1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট ইস্যুতে ক্ষুব্ধ ইটালি প্রবাসীরা

২৮ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির প্রভাব পড়েছে ইটালিতে৷ দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে তাদের প্রতি ইটালীয়দের মানসিকতায় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন৷ কেউ কেউ প্রবাসীদের আখ্যা দিচ্ছেন ‘ভাইরাল বোমা’৷

https://p.dw.com/p/3g3Vy
বাংলাদেশে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির প্রভাব পড়েছে ইটালিতে৷ দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে তাদের প্রতি ইটালীয়দের মানসিকতায় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন৷ কেউ কেউ প্রবাসীদের আখ্যা দিচ্ছেন ‘ভাইরাল বোমা’৷
ছবি: DW/A. Islam

২৫ বছর বয়সি রাকিব হাসান কয়েকবছর ধরেই ইটালির রাজধানী রোমে বসবাস করছেন৷ ইউরোপের দেশটির সংস্কৃতির সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন তিনি৷ ডয়চে ভেলের প্রতিবেদকের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি করোনা টেস্ট করাতে রোমের এক হাসপাতালের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তিনি জানান, বাংলাদেশে করোনা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারি তার মতো অনেক প্রবাসীর জীবন জটিল করে তুলেছে৷

রাকিব হাসান বলেন, ‘‘আমি সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ভ্রমণ করিনি৷ তারপরও আমি যে রেস্তোরাঁয় কাজ করি সেটির মালিক আমাকে করোনা টেস্ট করতে বলেছেন৷ এটা এখন বাধ্যতামূলক৷’’ করোনা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারি ভূমধ্যসাগরীয় দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে বলেও জানান তিনি৷

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন নেতা এবং একটি হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদ কয়েক হাজার মানুষকে ভূয়া করোনা সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন বলে গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে৷ ইটালির গণমাধ্যমের কাছেও বিষয়টি অজানা নয়৷ শাহেদকে যদিও এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে বলেই মনে করছেন ইটালি প্রবাসীরা৷

গত ৬ জুলাই ঢাকা থেকে এক বিশেষ ফ্লাইটে ইটালিতে আসেন ২২৫ জন অভিবাসী বাংলাদেশি৷ বিমানবন্দরে প্রাথমিক পরীক্ষায় তাদের মধ্যে ২১ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে৷ পরবর্তীতে পরীক্ষায় সেই ফ্লাইটে আসা মোট ৪৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতির কথা জানা যায়৷ পজেটিভ ধরা পড়া কারো কারো কাছে ভুয়া করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছিল৷ আর সেই ঘটনা ইটালির গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে৷

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেই ঘটনার পর বাংলাদেশি যাত্রীবাহী একটি বিমান ইটালিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ইটালি কর্তৃপক্ষ৷ একইসঙ্গে বাংলাদেশসহ কয়েকটি সেনজেনভুক্ত নয় এমন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যে সেসব দেশ থেকে কেউ ইটালিতে প্রবেশ করতে পারবেন না৷ এই নিষেধাজ্ঞার বর্তমান মেয়াদ ৩১ জুলাই পর্যন্ত৷

ইটালিতে বাংলাদেশিদেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ, চলছে করোনা পরীক্ষা

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিব্রত, ক্ষুব্ধ

ইটালিতে লক্ষাধিক বাংলাদেশি বৈধভাবে বসবাস করে৷ তাদের মধ্যে ৩০ হাজারের মতো অভিবাসীর অবস্থান রোমে৷ এছাড়া দেশটিতে আরো ৪৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি অবৈধভাবে রয়েছেন বলেও জানা গেছে নানা সূত্র থেকে৷ ইটালি প্রবাসীরা মূলত দেশটির পর্যটন, রেস্তোরাঁ, নির্মাণ এবং কৃষিখাতে কাজ করছেন৷

রোমে ১৩ বছর বয়স ধরে বসবাসরত বাংলাদেশি পেশাজীবী মোহাম্মদ হাবিব বলেন, ‘‘আমরা এই মুহূর্তে ইটালিতে ইমেজ সংকটে ভুগছি৷ আর এজন্য আমরাই দায়ী৷’’

ইটালির এক ঊধ্বর্তন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে আসা ফ্লাইটটিকে একটি ‘‘ভাইরাল বোমার'' সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ তাঁর সেই তুলনা পরবর্তীতে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়৷ ফলশ্রুতিতে কোনো কোনো ইটালীয় বাংলাদেশিদেরকে দেখলে ‘ভাইরাল বোমা' বলে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে বসবারত বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা৷ ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে তারা সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিব্রত এবং ক্ষুব্ধ৷  

মিলানে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল ইকবাল আহমেদ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ঢাকা থেকে ছয়টি বিশেষ ফ্লাইটে ইটালি আসা ১৬০০ বাংলাদেশির মধ্যে ১৫০ জন করোনা পজেটিভ বলে জানা গেছে৷

‘‘তাদের সংস্পর্শে এসে আরো কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ সংক্রমণের এই রেট এত বেশি যে তা ইটালির মূলধারার গণমাধ্যম এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷’’

ইকবাল আহমেদ অবশ্য জানান যে রোমের বিমানবন্দরে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখানোর কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না৷ তাসত্ত্বেও কিছু বাংলাদেশি নিজের আগ্রহ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষকে তাদের সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন৷

রোমে প্রবাসীদের জন্য বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোমে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে করোনা পরীক্ষা করতে অনুরোধ করেছে ইটালির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ৷ আর এই পরীক্ষা তারা করতে পারছেন বিনা খরচায়৷ রোমের তিনটি হাসপাতালে আলাদাভাবে এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে৷

মোহাম্মদ রশীদ মিয়া গত পহেলা জুলাই ঢাকা থেকে এক বিশেষ ফ্লাইটে রোমে পৌঁছান৷ এরপর তিনি প্রায় তিন সপ্তাহ ঘরে কাটিয়েছেন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী৷ তবে সবাই তারমতো নিয়ম মানেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘ঢাকা থেকে ফেরার পর আমাদের দুই সপ্তাহ ঘরে থাকতে বলেছিল ইটালি কর্তৃপক্ষ৷ আমি সেই নিয়ম মেনেছি, কিন্তু অনেকে মানেননি৷ তাদের কারণে এখন আমাদের সবার ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে৷''

রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার অবশ্য বাংলাদেশ-ইটালি সম্পর্কের উপর করোনা কেলেঙ্কারির কোন প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন না৷ ডয়চে ভেলেতে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং ইটালির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে৷ সেই সম্পর্কে সাম্প্রতিককালে কোন চিড় ধরেছে বলে আমি মনে করিনা৷ ইটালীয়রা বাংলাদেশি অভিবাসীদের পছন্দ করেন৷’’

আপাতত ৩১ জুলাই অবধি বাংলাদেশ থেকে কেউ ইটালিতে প্রবেশ করতে পারছেন না৷ তবে, এই নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হবে কিনা সেই বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি৷

আরাফাতুল ইসলাম, রোম থেকে ফিরে

১০ জুলাইর ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান