1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গদান জরুরি ছিল এসময়

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৭ মে ২০২১

মরণোত্তর দেহদান বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা প্রচার করতেন যিনি, সেই ব্রজ রায় কোভিডে মারা যাওয়ার সময় নিজের দেহ অটোপ্সির জন্য দিয়ে গেলেন।

https://p.dw.com/p/3tVEN
Symbolbild | Sterbehilfe
ছবি: Colourbox

ব্রজ রায় এবং তার সংস্থা ‘‌গণদর্পণ'‌ এমন কথা বলত, যা সরাসরি আঘাত করত ধর্মভীরু মানুষের সংস্কারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির স্বার্থে মারা যাওয়ার পর দেহ দান করতে বলত গণদর্পণ। মরণাপন্ন রোগীর যদি মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটে, তা হলে তার হার্ট, লিভার, কিডনি দান করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাত। এবং অবশ্যই মৃত মানুষের চোখ দান করার কথা বলত। বোঝাত, যে কেউ মারা গেলে তার শরীরের এই সব অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ পুড়িয়ে বা কবর দিয়ে নষ্ট করে ফেলা উচিত নয়। বরং সেগুলো আর পাঁচজন অসুস্থ মানুষকে নতুন জীবন দিতে পারে। বলা বাহুল্য, যে ধর্মীয় এবং সামাজিক সংস্কারের আগল সরিয়ে এই মুক্ত চিন্তাকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা আদৌ সহজ ছিল না। তবু হাল ছাড়েননি ব্রজ রায়।
সম্প্রতি কোভিডে মারা যাওয়ার পর আরও এক দৃষ্টান্তযোগ্য কাজ করলেন তিনি। নিজের মৃতদেহটি অটোপ্সি করার অনুমতি দিয়ে কোভিড রোগের চিকিৎসাকে আরও একটু এগিয়ে দিলেন। ভারতে যে চিকিৎসকেরা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়ছেন, এবং জীবাণুবিদ্যা ও মহামারী বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ ছিল, যে কোভিডে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের দেহ তড়িঘড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে!‌ ফলে মানবদেহে কোভিড জীবাণুর গতি–প্রকৃতি, বা ঠিক কী ধরনের ক্ষতি তারা শরীরের ভেতরে করছে, তা জানার কোনও সুযোগই তৈরি হচ্ছে না। সেই প্রেক্ষিত থেকেই ব্রজ রায়ের সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যদিও একটি দেহের ক্লিনিকাল প্যাথোলজিকাল পরীক্ষা যথেষ্ট তথ্য গবেষকদের দেবে না। এটা একটা প্রক্রিয়া, যা নিয়মিত হওয়া উচিত।

ডা. অনিরুদ্ধ কর


ঠিক সেই কথাটাই বোঝাতে চাইলেন ডাঃ অনিরুদ্ধ কর, যিনি এক সময় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ছিলেন। জানালেন, ২০২০ সালে কোভিড ছড়ানোর পর, প্রথমে ইটালিতে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে, আমেরিকায় কোভিডে মৃত রোগীর অটোপ্সি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে হয়নি, কারণ এখানে এ সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। বিদেশে যে কোনও রোগে মারা গেলেই চিকিৎসা গবেষণার প্রয়োজনে অটোপ্সি হয় এবং সেটা আইনত বাধ্যতামূলক। ভারতের ক্ষেত্রে মৃত রোগীর আত্মীয়–পরিজনের অনুমতি দরকার হয়, যদি না রোগী স্বজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় সম্মতি দিয়ে যান, যেটা ব্রজ রায় দিয়ে গিয়েছিলেন। অঙ্গদানের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে এবং সেটা কোনও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এই সচেতনতা মানুষের মধ্যে আগে থেকেই থাকতে হয়।
এই সূত্রে একটা জরুরি কথা বলেছেন ডা. অনিরুদ্ধ কর, যে ‘‌‘‌আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক বহু জিনিস যেটা জানানোর কথা, সেগুলো যদি স্কুলপাঠ্য বা কলেজপাঠ্য হিসেবে না থাকে, তা হলে সেগুলোর কোনও প্রভাব পড়বে না। এগুলো সমস্তই আমাদের সিলেবাসের মধ্যে থাকা উচিত।'‌'‌ এ প্রসঙ্গে রাজ্যের এইডস প্রতিরোধ দপ্তরের প্রাক্তন অধিকর্তা হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ডা. কর, যে স্বাভাবিক, নিরাপদ যৌন অভ্যাস গড়ে তুলতে তৈরি করা পাঠক্রম রাজ্যের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চালু করা গেলেও বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলো সেটা ‘‌সেক্স এডুকেশন'‌ হিসেবে এড়িয়ে গিয়েছিল!‌'‌'‌ কিন্তু তার এ নিয়ে কোনও দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব নেই, যে একেবারে প্রাথমিক স্তরেই এই সচেতনতা জরুরি। সে যৌন শিক্ষা হোক বা অঙ্গ দান। এটা যদি বোধের অংশ না হয়ে যায়, তা হলে দৃষ্টান্তও শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই থেকে যাবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য