1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোট আছে, তবু কেন অধিকার নেই?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১২ এপ্রিল ২০২১

আমাদের কথাও ভাবুন৷ কেন নির্বাচনী ইস্তেহারে আমাদের জন্য কোনও প্রতিশ্রুতি নেই?প্রার্থীদের কাছে সরাসরি জানতে চাইলেন কলকাতার যৌনকর্মীরা, সমকামী ও রূপান্তরকামীরা৷

https://p.dw.com/p/3rspt
Indien Kalkutta | Protest von Sexarbeitern
ছবি: Payel Samanta/DW

ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দলই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দেয় তাদের ইস্তেহারে৷ সংখ্যালঘু, দলিত, আদিবাসী, সমাজের প্রায় সবকটি প্রান্তিক অংশের উন্নয়নে নানা গালভরা কথা৷ কিন্তু সেটুকুও থাকে না তাদের জন্যে৷ অথচ ভোটের হিসেবে সংখ্যাটা নেহাত কম নয়৷ সারা রাজ্যে প্রায় ৬০ হাজার নথিভুক্ত যৌনকর্মী আছেন, যারা ভোট দেন৷ তাদের মধ্যে ৩০ হাজার শুধু কলকাতাতেই৷ পরিবারের সদস্যদের ধরলে লাখ খানেক ভোট৷ ফলে স্থানীয় প্রার্থীরা ভোট চাইতে আসেন ঠিকই, কিন্তু যৌনকর্মীদের স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু করার কথা কখনও বলেন না৷ এবার তাই সরব হয়েছেন ওঁরা৷ প্রার্থীদের সরাসরি চিঠি লিখে যৌনকর্মীদের দীর্ঘদিনের বকেয়া দাবি–দাওয়া সামনে তুলে ধরছেন৷ তার মধ্যে দুটি দাবি বহুদিনের৷ অনৈতিক যৌনতা রোধে যে Immoral Traffic Prevention Act ভারতে বলবৎ আছে সেই ১৯৫৬ সাল থেকে, যা স্বেচ্ছা যৌন বৃত্তিকেও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে, সেই আইনের ধারাগুলির সংশোধন৷ যাতে যৌনকর্মীরা দিনরাত প্রশাসনিক চোখরাঙানির সামনে না পড়েন৷ যৌন পেশাকে তাঁরা আর পাঁচটা বৃত্তির মতোই বেছে নিতে পারেন৷ এবং সরকারের শ্রম তালিকায় যৌন পেশাকে অন্তর্ভুক্ত করা৷ এও যৌনকর্মীদের বহু পুরনো দাবি৷

কাজল বোস

কিন্তু এক লাখ ভোট নিয়ে আর্জি, অনুরোধের রাস্তায় না হেঁটে ভোট বয়কটের মতো কড়া পদক্ষেপ নিলে কি বেশি কাজ হতো না?যৌনকর্মীদের ছাতা–সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি'–র সচিব কাজল বোস এই প্রশ্নের উত্তরে সাফ বললেন, রীতিমত লড়াই করে ভোট দেওয়ার যে অধিকার তারা অর্জন করেছেন, তাঁরা তা হাতছাড়া করতে চান না৷ ‘‘ভোট আমরা দেব৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, যে এলাকাগুলো ‘স্পর্শকাতর' হিসেবে ঘোষণা করা হোক, যাতে ৯০% লোক আমরা ভোট দিতে পারি৷''বললেন কাজল বোস৷ সুপ্রিম কোর্ট অবধি লড়াই করে আদায় হওয়া নাগরিক অধিকার যৌনকর্মীরা প্রয়োগ করতে বদ্ধপরিকর৷   

যৌনকর্মীদের সঙ্গে এবার আর্জি জানিয়েছেন সমাজের আরও এক প্রান্তিক অংশ৷ তারা কেউ সমকামী, কেউ উভকামী, আবার কেউ লিঙ্গান্তরিত মানুষ৷ শুক্রবার কলকাতার সোনাগাছি যৌনপল্লীর লাগোয়া দুর্বার–এর দপ্তরে এরা এক সমবেত সভার মাধ্যমে নিজেদের আর্জি জানিয়েছেন৷ বলেছেন, সমকামী ও রূপান্তরকামী মানুষ যাতে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে সমান সুবিধা পান, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে যাতে তাদের জন্য আসন সংরক্ষিত হয়, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা যাতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও পান, তার দায়িত্ব নিতে হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে৷

কিন্তু সমস্যা হল, তৃতীয় লিঙ্গকে জনজীবনের মূল ধারার অংশ করতেই রাজি নয় যে সমাজ, বা যৌন পেশা এখনও যে সমাজের নজরে ঘৃণ্য কাজ, সেখানে এই আবেদন–নিবেদন কতটা ফলপ্রসূ হবে?এর আগেও বহুবার এই একই দাবি তোলা হয়েছে প্রশাসনের কাছে, কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি৷ তবু তাদের অভিযোগ, তাদের ন্যায্য দাবি আরও একবার নথিবদ্ধ হয়ে রইল, সেটাই সম্ভবত একমাত্র সান্ত্বনা৷