1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভুয়া খবর’ যেভাবে তৈরি হয় ও ছড়ায়

৬ জানুয়ারি ২০১৭

জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে নববর্ষ উদযাপনের রাতে উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা উদ্বাস্তুরা একটি প্রাচীন গির্জায় আগুন ধরিয়েছে- এমন একটি খবর যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রিয়া হয়ে জার্মানিতে ফিরে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে৷ অথচ খবরটি পুরো ভুয়া!

https://p.dw.com/p/2VOlx
Screenshot Breitbart.com Fake News
‘ব্রাইটবার্ট.কম’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই খবরটি ঠিক নয়ছবি: Breitbart.com/Screenshot

নিউ ইয়ার্স ইভে ডর্টমুন্ডের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ ছিলেন৷ বাজি পুড়েছে, কিছু কিছু গোলমালও হয়েছে - যেমনটা অনেক সময়ই হয়ে থাকে৷

সেই খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্রাইটবার্ট.কম’ ওয়েবসাইটের হাতে পড়ে শিরোনাম পেয়েছে, ‘‘নিউ ইয়ার্স ইভে ১,০০০ মানুষের দঙ্গল পুলিশকে আক্রমণ করেছে ও জার্মানির প্রাচীনতম গির্জায় আগুন ধরিয়েছে৷’’

ব্রাইটবার্ট.কম-এর বিবরণটির লেখিকা তাঁর সূত্র হিসেবে ডর্টমুন্ডের ‘রুর নাখরিশটেন’ পত্রিকার নাম করেছেন৷ ব্রাইটবার্টের বিবরণ অনুযায়ী, প্রায় এক হাজার তরুণ, যাদের মধ্যে উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত উদ্বাস্তুদের একটি বড় অংশ ছিল, তারা প্রথমে অপরাপর দর্শক ও পরে পুলিশের দিকে, এবং শেষে রাইনহোল্ড গির্জার দিকে বাজি ছোঁড়ে৷ এর ফলে নাকি গির্জার ছাদে আগুন ধরে যায়৷ ওই সময় নাকি একদল সিরীয় আবার সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি উপলক্ষ্যে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিচ্ছিল ও আল-কায়েদার পতাকা ওড়াচ্ছিল৷ ব্রাইটবার্টের প্রতিবেদক এমনটিই জানিয়েছেন৷

কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাদে খুঁটিনাটিগুলো ‘প্রায়’ ঠিক৷ যেমন গির্জার ছাদে আগুন ধরানো হয়নি, শুধু একটি হাউই গির্জার চূড়ার চারপাশে যে ভারা বাঁধা ছিল, তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় ও দমকল সে আগুন শীঘ্রই নিভিয়ে ফেলে৷ একদল সিরীয় সত্যিই আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়েছিলেন, মুসলিমদের পক্ষে যা স্বাভাবিক৷ তবে রাইনহোল্ড গির্জা জার্মানির প্রাচীনতম গির্জা নয়৷

ব্রাইটবার্ট.কম যুক্তরাষ্ট্রের ‘অল্ট-রাইট’ বা ‘বিকল্প দক্ষিণপন্থি’ আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাইটবার্ট নিউজের সাবেক প্রধান স্টিভ ব্যানন’কে ২০১৬-র আগস্ট মাসে তাঁর নির্বাচনি প্রচার অভিযানের মুখ্য কর্মকর্তা করার পর সম্প্রতি ব্যাননকে তাঁর ‘চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট’ বানিয়েছেন৷

ব্রাইটবার্ট ডর্টমুন্ডের ঘটনার ‘অল্ট-রাইট’ সংস্করণ প্রকাশ করার পর, প্রথম জার্মান ভাষাভাষী পত্রিকা হিসেবে অস্ট্রিয়ার ‘ভোখেনব্লিক’ পত্রিকা ব্রাইটবার্টের প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ ‘ভোখেনব্লিক’-এর শিরোনাম ছিল, ‘‘ডর্টমুন্ডে নিউ ইয়ার্স ইভ: ‘আল্লাহু আকবর' ও গির্জায় আগুন৷’’ এমনকি ‘ভোখেনব্লিক’-এর মতে ‘রুর নাখরিশটেন' নাকি ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব না দেবার চেষ্টা করেছে৷

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফেক নিউজ’ কিভাবে ছড়াতে পারে, ডর্টমুন্ডের ঘটনা তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল৷ ব্রাইটবার্ট ও ভোখেনব্লিকের খবরগুলো শত শত বার শেয়ার করা হয়েছে৷ আরো বড় কথা, ডর্টমুন্ড থেকে নির্বাচিত ফেডারাল সাংসদ টর্স্টেন হফমান পর্যন্ত শেষমেশ তাঁর বিবৃতিতে রাইহোল্ড গির্জার উপর ‘গুলি চালানোর’ কথা বলেছেন৷

রুর নাখরিশটেনের যে রিপোর্টার বর্ষশেষের রাত্রিতে ডর্টমুন্ডে ছিলেন, তাঁর কাছে এখন ফাঁসির কাঠগড়া, কাটামুণ্ডু ইত্যাদির ছবি পৌঁছচ্ছে টুইটারের মাধ্যমে৷ অপরদিকে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুণ্ডুপাত কামনা করা হচ্ছে৷ অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ডর্টমুন্ড পুলিশ নিউ ইয়ার্স ইভে তাদের নিয়োগের বৃত্তান্ত প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে, যার মূল বক্তব্য হলো, ‘‘নিউ ইয়ার্সের রাত্রে কোনো চোখে পড়ার মতো বা চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর আজ পর্যন্ত আমাদের (অর্থাৎ পুলিশের) কাছে আসেনি৷’’

এসি/এসিবি (ডিপিএ, রুর নাখরিশটেন, ডি ভেল্ট)

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য