হলে তার নিন্দা জানানোর বদলে ব্লগারদের ধর্মের সমালোচনামূলক লেখালেখি থেকে বিরত থাকতে বলছেন সরকার প্রধান থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত৷

লক্ষ্যণীয়, একজন ব্লগার হত্যা হলে তার প্রতিবাদে রাজপথে নামে হাতেগোনা অল্পকিছু মানুষ, যাদের অধিকাংশই বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য৷ আর নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবি করা মিছিল, সমাবেশে জড়ো হয় কয়েক হাজার মানুষ৷ যদিও এদের অধিকাংশই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, তবুও সরকারের ভয় তাদের নিয়ে৷ গুটিকয়েক প্রতিবাদী মানুষের প্রতিবাদ তাদের ভাবায় না৷

২.

বাংলাদেশে নাস্তিক একটা গালি৷ সমাজের শিক্ষিত, অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের ধারণা নাস্তিকতা মানেই হচ্ছে খারাপ কিছু৷ তারা ধর্ম পালন করে না, ফলে অনৈতিক কাজে তাদের কোনো বাধা নেই৷ একজন নাস্তিক ব্যক্তি সব নষ্টের মূল, এমন ধারণা বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত৷ হতাশার কথা হচ্ছে, নাস্তিকতা মাত্রই যে নেতিবাচক কিছু নয়, সেই সচেতনতা সৃষ্টিতে কোনো উদ্যোগ নেই৷ ফলে বর্তমানে নৈতিকভাবে দুর্বল একটি নির্বাচন জয় করে ক্ষমতায় থাকা দল, নিজেদের ধর্ম নিরপেক্ষ বললেও নাস্তিকতার ঘোর বিরোধী হিসেবে দেখাতে পছন্দ করে৷ যদিও ধর্ম নিরপেক্ষতার মধ্যে যে নাস্তিকদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার নিশ্চিতের ব্যাপারটিও থাকে, সেটা সম্ভবত তাদের ভাবনায় নেই৷

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, কোনো ব্লগারকে হত্যার পরপরই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকহারে প্রচার করা হয় যে খুন হওয়া ব্লগার নাস্তিক ছিলেন এবং ইসলাম, মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন৷ এই প্রচারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ ফলে রাজপথে প্রতিবাদে খুব কম লোককে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষরাও আকারে, ইঙ্গিত খুন হওয়া ব্লগারের সমালোচনা করেন৷

৩.

এমন ভাবার কোনো কারণ নেই যে, শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলই বুঝি ব্লগার হত্যার ইস্যুতে হেফাজত তথা মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট রাখতে চাচ্ছে৷ বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এক্ষেত্রে একই৷ নাস্তিকের ধর্মকথা তাঁর ‘‘রেজর'স এজ'' তথ্যচিত্রে সেটা ভালোভাবেই প্রমাণ করেছেন৷ ক্ষমতাসীনরা যদি কোনভাবে নাস্তিক বা ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা ব্লগারদের হত্যার বিচারে প্রকাশ্যে সচেষ্ট হন, এ সব খুনের নিন্দা করেন, তাহলে উগ্র ইসলামপন্থিরা ক্ষুব্ধ হতে পারে, আর সেটার সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল সরকার পতনের চেষ্টা করতে পারে৷ সরকারের পক্ষে তা সামলানো কঠিন হবে৷

আরাফাতুল ইসলামের ছবি
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

তাই ব্লগারদের রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে যে চাপ সরকারের উপর রয়েছে, সেটা তারা আমলে নিচ্ছে না৷ কেননা, বাইরের চাপ সামলানো গেলেও ঘরের চাপ সামলানো অসম্ভব হতে পারে৷ তাই, নাস্তিক ব্লগারদের আপাতত বাঁচতে চাইলে আত্মগোপন বা সম্ভব হলে দেশত্যাগ ছাড়া কোনো গতান্তর দেখা যাচ্ছে না৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? তাহলে লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য