1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মঙ্গা হটাতে রংপুরে ফিরে এলো নীল

২৯ অক্টোবর ২০১০

বদলে যাচ্ছে রংপুরের মঙ্গা চিত্র৷ চাষিরা হাজার হাজার একর জমিতে শুরু করেছেন বিশেষ এক ফসলের চাষ৷ এই সেই ফসল, প্রায় দেড়শ বছর যেটিকে বিদ্রোহ করে হটিয়ে দেয়া হয়েছিল৷

https://p.dw.com/p/PrjZ
মঙ্গা তাড়াতেই নীল চাষে নেমেছেন চাষিরাছবি: DW

ইংরেজ শাসনামলে বাংলাদেশ এবং ভারতে নীল চাষ ছিল একটি বিভীষিকার নাম৷ এই বিভীষিকার ছবি আমরা পাই দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ' নাটকে৷ ভারতজুড়ে চাষিদের বিদ্রোহের মুখে নীলকর সাহেবরা ল্যাজ গুটিয়ে দৌড়েছিলেন প্রায় দেড়'শ বছর আগে৷ জোর করে আর যাই হোক, ফসল উৎপাদন হয় না!

সে সময় নীল চাষকে বলা হতো অভিশাপ৷ এখন সেই চাষকে বলা হচ্ছে আশীর্বাদ৷ ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলার এক নতুন চালিকা এটি৷ বলা হচ্ছে, মঙ্গা তাড়াতেই নীল চাষে নেমেছেন চাষিরা৷ এ এক অন্য রকম স্বপ্ন৷

আর এই স্বপ্নটার শুরু বছর চারেক আগে৷ রংপুরের সদর উপজেলা, পাগলাপীর, তারাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকার ব্যাপক এলাকায় কৃষকেরা ‘মাল'বা নীলের চাষ করতেন কিন্তু অনেক আগে থেকেই৷ কিন্তু উদ্দেশ্য, রং তৈরি নয়৷ জমিতে উর্বরতা বৃদ্ধি, আর গাছগুলো শুকিয়ে জ্বালানির প্রয়োজন মেটানোর জন্যই ছিল এই চাষ৷

বছর চারেক আগে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, এমসিসির উদ্যোগে রং তৈরির জন্য নীল চাষ শুরু হয়৷ রংপুরে বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার কেজি প্রাকৃতিক নীল উত্পাদিত হচ্ছে; যা দেশের চাহিদার বড় অংশ পূরণের পর বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে৷ দেশীয় বাজারে প্রতিকেজি নীলের দাম ১ হাজার ২'শ টাকা৷

নীল চাষি বুলু মিয়া জানান, প্রথম অবস্থায় নীল চাষ সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না তাদের৷ তারা জানতেন না যে, এটি লাভজনক ফসল হতে পারে৷ এলাকার চাষীরা ক্ষেত থেকে আলু তোলার পর সে জমিতে মালগাছ নামে বিশেষ ধরনের আগাছার বীজ ছিটিয়ে রাখতেন এবং এই মালগাছ বড় হলে তারা তা জ্বালানির খড়ি হিসাবে ব্যবহার করতেন৷ ২০০৮ সালের দিকে বিদেশি একটি এনজিও'র মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, মালগাছ আগাছা নয়, এটি আসলে সেই ‘নীল' গাছ৷ যার পাতা দিয়ে তৈরি হয় মূল্যবান নীল৷

একটা সময় ছিল যখন জুলাই-আগস্ট মাস আসছে ভেবে কৃষকরা ভাবতো, শুরু হতে যাচ্ছে অনাহারের দিন৷ তারা সে জন্য প্রস্তুতি নিতেন৷ কিন্তু সেই কৃষককুলের বেশিরভাগ মানুষ থাকতেন অর্ধাহারে, অনাহারে৷ সেই কৃষকরাই এখন ব্যস্ত নিজেদের নীল উত্পাদন কেন্দ্র চালানোর কাজে৷ এদের কেউ নীলগাছ চাষ করছেন, কেউ পাতা সংগ্রহ করছেন, আবার কেউ ব্যস্ত সেই পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণে৷ লাভ শুধু নীল উত্পাদন করেই নয়, কেন্দ্র থেকে যে নাইট্রোজেনে ভরপুর বর্জ্য বেরিয়ে আসছে, তা আবার ড্রামে ড্রামে চলে যাচ্ছে ধান ক্ষেতে৷ কৃষকেরা তা ব্যবহার করছে ইউরিয়ার পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে৷ এতে জমির মালিকেরা খুশি, চাষি খুশি; খুশি সবাই৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক