1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয়ংকর দেখতে হলেও ব্রুটালিস্ট স্থাপত্যের কদর বাড়ছে

১ জুলাই ২০২১

স্থাপত্য কি সবসময়ে মনোরম হতে হবে? ব্রুটালিজম নামের স্থাপত্যশৈলি সেই ধারণা চ্যালেঞ্জ করে বিকট সব ভবন তুলে ধরছে৷ তবে এমন স্থাপত্যের নেপথ্য কাহিনি, ইতিহাস ও বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা বেশ রোমহর্ষক হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/3vrVd
Bildergalerie Brutalismus in Jugoslawien
ছবি: Reuters/M. Djurica

বিশাল আকার, বিবর্ণ এবং মানববিরোধী – ব্রুটালিজম ধারার স্থাপত্যশৈলিমেরুকরণ সৃষ্টি করে৷ ফলে অনেকেই এমন ধারা অপছন্দ করেন৷ কিন্তু গোটা বিশ্বে স্থাপত্য সম্পর্কে উৎসাহী অনেক মানুষ নতুন করে ব্রুটালিজমের মাহাত্ম আবিষ্কার করছেন৷ স্থাপত্যের ইতিহাসবিদ হিসেবে ফেলিক্স টর্কার এই শৈলির আকর্ষণ তুলে ধরেন বলেন, ‘‘বৈপরিত্য ও বিতর্কের কারণেই আমার কাছে ব্রুটালিজম অসাধারণ এক শৈলি৷ একদিকে ভবনগুলিকে কুৎসিত বলা হয় এবং সেগুলির অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন৷ কিন্তু মূল অবয়ব উপেক্ষা করে ভালো করে নজর দিলে, এমন আকার-আয়তনের কারণ জানার চেষ্টা করলে স্থাপত্যের ক্ষেত্রে এক ব্রহ্মাণ্ড উন্মোচিত হয়৷''

বিকট স্থাপত্যের শৈলী ‘ব্রুটালিজম’

বার্লিনের পশ্চিমে কর্বুসিয়ে ভবন দেখলে বিশাল ক্রুজ জাহাজ মনে হতে পারে৷ স্থাপত্যের ইতিহাসবিদ ও ফটোগ্রাফার হিসেবে ফেলিক্স টর্কারের মতে, এটি বার্লিনে ব্রুটালিজম শৈলির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভবন৷ ফরাসি-সুইস স্থপতি ল্য কর্বুসিয়ে ১৯৫৭ সালে ভবনটি ডিজাইন করেছিলেন৷ ১৭ তলায় ৫৩০টি ফ্ল্যাটের কারণে ভবনটিকে ‘বসতি যন্ত্র' বলা হতো৷ ফেলিক্স টর্কার বলেন, ‘‘ল্য কর্বুসিয়ে নিজেই ব্রুটালিজম শৈলির নামকরণ করেছিলেন৷ কারণ তিনিই কাঁচা, অপরিশোধিত সিমেন্টের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন৷ এই বসতির ক্ষেত্রে তিনিই সেই কাচামাল উদ্ভাবন করেছিলেন৷ ভবনটিকে দেখলে অতিকায় যন্ত্রদানব মনে হতে পারে৷ বাইরের অংশ দেখলে এখনো কাঁচা মনে হবে৷''

ল্য কর্বুসিয়ে ভেতরের অংশ নিজের ডিজাইন কার্যকর করতে পারেননি৷ পরে মাত্র একটি ফ্ল্যাট সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মূল রং ব্যবহার করে পুনর্গঠন করা হয়েছিল৷ লেআউট ও অংশগুলির পাশাপাশি ল্য কর্বুসিয়ের কাছে রংয়েরও একই গুরুত্ব ছিল৷ সুইডেনের হেনরিক স্ভেডলুন্ড সেই সৃষ্টিকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়ে আসবাবপত্রসহ গোটা ফ্ল্যাটটি কিনে নেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই অ্যাপার্টমেন্টের রং কখনো বদলাবো না৷ কখনোই না৷ বেশি রদবদল করলে তাসের ঘরের মতো সবকিছু ভেঙে পড়তে পারে৷''

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ থেকে চেক প্রজাতন্ত্রের দূতাবাস ভবন শিল্পকীর্তিহিসেবে অপরিবর্তিত রয়েছে৷ স্থপতিরা নিজেরাই বাতি, টেবিল ও সোফা ডিজাইন করেছিলেন৷ সেখানে চেক সংস্কৃতি কেন্দ্রও সক্রিয় রয়েছে৷

সেই প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত প্রদর্শনীতে ভবনটিরও একটি ভূমিকা থাকে৷ সবাই পছন্দ না করলেও এই স্থাপত্যশৈলি সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ছে৷ চেক সংস্কৃতি কেন্দ্রের সিমোনা বিংকো বলেন, ‘‘আমার মতে, সেই সংঘাত এখনো চলছে৷ হয় ভালো লাগে, অথবা কিছুটা ঘৃণা জন্মায়৷ অবশ্যই বর্তমানে ব্রুটালিজমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে৷ আমি স্থাপত্যে উৎসাহী মানুষকে এই ভবনে নিয়ে এসে ভবনটি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করি৷''

ব্রিটেনের এক প্রকাশনা সংস্থা এমনকি সম্প্রতি ব্রুটালিজম সংক্রান্ত শহরের মানচিত্রের সিরিজ প্রকাশ করেছে৷ ফেলিক্স টর্কার বার্লিনের সংস্করণের জন্য ছবি তুলেছেন, ভবনগুলির সংকলন করেছেন৷ সেখানে হাইজিন ইনস্টিটিউটের মতো ভবনও স্থান পেয়েছে৷ কিছুকাল আগে ধ্বংসের পরিকল্পনা সত্ত্বেও এখন হেরিটেজ ভবন হিসেবে সেটিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে৷

দেখতে মারাত্মক হওয়ার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্রুটালিজম শৈলি অনুযায়ী তৈরি ভবনগুলির পুনর্জন্ম ঘটছে৷ বার্লিনে পশুপাখির উপর পরীক্ষার প্রাক্তন দফতর ভবনটি ধ্বংসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযানের কারণেও এই স্থাপত্যশৈলির পরিচিতি বাড়ছে৷ ফেলিক্স টর্কার বলেন, ‘‘গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই ভবনগুলি যখন পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখন ‘ফাউন্ডার্স পিরিয়ড' যুগের অসংখ্য ভবন ধ্বংস করা হয়েছিল৷ আজ সেই যুগের ভবনের যথেষ্ট কদর রয়েছে৷ সে সময় কত স্থাপত্যকলা নষ্ট করা হয়েছিল তা ভাবলে সত্যি কষ্ট হয়৷ তখন ভবনগুলির বয়স ছিল মাত্র ৬০ বছরের কাছাকাছি৷ আর আজ এই ভবনগুলির বয়সও ৬০ বছরের মতো৷ তাই ভাবতে হয়, আমরাও একই ভুল করবো না তো!''

ব্রুটালিজম এমন এক স্থাপত্যশৈলি, যা ষাট বছরেরও আগে সৃষ্টি হলেও আজও একই সঙ্গে বিতর্ক ও মুগ্ধ হবার কারণ হিসেবে অক্ষত রয়েছে৷

রোব্যার্ট রিশটার/এসবি