1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে যাতায়াত বন্ধ, মে মাসের আগে টিকা আসছে না

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ এপ্রিল ২০২১

স্থলপথে ভারত থেকে দুই সপ্তাহের জন্য যাত্রী আসা বন্ধ করছে বাংলাদেশ৷ দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিত রোববার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/3sYDL
স্থলপথে ভারত থেকে দুই সপ্তাহের জন্য যাত্রী আসা বন্ধ করছে বাংলাদেশ৷ দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিত রোববার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷
ভারত-বাংলাদেশ জলপাইগুড়ি সীমান্তছবি: DW/Prabhakarmani Tewari

সোমবার থেকে ১৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত যাত্রী যাতায়াতের জন্য বন্ধ থাকবে৷ মন্ত্রীসভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে রোববার বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে খবর বের হয়৷ এ বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ডয়চে ভেলেকে তিনি দুপুরে বলেন, ‘‘কেবিনেটে সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ তবে বিস্তারিত আমার জানা নাই৷’’

অবশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘ভারতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের নাগরিকদের রক্ষায় সেখান থেকে আপাতত লোক আসা বন্ধ করছি আমরা৷ এটা দুই সপ্তাহের জন্য৷’’ তবে যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ হলেও পণ্যবাহী যান চলাচল এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে বলে জানান মন্ত্রী৷

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল

লকডাউনের কারণে আগেই আকাশপথে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যান চলাচল বন্ধ করা হয়৷ পরবর্তীতে প্রবাসীদের ফেরত পাঠাতে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের আটটি গন্তব্যে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়৷ সেক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে এখন আকাশ ও স্থলপথ দুই ধরনের যাতায়াতের সুযোগই বন্ধ হচ্ছে৷

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে৷ প্রায় প্রতিদিনই রোগী শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে৷ একাধিকবার রূপ বদলানো করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে৷ সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে একে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা৷ এরিমধ্যে দেশটির সঙ্গে যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, ফ্রান্স, ইটালিসহ বিভিন্ন দেশ৷ যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের দেশটিতে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে৷ এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও যাতায়াত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল৷

টিকার জন্য অপেক্ষা

বাংলাদেশে করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেয়া আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এর কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী পাওয়া আস্ট্রাজেনেকার যে টিকা এখত মজুত আছে তাতে এক সপ্তাহর বেশি চলবে না৷ রপ্তানি বন্ধ করায় খুব শিগগিরই নতুন করেও টিকা আসছে না৷

অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রোববার জানিয়েছেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ২১ লাখ ডোজ টিকা পাবে৷ এরমধ্যে ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরামের কাছ থেকে বাংলাদেশের বেক্সিমকো আস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ টিকা আনবে৷ আর বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ টিকা পওয়ার কথা রয়েছে৷

সংকট তৈরি হওয়ায় সম্প্রতি এর বাইরেও নানা সূত্র থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ৷ এরমধ্যে রাশিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশেই তাদের উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সরকার৷ তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে সরকার, যার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘টিকা কূটনীতিতে বাংলাদেশ শুরু থেকেই ভুল পথে হেঁটেছে৷ আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে এখন আমাদের এখানেই করোনার টিকা উৎপাদিত হতো৷ চীন শুরুতেই সেই প্রস্তাব দিয়েছিলো৷ আর ভারত থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আসা বন্ধ হওয়ার পর নতুন যে উদ্যোগগুলো নেয়া হচ্ছে তা এখনো কথার মধ্যেই আছে৷ ফলপ্রসূ কিছু নয়৷’’

ডা. নজরুল ইসলাম

সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে৷ চুক্তি অনুযায়ী প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে গত জানুয়ারি মাসে৷ ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ৷ এরপর সেরাম আর কোনো টিকা পাঠায়নি৷ কথা ছিলো প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে তারা৷ কিন্তু ফেব্রুয়ারি ও মার্চের ৮০ লাখ ডোজ টিকা এখনো আসেনি৷ 

শুধু একটি দেশের উপর নির্ভরশীল থাকার নীতি সঠিক ছিল না বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরীও৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনার টিকার জন্য একক কোনো দেশের ওপর নির্ভর করা ঠিক হয়নি৷ তার ফল এখন আমরা পাচ্ছি৷ আমাদের এখন উচিত হবে খুব দ্রুত আরো কার্যকর উৎসের সাথে যোগাযোগ চূড়ান্ত করা৷’’

বাংলাদেশে চুক্তির বাইরে ভারত সরকারের কাছ থেকে শুরুতেই ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে৷ এছাড়া নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় উপহার হিসেবে পেয়েছে আরো ১২ লাখ৷ ভারতের সেনা প্রধান বাংলাদেশের সেনা প্রধানকে উপহার দিয়েছেন এক লাখ৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ টিকা পেয়েছে এক কোটি তিন লাখ৷ দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব৷

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি৷ এরপর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে৷ এ পর্যন্ত করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট টিকা দেয়া হয়েছে ৭৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৭৬ জনকে৷ তার মধ্যে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮০, আর দ্বিতীয় ডোজ ২১ লাখ ৫৫ হাজার ২৯৬ জন৷ সেই হিসাবে এখন বাংলাদেশে করোনার টিকা মজুদ আছে ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ৷
এই টিকা দিয়ে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব নয়৷ তাই সোববার থেকে প্রথম ডোজের টিকা আর দেয়া হচ্ছে না৷ প্রথম ধাপে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার৷

এদিকে বাংলাদেশে একদিনে করোনায় মৃত্যু আবারো ১০০ ছাড়িয়েছে৷ রোববার ২৪ ঘন্টায় ১০১ জন মারা গেছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান