1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কাতার সংকট’এ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ

১২ জুন ২০১৭

কাতারকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি হওয়া সংকট যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয়, তেমনটিই আশা করছেন শ্রমবাজার বিশ্লেষকরা৷ কারণ, সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/2eWwf
Katar Gastarbeiter in Doha
ছবি: Getty Images/W. Little

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-র ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সংকট যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ হবে৷’’

বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের বড় অংশটিই থাকে মধ্যপ্রাচ্যে৷ তাঁদের অধিকাংশই জড়িত নির্মাণখাতের সঙ্গে৷ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হলে তা দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকটও তৈরি করতে পারে৷ শ্লথ হয়ে পড়তে পারে উন্নয়ন কাজ, যা শ্রমিক মজুরি বা নতুন নিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে৷ ফলে ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ৷

ড. মুস্তাফিজের মতে, এমনিতেই ইনফর্মাল উপায়ে অর্থ পাঠানোর কারণে রেমিটেন্সের অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, তার ওপর এই সংকট গভীরতর হতে থাকলে তা ভাববার কারণ হবে৷

Mustafizur Rahman - MP3-Stereo

‘‘গেল দুই বছরে ১৩ লাখের ওপরে মানুষ বাইরে গিয়েছেন এবং তার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছেন৷ যেহেতু আমাদের ২২০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে ১৫ বিলিয়ন ডলার আসে রেমিটেন্স থেকে, সেখানে এ বছর প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো কম আসবে৷ এর প্রধান কারণ হুন্ডি ও ইনফর্মাল উপায়ে টাকা পাঠানো৷ আরেকটি কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম কমে যাওয়ায় অনেক কোম্পানিতে বেতন বা খরচ কমানোর একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷’’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, কাতার ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্য সংকটে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে আছে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি৷ আরব আমিরাতে আছে প্রায় ৭ লাখ৷ আর কাতারে এখন প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার৷ গত বছরেও মোট জনশক্তি রপ্তানির ২২ শতাংশের বেশি হয়েছে কাতারের শ্রমবাজারে৷ দেশটিতে ২০২২ বিশ্বকাপ উপলক্ষে আরো অনেক জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ আছে বাংলাদেশের৷

BAIRA final - MP3-Stereo

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের শ্রম বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন৷ ডয়েচে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়নি৷ কিন্তু ভবিষ্যতে হবে না তার নিশ্চয়তা নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, সরকারও মনে করে এখনো কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি৷ তবে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে৷ সেজন্য কাতারে প্রচুর কর্মী দরকার৷ কিন্তু কর্মী নেয়া সেভাবে গতি পাচ্ছে না৷ এর মাঝখানে সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাতারের কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ হয়ে গেছে৷ নৌ, সড়ক ও আকাশপথ বন্ধ হয়ে গেছে৷ কাতারে প্রবেশ করাটাই এখন কঠিন হয়ে গেছে৷’’ তবে কাতারের অর্থনীতি চলমান ধাক্কাটি সামলে নিতে পারলে সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন তিনি৷

কাতারে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও একই আশা৷ পাঁচ বছর ধরে সেখানে আছেন ব্যাংকার তাইজুল ইসলাম৷ ডয়েচে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, কারো কারো মধ্যে আতঙ্ক আছে৷ কিন্তু ওসবে কান না দেয়াই ভালো৷ ‘‘কাতারে দুবাই ও সৌদি আরবের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কিছুটা সংকট তৈরি হতে পারে৷ কিন্তু সেক্ষেত্রেও যদি কোম্পানিগুলোর কাতারের অংশীদাররা সৌদি ও দুবাইয়ের শেয়ারগুলো কিনে নেন, তাহলে অত সমস্যা হবার কথা না-'' বলছিলেন তাইজুল৷ কাতার প্রবাসী এই বাংলাদেশি আরও বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে যাদের কথা হয়, তাদের বলি এসব গুজব থেকে দূরে থাকবেন৷’’

TaijulQatarWorker - MP3-Stereo

সিপিডির ড. মুস্তাফিজের মতে, ‘‘শুধু শ্রমবাজারই নয়, কাতারের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্কও বাড়ার সুযোগ আছে৷ তাদের কাছ থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি আমদানির কথা রয়েছে৷ অন্যদিকে, সৌদি আরব ও আমিরাত যেহেতু বাংলাদেশের শ্রমশক্তির বড় বাজার এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী জোটেও আছে বাংলাদেশ, তাই কূটনৈতিকভাবেও বাংলাদেশকে রয়ে-সয়ে এগুতে হবে৷ কারো সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷’’

বলা হয়ে থাকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হলো, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়৷ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির পরিষ্কার মেরুকরণের মাঝে কাতারের বিষয়েও সেই পররাষ্ট্রনীতি ধরে রাখতে পারলেই আখেরে লাভবান হবে বাংলাদেশ– এমনটাই মত বিশ্লেষকদের৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য