1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আসামের মুসলমানরা

১৫ জুলাই ২০১৯

অনুপ্রবেশকারী আখ্যায়িত হওয়া এবং নাগরিকত্ব নিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার দুর্ভোগের কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ভারতের আসামের মুসলমানরা৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের৷

https://p.dw.com/p/3M5xB
Indien Tausende Nordinder fliehen aus dem Süden
ছবি: dapd

সত্তর বছর আগে ভারতের জন্ম নিলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় গিয়ে তিন বছর আটক ছিলেন রেহাত আলী৷ বিজেপি সরকারের মুসলিম-বিরোধী নীতির কারণে কয়েক লাখ মুসলমানের মতো এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় এই নিরক্ষর কৃষক৷

‘‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি আমার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে৷ আমি ভারতের নাগরিক৷ আসামে জন্ম নিয়েছি এবং কয়েক পুরুষ ধরে এখানেই বসবাস করছি,'' এএফপিকে বলেছেন রেহাত আলী৷

গ্রামীণ এই কৃষক ‘বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে' প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে না পারায় তাকে বাংলাদেশি ঘোষণা করে আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল৷

উচ্চ আদালতের রায়ে তিন বছরের মাথায় ছাড়া পেয়েছেন রেহাত আলী৷ কিন্তু আইনি লড়াই করতে গিয়ে এর মধ্যে তাকে বিক্রি করতে হয়েছে সমস্ত জমি এবং গবাদিপশু৷ এরপরও অন্যদের তুলনায় নিজেকে ভাগ্যবান মানছেন তিনি৷

আসামে গতবছরের দ্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) নামক খসড়া আইনের কারণে প্রায় ৪০ লাখ আসামবাসীর ভাগ্য ঝুলছে৷ কারণ ১৯৭১ সালের আগে বাবা কিংবা দাদার প্রজন্ম আসামে ছিল, এমন প্রমাণ দিতে পারেনি তারা৷

বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে যারা বাদ পড়বে, তারা আপিল করতে পারবেন৷ কিন্তু চলতি মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চললেও প্রায় ২০ লাখ লোক এর বাইরে থেকে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ বেশিরভাগ নিরক্ষর মানুষের জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়া বুঝা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া যেন দুঃস্বপ্নের মতো৷

শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সোনা উল্লাহর নাগরিকত্ব প্রমাণ না হওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল৷ ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে কারগিল যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি৷

কাগজপত্রে অমিল থাকার কারণে গত মে মাসে তাকে আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল৷ এমনকি পুলিশ তাঁর পুরাতন ইউনিফর্মও জব্দ করেছিল৷ অবশ্য ব্যাপক প্রতিবাদের পর অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন তিনি৷

নাগরিকত্ব জটিলতা নিরসনে আসামে একশ'টি বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছে এবং আরো দু'শটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হচ্ছে৷ কর্মকর্তারা অযোগ্য হওয়ায় এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম অনেকটা লটারির মতো বলে অভিযোগ করছেন অধিকারকর্মীরা৷

অনলাইন ম্যাগাজিন স্ক্রল জানিয়েছে, বিদেশি ঘোষণার ক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তাদের হরহামেশায় সরিয়ে দেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার৷

‘‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ট্রাইব্যুনালের যে সদস্য অধিক ব্যক্তিকে বিদেশি ঘোষণা করতে পারেন, তাকে সবচেয়ে বেশি উইকেট-শিকারি বলা হয়ে থাকে,'' ক্রিকেটীয় পরিভাষা ব্যবহার করে বলেন সাবেক একজন ট্রাইব্যুনাল সদস্য৷

 খসড়া এনআরসিতে যারা বাদ পড়েছেন, তাদের বেশিরভাগই মুসলিম৷ কারণ এই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নরেন্দ্র মোদীর সরকার এটি চালু করেছে বলে অভিযোগ৷

গত জানুয়ারিতে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাস করে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ৷ যাতে বলা হয়, ছয় বছর আগে  যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ তবে মুসলিমরা বাদে৷

আসামের ছয়টি আটক কেন্দ্রে বর্তমানে ৯৩৮ জন লোক বন্দী আছেন৷ তিন হাজার লোকের জন্য আরেকটি কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার৷ পাশাপাশি প্রতিটিতে এক হাজার লোকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নয়টি কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা৷

অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আসামের মুসলমানদের৷ তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দিয়েছে৷

বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এনআরসি-র প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ৪৪ জন লোক আত্মহত্যা করেছেন৷ যদিও এক্ষেত্রে সরকারি কোনো হিসাব পাওয়া যায় না৷

এমবি/ (এএফপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য