1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভেষজ লতাপাতার দিকে ঝুঁকছে জার্মানরা

২৩ মে ২০১১

আচ্ছা কেউ যদি বলে গোলাপ ফুলের আচার খেতে দারুণ লাগে – তাহলে কেমন শোনাবে? গোলাপ ফুলের আচার অথবা গোলাপ ফুলের জুস! হ্যাঁ, স্টুটগার্টের ‘স্লো ফুড'-এর মেলায় গোলাপ ফুলের বিভিন্ন খাবার সবার মন কেড়েছে৷

https://p.dw.com/p/11LWX
‘ফাস্ট ফুড’এর পর এবার ‘স্লো ফুড’এর রমরমাছবি: Slow Food/Stefan Abtmeyer

মেলায় আরো বলা হচ্ছে সুস্থ থাকতে চাইলে ঝুঁকে পড়তে হবে বিভিন্ন ধরণের ফুল, লতা-পাতা আর উদ্ভিদের দিকে৷ খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে জার্মানিতে ইদানিং একটি প্রবণতা লক্ষ্য করার মত৷ আর তা হল কোন ধরণের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না খাবার উৎপাদন করা৷ পরিবেশ বান্ধব এসব সব্জি এবং ফলমূল সংক্ষেপে ‘বিয়ো' নামে পরিচিত৷ দামও তুলনামূলকভাবে একটু বেশি৷

Deutschland Slow Food Messe Stuttgart Logo
স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত হল ‘স্লো ফুড মেলা

ফাস্ট ফুড নয় এবার স্লো ফুডের পালা

সম্প্রতি স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত হল ‘স্লো ফুড মেলা'৷ প্রায় চারশো বিভিন্ন খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছিল এই মেলায়৷ সব খাবারের বৈশিষ্ট্য ছিল– সবই ঘরে তৈরি, কোন খাবারে কৃত্রিম কোন রং বা সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়নি৷

‘স্লো ফুড' প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করা হয় ১৯৮৬ সালে ইটালিতে৷ বিশ্বের ১৩০ টি দেশে রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার সদস্য৷ জার্মানিও পিছিয়ে নেই এই ‘স্লো ফুড ট্রেন্ডে'৷

রাইনহোল্ড স্নাইডারের গোলাপ ফুলের প্রতি আসক্তি আছে৷ সে এই মেলায় উপস্থিত হয়েছে কয়েক গোছা গোলাপ ফুল নিয়ে৷ অন্যান্য সব খাবারের পাশে শোভা পাচ্ছে গোলাপ ফুলের তৈরি বিভিন্ন খাবার, সিরাপ, জুস, জেলি আর ভিনেগার৷ রাইনহোল্ড বললেন,‘‘প্রায় ১৫ বছর আগে আমি এই গোলাপ ফুলের গাছ লাগিয়েছিলাম৷ আমি নিজে এই গোলাপ ফুল খেয়ে দেখেছি৷ আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং বন্ধু-বান্ধবদেরও গোলাপ ফুল খেতে দেই৷ সবাই বেশ পছন্দ করে৷ এরপর আমি গোলাপ গাছের সংখ্যা বাড়াই৷ আমি শুরু করেছিলাম মাত্র তিনটি গোলাপের চারা দিয়ে৷ এখন আমার সংগ্রহে প্রায় আড়াই হাজার গোলাপ গাছ৷''

Achtung: Nur für Berichterstattung über Slow Food - Tomaten
পরিবেশ বান্ধব সব্জি এবং ফলমূল খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছেছবি: Slow Food/Stefan Abtmeyer

কী কী তৈরি করা যায় গোলাপ ফুল দিয়ে?

গোলাপের চাষ করার আগে রাইনহোল্ড বিভিন্ন ধরণের ভেষজ-উদ্ভিদের চাষ করতেন৷ সেই সঙ্গে ছিল বিভিন্ন ধরণের ফল৷ গত কয়েক বছরে সে পুরোপুরি ঝুঁকেছে গোলাপ ফুলের প্রতি৷ গোলাপের প্রতি প্রচণ্ড ভালাবাসা তাঁর রয়েছে৷ গোলাপ ফুলের সুগন্ধ শুধু তাকে মুগ্ধ করেনি, ফুলের বিভিন্ন গুণ সে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী৷ তিনি আরো জানান,‘‘অনেক কিছুই তৈরি করা যায় গোলাপ ফুল দিয়ে৷ জ্যাম, জেলি, ভিনেগার সবকিছুই৷ যদি আরো আকর্ষণীয় কিছু তৈরি করার কথা ভাবা হয় তাহলে তা হতে পারে গোলাপের নির্যাস থেকে তৈরি শ্যাম্পেইন৷ যে বোতলে শ্যাম্পেইন বিক্রি করা হবে সে বোতলেই ফার্মান্টেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি রয়েছে গোলাপ ফুলের জুস এবং সিরাপ৷ আরো আছে রোজলিকর বা গোলাপ মদিরা৷ ইদানিং একটি কোম্পানি এই গোলাপ ফুল মিশিয়ে দই তৈরি করারও চেষ্টা করছে৷''

Carlo Petrini Gründer Slow Food
‘স্লো ফুড’ আন্দোলনের স্রষ্টা কাল্রো পেত্রিনিছবি: AP

আগাছা উপড়ে ফেলার আগে একবার খেয়ে দেখ!

বিভিন্ন ধরণের ফুল আর ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করছেন ফ্রাঙ্ক ফ্রিডরিশ৷ তিনি বাস করেন ফ্রাঙ্কফু্র্টের কাছে বাড কামব্যার্গ শহরে৷ বারো বছর আগে তিনি খুব কঠিন একটি রোগে আক্রান্ত হন৷ যখন কোন ওষুধই কাজ করছিল না তখন তাঁকে খাওয়া-দাওয়ার রুটিনে পরিবর্তন আনতে বলেন চিকিৎসক৷ তাঁকে শুধু ভেষজ উদ্ভিদ জাতীয় খাবার খাওয়ানো হয়৷ তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন৷ এখন পর্যন্ত ফ্রাঙ্কের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ এবং নানা প্রকারের বীজ প্রাধান্য পাচ্ছে৷ স্টুটগার্টের এই মেলায় তিনি চেয়েছেন সবাই প্রাকৃতিক এসব খাবারের স্বাদ গ্রহণ করুক৷ ফ্রাঙ্ক বললেন,‘‘এই প্লেটে সব ধরণের উদ্ভিদ রয়েছে যা খাওয়ার যোগ্য৷ আর এসব ভেষজ উদ্ভিদ আমাদের আশেপাশেই জন্মাচ্ছে৷ বাগানেই দেখা যাবে৷ অনেকেই এগুলোকে আগাছা মনে করে উপড়ে ফেলে৷ আমি বলি, আগে খেয়ে দেখ, স্বাদ কেমন, শরীরকে সুস্থ করে কিনা৷ দেখবে আগাছা পরিণত হয়েছে খাদ্যে৷ আমি বেশ জোর দিয়েই বলতে পারি এগুলো কখনোই বিষাক্ত নয়৷ আমি গত বারো বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের ঊদ্ভিদ আর বীজ খেয়ে বেঁচে আছি, সুস্থ আছি৷''

তবে মেলায় যারা এসেছিলেন, তারা ফুল এবং বিভিন্ন ধরণের ভেষজ উদ্ভিদ খাদ্য তালিকায় রাখবেন কিনা তা জানাননি৷ এটা রুচির ব্যাপার বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন৷ তবে অনেকেই বলেছেন, বিভিন্ন ধরণের বীজ তারা খান, মটরদানা এবং সীমের বীজ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷ তবে তারা সব ধরণের খাবার চেখে দেখেছেন৷ হয়তো ভবিষ্যতে তাদেরই অনেকে ঝুঁকে পড়বে এধরণের খাবারের প্রতি৷ কারণ সবাই তো সুস্থ থাকতেই চায়৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক