1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিডিও ফরেনসিক গোয়েন্দার আশ্চর্য ক্ষমতা

২৬ অক্টোবর ২০১৭

সিসিটিভি, সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা, পথচারীদের হাতে মোবাইল কিংবা ভিডিও ক্যামেরা৷ এই সব ভাসা ভাসা, অসংবদ্ধ ফুটেজ জুড়ে অপরাধী ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স৷

https://p.dw.com/p/2mWMS
Symbolbild - Gefängnis
ছবি: Colourbox

ফরেনসিক গোয়েন্দার ক্ষমতা

এক চালক রাস্তায় একটি শিশুকে গাড়ি চাপা দিলেন – শিশুটি মারা গেল, চালক পলাতক৷ একমাত্র হদিশ হল একটি ভিডিও, কিন্তু তাতে তো কিছুই দেখা যাচ্ছে না – নাকি যাচ্ছে?

ভিডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্সের মতে, ‘‘কোনো ভিডিওই অকেজো নয়৷ যতো খারাপই হোক না কেন, সব ভিডিওতেই প্রচুর তথ্য থাকে৷ তবে সেই তথ্য বার করার জন্য সঠিক পদ্ধতি ও পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকা চাই৷''

গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স হলেন একজন ভিডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ৷ তাঁর কাজ হল ভিডিও যতোই ভাসা ভাসা হোক না কেন, তা থেকে আততায়ী বা অপরাধীর চূড়ান্ত হদিশটি খুঁজে বার করা৷

গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স-এর ভিডিও ফরেনসিক ল্যাবরেটরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে – স্পোকেইন নামের ছোট্ট একটি শহরে৷ গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স সিসিটিভি বা সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরার ছবি, অথবা অপেশাদারি ভিডিও ছবি বিশ্লেষণ করে অপরাধী-আততায়ীদের খুঁজে বার করতে সাহায্য করেন৷ 

নাইট ক্লাবে হত্যাকাণ্ড

একটি উদাহরণ: একটি নাইট ক্লাবে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটার সময় এই ভিডিও ফুটেজগুলি তোলা হয়৷ একজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে বটে, কিন্তু এই ভিডিও ছবিগুলি ছাড়া কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷ গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স দেখালেন, ‘‘এখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার এক বন্ধু নাইট ক্লাবে ঢুকছে৷ সম্ভাব্য আততায়ী একটি খোলা-গলা ডোরাকাটা শার্ট পরে আছে – তিনটি কালো ডোরা দেখা যাচ্ছে৷ ওর টুপিটাও লক্ষ্য করা দরকার: টুপির সামনে একটা গোলাকার ব্যাজ লাগানো আছে৷''

ভিডিও ফরেনসিক গোয়েন্দা গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স প্রথমে সন্দেহভাজন ব্যক্তির জামাকাপড় বিশ্লেষণ করেন; তারপর তিনি সমস্ত ভিডিও ফুটেজ সাজিয়ে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত কী ঘটেছে, তা বোঝার চেষ্টা করেন৷

গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স দেখালেন, ‘‘আমরা ওকে ট্র্যাক করতে পারি৷ ও প্রথমে বাথরুমে ছিল৷ একটা ক্যামেরা ভিউ থেকে আরেকটা ক্যামেরা ভিউতে গেলে আমরা হত্যাকাণ্ডের কয়েক মুহূর্ত আগে পর্যন্ত দেখতে পাই৷ এটা এর বন্ধু, কাজেই ও চলে যাবার মুখে, ও এবার বেরোবে ও বন্দুক থেকে গুলি চালানো হবে৷ এখানে গুলিচালক গুলি চালানোর পর বেরোচ্ছে৷ ওর মুখের কোনো ছবি নেই, কিন্তু আমরা ওকে বেরোতে দেখছি৷ জামাকাপড় বিশ্লেষণ করে আমরা দেখাতে পারছি যে, যে ব্যক্তি ঢুকেছিল আর যে গুলিচালক পিছন দিক দিয়ে বেরোচ্ছে, তারা একই লোক৷'' 

গাড়ি দুর্ঘটনা, চালক পলাতক

ভাসা ভাসা ও গোড়ায় অসংবদ্ধ ভিডিও ফুটেজ থেকে এভাবেই হত্যাকারী ধরা যায়৷ আরেকটি উদাহরণ: রাস্তায় একটি শিশু গাড়ি চাপা পড়ল – পলাতক চালককে পরে ধরা সম্ভব হলেও, তাকে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷ একমাত্র হদিশ হল একটি সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরার এই ছবি৷

গ্র্যান্ট ফ্রেডরিক্স বললেন, ‘‘তদন্তকারীরা গাড়ির নম্বরটা দেখতে চেয়েছিলেন; ছবিতে সেটা না থাকলেও, আরো অনেক তথ্য আছে৷ এক্ষেত্রে গাড়ির হেডলাইটের আলোটা রাস্তায় কীভাবে পড়েছে ও ছড়িয়েছে, তার ছবি৷ প্রতিটি গাড়ির হেডলাইটের স্প্রেড প্যাটার্ন বা আলো ফেলার ধরণ আলাদা৷ এটাই হল সেই গাড়ি৷ এর তিনটি আলোর বিম রাস্তায় গিয়ে পড়েছে৷ প্রতিটি বিম পরিমাপ করা সম্ভব৷ গাড়ির হেডলাইটের আলো হল গাড়ির ফিঙ্গারপ্রিন্ট৷''

অকুস্থলে ঐ একই মডেলের তিনটি গাড়ি ও তাদের হেডলাইট নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব হল যে, শুধু অপরাধীর গাড়ির হেডলাইটের স্প্রেড প্যাটার্ন নজরদারি ক্যামেরার ছবির সঙ্গে মেলে৷ এরই নাম ভিডিও ফরেনসিক্স৷

শুধু পিক্সেল বা অন্যান্য ক্যামেরার তথ্য দিয়েই যে ভিডিও ফরেনসিক্স-এর গোয়েন্দারা কাজ করেন, এমন নয়: কোথায় যেন তাদের মধ্যে আজও শার্লক হোমস লুকিয়ে রয়েছেন৷

প্রতিবেদন: পেট্রা স্টাইন/এসি