1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে দারিদ্র্য কমছে দ্রুত

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১ জুলাই ২০১৮

বৈশ্বিক দারিদ্র্যরেখার মানদণ্ডে ভারতে চরম দারিদ্র্যের হার যথেষ্ট কমেছে বলে ব্রুকিং ব্লগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে৷ সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি মিনিটে ৪৪ জন ভারতীয় বেরিয়ে আসছে দারিদ্র্য সীমা থেকে৷

https://p.dw.com/p/30ZHw
Indien Rattenfresser
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain

তবে এই দাবি কতটা সত্যি, কিভাবে তা পরিমাপ করা হচ্ছে, তাই নিয়ে ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে৷

ভবিষ্যৎ বিকাশ সম্পর্কে ব্রুকিং ব্লগের এক সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, গরিবী রেখার নীচে বসবাসরত জনসংখ্যার হার ভারতে দ্রুত কমে আসছে৷ প্রতি মিনিটে ৪৪ জন ভারতীয় এই গরিবি রেখা থেকে বেরিয়ে আসছে, যেটাকে বলা যায় বিশ্বের দ্রুততম৷ এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের দারিদ্র্যের কালিমা একেবারে মুছে যাবে ২০৩০ সাল নাগাদ৷ এ বছরের মে মাসে নাইজেরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ সে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ কোটি ৭০ লাখ থাকবে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে৷ কারণ, নাইজেরিয়ায় প্রতি মিনিটে ছয় জন গরিবী রেখার নীচে নেমে যাচ্ছে৷ দ্বিতীয় স্থানে আছে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো৷ সেই অনুপাতে ভারতের স্থান তৃতীয়৷ ভারতের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে এখন ৭ কোটি ১০ লাখ থাকবে গরিব৷ তবে সেটা ক্রমাগত কমতে থাকবে৷ তবে চরম দারিদ্র্য পরিমাপের মানদণ্ড কী? তার হিসেব হয় কিভাবে? চরম দারিদ্র্যরেখা থেকে বেরিয়ে এসেছে মানেটা কী? সবার ক্রয় ক্ষমতা এখন কি বেশি হয়েছে ? একটা বেশি গরু বা সাইকেল কিনতে পারছে? কিভাবে মাপা হচ্ছে এই সূচক? ব্রুকিং ব্লগ সমীক্ষা অনুসারে, তাঁরাই গরিবি রেখার নীচে যাঁদের জীবন ধারণের ব্যয় রোজ ১ দশমিক ৯ ডলার বা তার কম৷ সেই হিসেবে ২০২২ সাল নাগাদ ভারতে চরম দারিদ্র্য রেখার নীচে থাকবে জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ৷ আর ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতে গরিবি রেখা বলে কিছু থাকবে না৷ একেবারেই মুছে যাবে৷ গরিবি রেখার এই হিসেব কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতিবিদের হিসেবের সঙ্গে মেলে না৷ হিসেব নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন৷ যেমন, বিশিষ্ট ভারতীয় অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ ব্রুকিং ব্লগের এই হিসেবকে আমলই দিলেন না৷ ডয়চে ভেলের কাছে তাঁর সোজাসাপটা উত্তর, ‘‘যেসব অকাট্য তথ্য কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না, তা হলো ভারতের জাতীয় নমুনা সমীক্ষা যেটা সর্বশেষ হয়েছিল ২০১১-১২ সালে৷ আরেকবার হবে ২০১৮-১৯ সালে৷ এর বাইরে দারিদ্র্য কতটা কমবে বা না কমবে তা সবই অনুমানভিত্তিক৷ জাতীয় নমুনা সমীক্ষার মতো এত ব্যাপক সমীক্ষা আর কেউ করতে পারেনি৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুঙ্ক্ষানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করে বলেছে ভারতীয়রা কতটা টাকা ব্যয় করতে পারে৷ ক্রয় ক্ষমতা কতটা বেড়েছে সেটা জাতীয় নমুনা সমীক্ষাই সঠিক বলতে পারে৷ মিডিয়া বা অন্যসব সূত্রে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবতাবর্জিত৷ কাজেই বিশ্বাসযোগ্যতা সন্দেহাতীত নয়৷ আমাদের দেশের দারিদ্র্য মাপার কাজ প্রথমে হাতে নেন অধ্যাপক দান্ডেকর এবং অধ্যাপক রথ ১৯৭১ সালে৷ সরকার শুরু করে ১৯৭৮ সাল থেকে৷ গোড়ার দিকে ৫১ শতাংশ দিয়ে দারিদ্র্য মাপার কাজ শুরু হয়৷ সেটা কমতে কমতে এখন দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে৷ তবে এ কথা সত্যি, আমাদের কাজটা শুরু হয়েছিল দেরিতে৷ আমাদের পরে শুরু করে বাংলাদেশ ভালো করেছে৷ আমাদের পরে শুরু করে ভালো করেছে চীন৷ কাজেই ভারতে গরিবি কমছে এটা বলার কোনো মানে হয় না৷ অনেকদিন ধরেই দারিদ্র্যের হার কমছে৷ এর আরেকটা দিক হলো, ভারতে নব্য ধনীদের সংখ্যা অনেক বাড়ছে৷ জানেন কি, ভারতে বিলিয়নেয়ারদের সংখ্যা সবথেকে বেশি৷ প্রতি বছর এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ তার মানে এই নয় যে, ভারতের লোকেরা খেতে-পরতে পাচ্ছে না৷'' ডয়চে ভেলেকে সাফ সাফ বললেন অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ৷ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ এই সমীক্ষায় সায় দিয়ে বলেছেন, ‘‘এটা সম্ভব, কারণ, ১৯৯১ সালের আর্থিক সংস্কারের মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়৷ দারিদ্র্যের হার কমতে থাকে৷'' বলেছেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ফিন্যান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতিবিদ এন. আর ভানুমূর্তি৷ গত ১০ বছরের উন্নয়নের নিরিখে বলা য়ায়, এই গতি ধরে রাখতে পারলে ২০৩০ সাল নাগাদ ভারত চরম দারিদ্র্য রেখা থেকে যে বেরিয়ে আসতে পারবে সেটা বাস্তবসম্মত৷ 

‘ভারতে নব্য ধনীদের সংখ্যা অনেক বাড়ছে’