1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতাকে ‘‌বাধ্য বালিকা'‌ করেছেন প্রশান্ত কিশোর

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২১ আগস্ট ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরাতে ‘‌দিদিকে বলো' ও ‘‌গ্রামে চলো'-‌র পর আসছে নতুন কর্মসূচি৷ দুর্গাপুজোর পর প্রতি তিনমাসে নতুন কর্মসূচি৷ সব ক্ষেত্রেই কঠিন পরীক্ষায় উত্তার্ণ হতে হবে নেতা-‌নেত্রীদের৷

https://p.dw.com/p/3OGDY
Indien Bengalen Chefministerin Mamata Bannerjee bei Wahlveranstaltung
ছবি: DW/Prabhakarmani Tewari

গত সাত বছরের শাসনে বাংলায় বেশ কিছুটা জনসমর্থন হারিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার৷ তাঁর তৈরি দল তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর আস্থা হারাচ্ছে আম জনতা৷ বিষয়টা বুঝতে একটু দেরি করেছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা৷ ২০২১-‌এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন৷ রাজ্যের রাজত্ব কার হাতে, তা নির্ধারণ হবে৷ এমন এক কঠিন সময়ে মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের হাইটেক নেতা ডেরেক ও'‌ব্রায়েন ডেকে এনেছেন দুঁদে নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-‌কে৷

পিকে যে দলের হয়ে কাজ করেন, রাজনৈতিক দলের চলার পথ, প্রচার কৌশল সব ঠিক করে দেন তিনিই৷ এর আগে তিনি যেখানে যে দলকে নির্বাচনে জেতানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, সেখানে তিনিই সর্বেসর্বা৷ তাঁর কথা শুনে চলতে হয় দলের সর্বস্তরের নেতাকে৷ তৃণমূলেও সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি৷ প্রশাসনে দুর্নীতি, সরকারি প্রকল্পে কাটমানি(‌প্রাপ্য অর্থের একাংশ কেটে নেওয়া)‌ এবং সর্বস্তরের নেতাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে তিতিবিরক্ত জনতা৷ এই সুযোগে পশ্চিমবঙ্গে তিল থেকে তাল-‌এর আকার নিচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে দলের নেতা-‌নেত্রীদের একগুচ্ছ কর্মসূচি দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর বা পিকে৷ যা নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷ পিকে অবশ্য তাতে কর্ণপাত করতে নারাজ৷ তাঁর সাফ কথা, ‘‘হয় আমার কথা শোনো, নয়তো দূর হটো৷''‌ ‌

ঘনিষ্ঠ মহলে পিকে বলছেন, তিনি এখনও সেইভাবে কাজ শুরুই করেননি৷ এরমধ্যে সুফল মিলেছে৷ গত মে মাসে তৃণমূলের ওপর আম জনতার যে বিতৃষ্ণা ফুটে উঠেছিল, এখন তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে৷ দলের অন্য নেতা-‌নেত্রীদের তিনি বাগে আনতে পারলেও বেগ পেতে হচ্ছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিয়ে৷ কারণ, অন্যের কথা শুনে চলা মমতার ধাতে নেই৷ যদিও তিনি শুনতে বাধ্য হচ্ছেন৷ চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিকে-‌কে মেনে নিতে হচ্ছে তাঁকে৷ তাঁর হাঁটাচলা, কথা বলা এমনকী সরকারি কর্মসূচির গতিমুখ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিচ্ছেন পিকে৷ মানছেন আলটপকা মন্তব্যে কড়া নিষেধাজ্ঞাও৷ তবে, গদি হারানোর ভয়ে ধীরে ধীরে বাধ্য বালিকা হয়ে উঠেছেন একদা বাংলার বাঘিনী৷

বিশ্বনাথ চক্রবর্তী

পিকে ঠিক করেছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচন তিনি লড়বেন শুধুমাত্র মমতাকে সামনে রেখে৷ আশেপাশে থাকবেন না আর কেউই৷ অভিষেকও নয়৷ এতদিন তা-‌ই হয়ে এসেছে৷ কিন্তু, সাত বছরে দলের বহু শাখা-‌প্রশাখায় ভুঁইফোড় নেতা, নেত্রী মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন৷ সমস্যা তাঁদের নিয়েই৷ তাই মমতাকে আবার ‘‌দিদি'‌-‌র রূপ দিচ্ছেন পিকে৷ চালু করেছেন ‘‌দিদিকে বলো'‌ কর্মসূচি৷ তৃণমূলের এক হাজার নেতাকে বেছে ১০০ দিনের মধ্যে নিয়ে তাঁদের ১০ হাজার গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ কোন নেতা কোন গ্রামে যাবেন, সেসব ঠিক করে দিচ্ছেন তাঁর টিম৷ গ্রামে গিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে নেতাদের৷ কার বাড়িতে থাকতে হবে, তা-‌ও ঠিক করে দিচ্ছে টিম-‌পিকে৷ এমনকী, সেইসব ছবি আপলোড করতে হচ্ছে পিকে-‌র ঠিক করে দেওয়া নম্বরে৷ পিকে বলেছেন, ‘‘সবে শুরু৷ প্রথমে নেতাদের ভাবমূর্তি শুধরোতে হবে৷ নির্বাচনী প্রচার ঢের দেরি৷''‌ বাংলায় টিম-‌পিকে মোট ৭০০ কর্মী নামিয়েছে৷ প্রতি মুহূর্তে নেতা-‌মন্ত্রীদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে৷ নেতা-‌মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে পিকে বলেছেন, ‘‘‌আপনারা নিজেদের এলাকায় কেন হেরেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলুন৷ তবে, বিজেপি‌র সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গ বলার প্রয়োজন নেই৷ কারণ ওটা আমরা জানি৷''‌ এতেই ফাঁপরে পড়েন বেশিরভাগ নেতা৷ তারপর পিকে-‌র বিধান, ‘‌‘গ্রামে যান৷ মানুষের সঙ্গে মিশুন৷ অযথা বিজেপি-‌কে দোষারোপ করে কেউ পার পাবেন না৷ নিজের মূল্যায়ন করতে হবে নিজেকেই৷''‌ ইঙ্গিত দিয়েছেন ২০২১ সালে কমপক্ষে ২০-‌২৫ শতাংশ বিধায়ক প্রার্থীপদ থেকে পড়বেন৷

পিকে ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এরপর দুর্গাপুজোয় ‘‌টাস্ক'‌ ‌দেওয়া হবে নেতাদের৷ কী টাস্ক?‌ নেতা-‌মন্ত্রীদের সব পুজো মন্ডপে গিয়ে মুখ দেখিয়ে চলে এলে হবে না৷ পুজোকর্তাদের সঙ্গে, দর্শনার্থীদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে৷ পুজো মিটলেই প্রতি তিন মাস অন্তর নতুন কর্মসূচি৷

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‌‌‘বেশ কয়েক বছর ধরে ‌তৃণমূল দলটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিল, প্রশান্ত কিশোর সেই জায়গায় দলকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করেছেন৷ বিশেষ করে দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি, যিনি কারও কোনও কথা শোনেন না, তাঁকে এখন প্রশান্ত কিশোরের কথা শুনতে হচ্ছে৷ মমতার পর তৃণমূলে প্রশান্ত কিশোরই এখন দ্বিতীয় ব্যক্তি৷'‌'‌ তাঁর মতে, ‘‌‘‌যে লড়াইটা বিজেপি একতরফা ভাবে জিতে নিয়ে চলে যাচ্ছিল, প্রশান্ত কিশোর আসার পর সেই লড়াইয়ে টিকে রয়েছে তৃণমূল৷ অন্তত এখনও৷'‌'‌

পিকের জন্ম বিহারের রোহতাস জেলার কোরান গ্রাম৷ লেখাপড়ার পর রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করেছেন৷ ২০১১ সালে ভারতে ফিরে গড়েছেন ‘‌সিটিজেন্স ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্নমেন্ট'‌ ‌বা সিএজি৷ তাতে সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি ও আইআইএম উত্তীর্ণদের নিয়োগ করেছেন৷ কাজ আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করে নির্বাচনী কৌশল বাস্তবায়িত করা৷ কৌশলী হিসেবে তাঁর প্রথম নিয়োগকর্তার নাম নরেন্দ্র মোদী৷ গুজরাটে মোদীকে জিতিয়ে ছিলেন তিনি৷ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেও মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন তিনিই৷ পিকে ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘‘‌উনি অত্যন্ত পেশাদার মানুষ৷ কোনও দল বা রাজ্যকে ভালোবাসতে যাননি৷ অক্ষরে অক্ষরে তাঁর কথা শুনলে সুফল মিলবে, নয়তো গড্ডলিকা৷ কারণ বিজেপি-‌র সঙ্গে তৃণমূলের লড়াইটা মোটেও সহজ নয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য