1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-ইইউ শীর্ষ বৈঠক

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১১ অক্টোবর ২০১৭

নতুনদিল্লিতে অনুষ্ঠিত চতুর্দশ ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়ন শীর্ষ সম্মেলন শেষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ট সহযোগিতা প্রসারিত করার কথা বলা হলেও মুক্ত বাণিজ্যের জট রয়েই গেল৷ কবে খুলতে পারে সেটাও রয়ে গেল অনিশ্চয়তার মধ্যে৷

https://p.dw.com/p/2lcHB
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh

ভারত-ইওরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে এ বছরের শীর্ষ বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিসর ব্যাপকতর করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়৷ বলা হয়, চূড়ান্তকরণের পথে ডেটা সংরক্ষণ ইস্যু প্রধান অন্তরায়৷ ই-ইউ মনে করে, ভারতের ডেটা সুরক্ষা মান ইউরোপীয় স্তরে হওয়া দরকার৷ তবেই ভারত ডেটা সুরক্ষার সন্দেহ দূর করতে পারবে৷ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার মনে করেন, ভারত-ই-ইউ অবাধ ও মুক্তবাণিজ্য ও বিনিয়োগের সর্বোচ্চ কন্ঠস্বর৷ এটা মাথায় রেখে মুক্ত বাণিজ্য এফটিএ চূড়ান্তকরনের এটাই সঠিক সময়৷ এ বছরের শীর্ষ সম্মেলন সেই পথে এগিয়ে যাবার দিশা দেখিয়েছে৷ তবে ই-ইউ ভারতের উপর কোনো শর্ত চাপাতে চায় না, কারণ, ভারতের মর্যাদা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমতুল্য৷

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক সম্মেলন শেষে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাধারণ নাগরিকদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একমাত্র পথ নয়৷ আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের প্রতি আনুগত্যই হলো আসল মাপকাঠি৷ এই প্রসঙ্গে নতুনদিল্লির জার্মান রাষ্ট্রদূত মার্টিন নে'র অভিমত কিছুটা নেতিবাচক৷ তাঁর মতে, ভারত তার সম্ভাবনার সদ্বব্যবহার করতে পারেনি৷ মুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা আবার শুরু করার বিষয়েও ভারত সুনিশ্চিত নয়৷ গত বছরের শীর্ষ বৈঠকে এই ইস্যুতে মোদী সরকার কোনো কথা বলেনি৷ এ বছরেও বলেনি৷ কূটনৈতিক স্তরে এই ধরণের কড়া বার্তায় ইওরোপীয় ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ চাপা থাকেনি৷ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ চুক্তি, সংক্ষেপে বিটিআইএ নিয়ে আলোচনা স্থগিত হয়ে যায় ২০১৩ সালে৷ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে৷ ১৬ দফা বৈঠকের পরও এর জট খোলেনি৷ মোদী সরকার আসার পর এ বছরে আশা জেগেছিল বিটিআইএ ইস্যুতে রাজনৈতিক স্তরে একটা সিদ্ধান্ত হয়ত নেওয়া সম্ভব হবে৷ কিন্ত হয়নি৷ এত দীর্ঘ সময় ধরে বিটিআইএ ঝুলে থাকায় কূটনৈতিক মহল হতাশ৷ উল্লেখ্য, এফটিএ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রেক্সিটের জটিলতা যার কেন্দ্রবিন্দু ব্রিটেন৷

প্রধামন্ত্রী মোদী এফটিআই নিয়ে দু'পক্ষের মতপার্থক্য সযত্নে পাশ কাটিয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার সপ্রশংস উল্লেখ করে বলেন, ভারতের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের উৎসমুখ৷ ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র যাদের দৃষ্টিভঙ্গি বহুমেরু বিশ্ব, আইন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা৷

এই প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাসগুপ্ত মনে করেন না, ডেটা সংরক্ষণ ইস্যু দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তির প্রধান বাধা৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ভারত কতটা ডেটা সুরক্ষিত রাখতে পারবে, সেটার সঙ্গে এফটিএর সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন না৷ ভারতকেও তার ইন্ডাস্ট্রির রক্ষাকবচের কথাও ভাবতে হবে৷ মোদী সরকারের দাবি, ‘মেক-ইন ইন্ডিয়া’ নীতি কার্যকর করা৷ এটা খুবই যৌক্তিক৷ বিদেশিরা ভারতে এসে মূলধনী বিনিয়োগ করুক৷ এখানে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করুক৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্ভবত সেটা মনঃপুত নয়৷ ভারত যেটা চাইছে ই-ইউ হয়ত ততটা দিতে রাজি নয়৷ তারা তাদের লাভ-লোকসান কতটা খতিয়ে দেখবে৷ তারা চাইছে উল্টোটা৷ তাদের দেশে তৈরি পণ্য ভারতের বাজারে রপ্তানি করতে৷ কারণ, ভারতের বাজার, বলা বাহুল্য, পশ্চিম ইউরোপের বাজারের চেয়ে বড়, ডয়চে ভেলেকে বললেন, অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাসগুপ্ত৷

‘ভারতের বাজার পশ্চিম ইউরোপের বাজারের চেয়ে বড়’

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিযোগ চুক্তি ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে চুড়ান্ত ঐকমত্য হয়৷ যেমন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় একজোট হওয়া৷ জঙ্গি সংগঠনগুলির আর্থিক তহবিল রুদ্ধ করা৷ পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি হাফিজ সাঈদ, লস্কর-ই-তৈয়বা, দাউদ ইব্রাহিম, ইসলামিক স্টেট, আল-কায়দার মতো জেহাদি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া৷ জোর দেওয়া হয় স্বচ্ছ এনার্জি, জল বায়ু পরিবর্তন ইস্যু, সমুদ্রপথের নিরাপত্তা ইত্যাদির ওপর৷ পাশাপাশি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক ইআইবি ভারতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে৷ একটি ব্যাঙ্গালুরু মেট্রো রেল প্রকল্পের জন্য বগি ও মেট্রো স্টেশন নির্মাণে ৫০ কোটি ইউরো, অপরটি সৌরশক্তির বিকাশে ৮০ কোটি ইওরো ঋণ দেবে উদার শর্তে৷ এছাড়া স্মার্ট সিটি নির্মাণেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চেয়েছে ইওরোপীয় ইউনিয়ন৷