1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিস্থিতি বদলাতে ভূমিকা রাখছে কিশোরীরা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২৮ অক্টোবর ২০১৭

ভারতের এক গ্রামে পুরুষদের মদ খাওয়া নিয়ে রোজ বাড়িতে লেগে থাকে অশান্তি আর ঝগড়াঝাটি৷ সহ্য করতে না পেরে বাড়ির শিশুরা বাড়ি ছেড়ে পালাতে থাকে৷ সহজ শিকার হয় পাচারকারীদের৷ গ্রামের কিশোরীরাই গ্রামের হাল ধরতে এগিয়ে এসেছে৷

https://p.dw.com/p/2mch3
প্রতীকী ছবিছবি: imago/imagebroker

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের থেন্নাম্মাদেবি গ্রামের পুরুষরা রোজ বিকেলের দিকে দল বেঁধে মাঠের দিকে ছুটতো মদের নেশায়৷ গ্রামের শ-দেড়েক পুরুষের এটা নিত্য নেশা৷ চোলাই মদে অকালে মারা গেলে বিধবা হয় ৯০ জন মহিলা৷ থেন্নাম্মাদেবি গ্রামের ক্রমশই সর্বনাশ ঘনিয়ে আসতে থাকে৷ ঘরের নিত্যনৈমিত্তিক অশান্তি সহ্য করতে না পেরে শেষে একদিন ঘর ছেড়ে পালাতো বাচ্চারা৷

এই সর্বনাশা অভিশাপের মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তনের আলো লক্ষ্য করা গেছে গত ছয় মাসে৷ অনাকাঙ্ক্ষিত জীবন থেকে মুক্তির দিশা দেখাতে গ্রামের হাল ধরেছে গ্রামেরই কিশোরীরা৷ রেখেছে নিজেদের গ্রামের সার্বিক বিকাশে স্বশক্তিকরণের এক অসামান্য নজির৷ গ্রামের কিশোরীরা ইয়ং গার্ল ক্লাব গঠন করে গ্রামের বিকাশের হাল ধরেছে৷

রাস্তায় লাগিয়েছে আলো, গ্রামের জনস্বাস্থ্য সমীক্ষা চালাচ্ছে, মোবাইল ক্লিনিক খোলার উদ্যোগ নিয়েছে, লাইব্রেরি খুলেছে৷ নানা রকম বই রেখেছে৷ ইচ্ছামত যেমন খুশি বই নিয়ে পড়াশুনা করছে৷ গ্রামের অল্পবয়সী মেয়েদের এই উদ্যোগ নজর কেড়েছে রাজ্যে রাজনীতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর৷ রাস্তার আলোর নীচে বসে প্রতিমাসে একবার তাঁরা নিজেদের কাজকর্ম পর্যালোচনার জন্য মিলিত হয়৷ মত বিনিময় করে কিভাবে গ্রামের আরো উন্নতি করা যায়৷ তাঁদের গ্রামের আশপাশ দিয়ে কোন বাস যায় না৷

তাঁরা দরখাস্ত করে গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে৷  ইয়ং গার্লস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ১৬ বছরের সৌমিয়া বলেন,‘‘ সবকিছুই আমরা সহমতের ভিত্তিতেই কোরে থাকি৷ গ্রামের রূপান্তর ঘটাতে আমরা সবাই কৃতসংকল্প৷ পাশাপাশি আমরা জোর দিয়েছি বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলার দিকে৷ ঋতুকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে৷''  ১৬ বছরের ট্রেনার রাজেন্ধীরান শ্রীদেবি জানান, ‘‘ওরা লক্ষ্য করেছে স্বচ্ছল জীবনের আশায় অনেক ছেলেমেয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে৷ তারপর আর তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ গ্রামের প্রায় দেড়শো বাচ্চা এইভাবে নিরুদ্দেশ৷''

গ্রাম থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে রেলওয়ে জংশন স্টেশন নামভিল্লুপুরম৷ স্কোপ ইন্ডিয়া নামে এক সংস্থার ডিরেক্টর এস.বাবু যখন থেন্নাম্মাদেবি গ্রামের নিখোঁজ বাচ্চাদের নিখোঁজ হবার কারণ অনুসন্ধানে যান সবাই আঙ্গুল দেখায় ঐ বড় জাংশন স্টেশনটার দিকে৷ বিভিন্ন প্লাটফর্মে দিশেহারার মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেক বাচ্চাকে৷ পরনে ময়লা ছেঁড়া জামাকাপড়৷ অনাহারের থাকার ক্লিষ্ট ছাপ৷ গত দু'বছরে এক হাজারেরও বেশি ঘরছাড়া বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে৷

জিজ্ঞাসা করলে কেউ কেউ বলে বাড়ির নরক পরিবেশে থাকতে না পেরে তাঁরা ঘর ছেড়েছে৷ ১৫ বছরের এক কিশোরী জানায়, ‘‘মদ্যপ বাবার হাত থেকে রেহাই পেতে পালিয়েছি৷  এরপর কোথায় যাবো, কি খাবো জানি না৷ আপাতত চেন্নাই যেতে চাই৷ শেষে, তাঁকে সরকারি হোমে নিয়ে আসা হয়৷ এখন সে টেকনিক্যাল ইন্সিটিউটে পড়ছে৷''

‘পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া সহজ নয়’

স্কোপ ইন্টারন্যাশনালের পার্টনার দি চ্যারিটি রেলওয়ে চিলল্ড্রেন এইসব ঘর পালানো বাচ্চাদের দিকে নজর রাখতে ৪০জন রেলওয়ে ক্লিনারকে কাজে লাগিয়েছে৷ তবুও থেন্নাম্মাদেবি গ্রামের সমস্যা দূর হয়নি৷ প্রায় ২০০শোরও বেশি নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হয় অসম বয়সি পুরুষের সঙ্গে এক রকম জোর করে, বাচ্চা পাচারও বন্ধ হয়নি৷ বাচ্চারা বেশিরভাগই গরিব ঘরের নীচু জাতের৷ তবে এর থেকে বড় সমস্যা থেন্নাম্মাদেবি গ্রামের পুরুষদের মদের নেশা৷ পুরো সংসার উজাড় হয়ে যাচ্ছে এই মদের নেশার অভিশাপে, বলেন মানব পাচার বিরোধী অফিসার সি. পদ্মশ্রী৷

ঘর ছাড়া এইসব বাচ্চাদেরপাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করতে চাইল্ড ইন নিড ইন্সটিটিউটের (সিনি) ভূমিকা কি ? ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে সংস্থার উত্তরবঙ্গ শাখার কর্মকর্তা মহেন্দ্র গুপ্তের জানালেন, ‘‘প্রথমত, ১০৯৮ নম্বরে আমাদের কাছে ফোন এলে আমরা যাই৷ আশপাশের লোকজনদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিই বাড়িতে কি রকম অশান্তি বা সমস্যা৷ যদি দেখি বাবা মদ্যপ, পরিবেশ বাস্তবিকই খারাপ, যে-কোন সময়ে বাচ্চারা ঘর থেকে পালিয়ে যেতে পারে, তখন তাঁদের নিয়ে আসি৷ শিশু কল্যাণ কমিশনকে জানাই৷ কমিশনের এবং সরকারি হোমে রেখে কাউন্সেলিং করি৷ মেয়েদের অবশ্য রাখা হয় সরকারি হোমে৷’’

পাচারকারীদের ধরা যাচ্ছে না কেন ? উত্তরে সিনিয়র আঞ্চলিক কর্মকর্তা মহেন্দ্র গুপ্ত ডয়চে ভেলে অকপটে বললেন, ‘‘দেখুন, উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স এলাকার চা-বাগানগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ চা-বাগান ছাড়া এই অঞ্চলে রুজি রোজগারের অন্য কিছু বিকল্প সংস্থান নেই৷ স্থানীয় পাচারকারীরা বাড়ির লোকেদের বোঝায় দিল্লি, মুম্বাই গেলে সম্পন্ন পরিবারের ঘরে কাজ পাইয়ে দেবে, ভালো মাইনে পাবে৷ তাঁদের ঘরেই থাকবে৷ বাইরে যেতে হবে না৷ মা বাবা তখন ছেড়ে দেয়৷''

তিনি আরও বলেন, ‘‘দিল্লিগামী সব ট্রেনই যায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন দিয়ে৷ আমাদের সংস্থা সেইসব ট্রেনের দিকে নজর রাখে৷ অজ্ঞাত পরিচয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের যেতে দেখলে বা আমাদের সন্দেহ হলে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং সেই বুঝে উদ্ধার করি৷ তবে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া সহজ নয়৷ এক তো তাঁদের নেটওয়ার্ক বিরাট৷ দ্বিতীয়ত রেল পুলিশ হামেশাই গা করে না৷ চট করে কেস নিতে চায় না৷ আর পাচারকারীরা জানে বলেই বাচ্চাদের একসঙ্গে না বসিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসায় স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায়৷ তবে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আগে ঘর পালানো বাচ্চাদের আটকানোর সবথেকে ভালো উপায় বাড়িতে পুরুষদের মদের নেশা দূর করা৷ এর থেকেই শুরু সাংসারিক অশান্তি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য