1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ, সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে

৪ জানুয়ারি ২০২২

ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, জানালেন টিকাকরণ নিয়ে সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান এন কে অরোরা। বহু চিকিৎসক, পুলিশ, রাজনীতিক করোনায় আক্রান্ত।

https://p.dw.com/p/456nG
কলকাতায় আবার রাতের কার্ফিউ শুরু। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাবেও রাতে কার্ফিউ চালু হয়েছে।ছবি: Subrata Goswami/DW

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৩৭ হাজার ৩৭৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যতজনের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে, তার একশ জনের মধ্যে দেশজুড়ে গড়ে তিন দশমিক ২৪ জন করোনায় আক্রান্ত। দিল্লিতে এই সংখ্যাটি ছয়ের বেশি। করোনা লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে ওমিক্রন প্রজাতির ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় এই প্রথম একজন সরকারি শীর্ষস্থানীয় কর্তা জানিয়ে দিলেন যে, করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। 

অরোরা জানিয়েছেন, দিল্লি, মুম্বই, কলকাতায় যতজন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তার মধ্যে ৭৫ শতাংশই ওমিক্রন-আক্রান্ত।

ভারতে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এক হাজার ৮৯২ জন এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। তবে বেসরকারি মতে, সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সোমবার মুম্বইয়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশেরই কোনো উপসর্গ ছিল না। 

কেজরিওয়াল সহ একাধিক রাজনীতিক আক্রান্ত

আবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, তার করোনার মৃদু উপসর্গ আছে। তিনি বাড়িতেই নিভৃতবাস করছেন। এর আগে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ও কেজরিওয়ালের করোনা হয়েছিল। 

তবে শুধু কেজরিওয়াল নন, বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি এবং মহেন্দ্রনাথ পান্ডেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কেজরিওয়াল, মনোজ, মহেন্দ্রনাথ সকলেই নির্বাচনী প্রচার করছিলেন। উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবে নির্বাচনী প্রচার চলছে। 

সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত। তার সহরাকীরাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে তিনি টুইট করে জানিয়েছেন। 

পুলিশ, ডাক্তার আক্রান্ত

কলকাতা পুলিশে সাতজন আইপিএস অফিসার সহ ৮৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংখ্যাটা প্রতিদিন বাড়ছে।  মঙ্গলবারও তিনজনের করোনা ধরা পড়েছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার ও পাঁচজন ডেপুটি কমিশনার করোনায় আক্রান্ত।

দিল্লির এইমসে ৫০ জন চিকিৎসককে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। তাদের অনেকের করোনা হয়েছে, অনেকের উপসর্গ আছে। এইমসে সব চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সফদরজঙ্গ হাসপাতালের ২৩ জন রেসিডেন্ট ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। 

কড়াকড়ি শুরু

পাঞ্জাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কার্ফিউ জারি করা হয়েছে। শপিং মল, সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা, মাল্টিপ্লেক্স, রেস্তোরাঁ, স্পা-তে যতজন যেতে পারেন, তার অর্ধেক মানুষ এখন যেতে পারবেন। 

দিল্লি, মহারাষ্ট্র পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্যে রাতের কার্ফিউ চালু আছে। 

প্রচার চলছে

অধিকাংশ রাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ, সরকারি ও বেসরকারি অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মী আসছেন। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে কোনো বাধা নেই। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব বিশাল বড় বড় জনসভা করছেন। বিজেপি নেতারাও রাজ্য জুড়ে জনসভা, পথসভা করছেন। সেখানেও প্রচুর মানুষ আসছেন। কংগ্রেসও যথেষ্ট সক্রিয়। কংগ্রেস নানা ধরনের অনুষ্ঠান করছে। এই সব অনুষ্ঠানেই যথেষ্ট ভিড় হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মাস্ক ছাড়া মানুষ সেখানে যোগ দিচ্ছেন। কোনোরকম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন প্রচারে কড়াকড়ি করেনি। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার মণিপুর ও ত্রিপুরায় গেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে। মণিপুরে প্রচুর মানুষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বুধবার তিনি পাঞ্জাবে যাচ্ছেন। এর আগে উত্তরপ্রদেশে গেছেন। সেখানেও প্রচুর মানুষ তার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গে এই মাসের শেষে চারটি পুরসভা নির্বাচন হবে। সেখানে অবশ্য বড় সভা করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

আগামী দিনে কী হবে?

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানাচ্ছে, ৮ জানুয়ারির মধ্যে দিল্লিতে দিনে আট থেকে নয় হাজার মানুষ করেনায় আক্রান্ত হবেন। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সংখ্যাটি ২০ থেকে ২৫ হাজারে পৌঁছাতে পারে। 

আনন্দবাজারের রিপোর্ট বলছে, চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, কলকাতায় এই মাসের মাঝামাঝি থেকেই  দিনে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। 

মহারাষ্ট্রে এখনই ১২ হাজারের বেশি মানুষ রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই সংখ্যাটি আগামী দিনে লাফিয়ে বাড়তে পারে। 

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)