1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভূস্বর্গ কাশ্মীর পরিবেশ দূষণের শিকার

৯ জুলাই ২০১০

কবি সুকান্তের একটি কবিতা আছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর নিয়ে- ‘সেই বিশ্রী দম-আটকানো কুয়াশা আর নেই, নেই সেই একটানা তুষার-বৃষ্টি, হঠাৎ জেগে উঠেছে- সূর্যের ছোঁয়ায় চমকে উঠেছে ভূস্বর্গ৷’ কিন্তু এই কাশ্মীরের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে৷

https://p.dw.com/p/OFCF
কাশ্মীরের সৌন্দর্য হুমকির মুখেছবি: picture-alliance/ dpa

কাশ্মীরে পর্যটকদের কাছে এখনো হাউসবোটগুলো সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয়৷ স্বচ্ছ নীল রঙের পানিতে ভাসমান ঘর৷ পাশের পাহাড়ে শ্বেতশুভ্র বরফ৷ শুনশান রাত৷ সুন্দর ভোর৷ ‘নৌকা ঘরে' নিজের সময়৷ কি যে সুন্দর সেই দিন, রাত৷ সময় সেখানে কেটে যায় দ্রু৷ ভালো সময় নাকি চলে যায় দ্রুত, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা কোনো নবদম্পতির মধুর মুহূর্তগুলো! ভারতশাসিত কাশ্মীরের হাউসবোটগুলো একরকম স্বপ্নের মতোই সুন্দর মনে হতো এক সময়৷ চলতি সময় নাকি এই অবস্থা বেশ পাল্টে গেছে৷ পুরোনো ঐতিহ্য আর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে ডাল লেকের হাউস বোটগুলো৷ সঙ্গে যোগ হয়েছে দূষণ৷

বলা হচ্ছে, ডাল লেকের অন্যতম শোভা ছিল হাউসবোট, পরিবেশ দূষণের ফলে সেই ডাল লেকের অবস্থা আজ শোচনীয়৷ আর এই দূষণের কারণেই ভূস্বর্গ হিসেবে খ্যাত সেই বরফে ঢাকা কাশ্মীরকে এখন আর চেনাই যায় না৷ কাশ্মীরের বেশির ভাগ এলাকাই এখন দুর্গন্ধ আর আবর্জনায় ভরা৷ ঠিকঠাক মতো পানি নিষ্কাশনের অভাবে ডাল লেক এখন আবর্জনায় ভরে গেছে৷ পলিব্যাগে করে মৃত পশুপাখি ফেলে রাখা হয় এখানে-সেখানে৷

হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কর্মকর্তা মঞ্জুর ওয়াগনু ডাল লেককে দূষণমুক্ত করতে চান৷ তাঁর মতে, হাউসবোট ছাড়া ডাল লেকের সৌন্দর্য যেমন অসম্পূর্ণ, তেমনি এই হ্রদবিহীন হাউসবোটের সৌন্দর্যও অর্থহীন৷ তাই ভূস্বর্গ কাশ্মীরের প্রধান দুই আকর্ষণকেই বাঁচিয়ে রাখতে চান মঞ্জুর৷

তবে দূষণে যে ডাল লেক ছোট হয়ে আসছে, তা স্বীকার করেননি লেকস অ্যান্ড ওয়াটারওয়েস ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির প্রধান ইরফান ইয়াসিন৷ তিনি আশ্বাস দেন, আর কয়েক মাসের মধ্যেই হ্রদটিতে সব ধরনের সংস্কার করা হবে৷ লেকে বর্জ্য না ফেলার জন্যও তিনি মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন৷ তবে হাউসবোট শিল্প রক্ষায় অনেক দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে কাশ্মীর সরকার৷ তবে এখন বেশির ভাগ হাউসবোটেরই জীর্ণ দশা৷ ৩০টিরও বেশি হাউসবোটের মালিক এখন তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করতে চান৷ দারিদ্র্য ও অর্থাভাবের কারণেই তারা বোটগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে৷ তাই অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো পুরোপুরি হারিয়ে যাবে কাশ্মীরের হাউসবোট শিল্প৷

সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই পর্যটক প্রিয় কাশ্মীরের ডাল লেকের (হ্রদ) হাউসবোট৷ তবে এখন এই হাউসবোট শিল্প এখন হুমকির মুখে৷ এই শিল্পের প্রয়োজনীয় সংস্কার আর উন্নয়নও সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে আশার কথা, কাশ্মীর সরকার হাউসবোট সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে৷ ‘বোট' শিল্পের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার৷ সেই সঙ্গে পর্বতারোহীদের জন্য সুখবরও দিয়েছে তারা৷ জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো হিমালয় রাজ্য কাশ্মীরের একশ'টিরও বেশি পর্বতশৃঙ্গ বিদেশি পর্বতারোহীদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে৷ কর্মকর্তারা বলেন, কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে গতি আনতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তাদের মতে, ৬০ শতাংশ কাশ্মীরিই পর্যটন শিল্পের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে৷ ভারত সরকার যেসব পর্বত শৃঙ্গ বিদেশি পর্বতারোহীদের জন্য উন্মুক্ত করবে সেগুলোর বেশিরভাগই লাদাখের পূর্বাঞ্চলীয় কারাকোরাম পর্বতে অবস্থিত৷ এসব শৃঙ্গের উচ্চতা ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার আটশ' মিটার৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক