1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহারাষ্ট্রে শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী, ফড়নবিস উপ-মুখ্যমন্ত্রী

৩০ জুন ২০২২

মহারাষ্ট্রে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন বিক্ষুব্ধ শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস উপ-মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।

https://p.dw.com/p/4DReD
মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন একনাথ শিন্ডে।
মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন একনাথ শিন্ডে। ছবি: Ashish Vaishnav/Zumapress/picture alliance

মহারাষ্ট্রে নতুন চমক বিজেপি-র। উদ্ধব ঠাকরের কাছ থেকে প্রায় ৪০ জন বিধায়ককে ভাঙিয়ে আনা একনাথ শিন্ডেকেই মুখ্যমন্ত্রী করলেন মোদী-শাহ। বিজেপি-র সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। 

ফড়নবিস মুখ্যমন্ত্রী হতেই চেয়েছিলেন বলে সূত্র জানাচ্ছে। তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রী হতে চাননি। বস্তুত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ঘোষণা করে দেন, শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তিনি দলের সংগঠনে কাজ করবেন। কিন্তু এরপর বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেন, ফড়নবিসকে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া উচিত। অমিত শাহও টুইট করে বলেন, ফড়নবিস উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। শপথ নেয়ার পর ফড়নবিস বলেছেন, দলের নির্দেশ সর্বোপরি। 

প্রশ্ন হলো, কেন শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করলো বিজেপি? দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, এর কারণ, মহারাষ্ট্র থেকে উদ্ধব ঠাকরের প্রভাব শেষ করে দিতে চাইছে বিজেপি। তারা প্রথমে উদ্ধবের জন্য অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু তিনি বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হননি। এখন শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি তার গোষ্ঠীকেই শিবসেনার প্রধান গোষ্ঠী হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে। সামনেই মুম্বই সহ একাধিক পুরসভার নির্বাচন। সেখানে জেতাটা বিজেপি-র পক্ষে খুবই জরুরি। বৃহন্মুম্বই পুরসভার আয় অনেক রাজ্যের বাজেটের থেকে বেশি। এই পুরসভা নির্বাচনে উদ্ধব বা তার নেতৃত্বাধীন জোটকে হারাতে চায় বিজেপি। আর সেটা করতে গিয়ে শিন্ডের শিবসেনাকেই বালাসাহেব ঠাকরের আসল উত্তরাধিকারী হিসাবে তুলে ধরতে চায়। 

এভাবেই বিজেপি-র আড়াই বছরের চেষ্টা সফল হলো। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের জোট সরকারের পতন হলো। বিজেপি আবার ক্ষমতায় এল।

রাজ্যপালের নির্দেশ বহাল রেখে বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, বৃহস্পতিবার সকালেই বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে উদ্ধব ঠাকরেকে।

সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আসার কয়েকমিনিটের মধ্যেই অনলাইনে উদ্ধব জানিয়ে দেন, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। তারপরই তিনি রাজভবনে রাজ্যপালের কাছে যান। মুখ্যমন্ত্রীর পদ এবং বিধান পরিষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে উদ্ধব ঠাকরে। মহারাষ্ট্রে এনসিপি ও কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে জোট করে আড়াই বছর সরকার চালিয়েছেন তিনি। করোনাকালের পুরো সময়টা সামাল দিয়েছেন। ঠাকরে পরিবার থেকে এই প্রথম কেউ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছিলেন। কার্যত প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাহীন ঠাকরে এতদিন ধরে জোটের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেখানে খুব বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েননি।

আড়াই বছর আগে উদ্ধবকে মুখ্যমন্ত্রী করতে রাজি হয়নি বিজেপি। তারপরই এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন উদ্ধব। আড়াই বছর পর বিজেপি শিবসেনারই এক বিক্ষুব্ধ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসালো। 

উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, ''আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান করি। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।'' বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, রাজ্যপালের নির্দেশমতো সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ ঠাকরেকে দিতে হবে। কিন্তু যে ১৬ জন বিধায়কের সদস্যপদ বাতিল করার আবেদন ডেপুটি স্পিকারের কাছে আছে, তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিজেপি-র চেষ্টা সফল

ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিজেপি মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের জন্য চেষ্টা করে গেছে। তারা এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার সহ কয়েকজন বিধায়ককে নিজেদের দিকে এনে সরকার গঠনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তারপর থেকে তারা শিবসেনা ভাঙানোর চেষ্টা করে গেছে। শেষপর্যন্ত একনাথ শিন্ডের মাধ্যমে তারা সফল হয়েছে।

উদ্ধবের এখন এমনই অবস্থা হয়েছে যে, তার সঙ্গে মাত্র ১৫ জন বিধায়ক আছেন। বাকি সব  শিন্ডেরসঙ্গে বিক্ষুব্ধ শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। ঠাকরের সঙ্গে মাত্র তিনজন মন্ত্রী আছেন। বাকি নয় মন্ত্রী শিন্ডের সঙ্গে গেছিলেন। এভাবেই শিবসেনা বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে সরকার ভাঙার খেলায় সফল হয়েছেন শিন্ডে এবং বিজেপি।

বিজেপি নেতারা বলছেন, শিবসেনার মন্ত্রী, বিধায়করা ঠাকরের জোট নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বিদ্রোহ করেছেন। আর শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য এই কাজ করেছে।

বালাসাহেবের সময় শিবসেনায় তার কথাই ছিল শেষ কথা। কিন্তু তার ছেলে উদ্ধবের সময় দেখা গেল, বিধায়করা ঠাকরে পরিবারের নির্দেশ মানছেন না। তবে সঞ্জয় রাউতদের দাবি, দলের বাকি নেতা ও কর্মীরা তাদের সঙ্গে আছেন। পরবর্তী লড়াইয়ে সেটা স্পষ্ট হবে।

কিন্তু শিন্ডেরা দাবি করেছেন, তারাই প্রকৃত শিবসেনা ও বালাসাহেবের ভাবধারা তারাই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।

সরকার গঠনের গুরুত্ব

মুম্বইকে বলা হয় ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী। তাই ভারতের রাজনীতিতে মহারাষ্ট্রের আলাদা গুরুত্ব আছে। মুম্বই পুরসভার আয় অনেক রাজ্যের বাজেটের থেকে বেশি। সেই রাজ্য আবার বিজেপি-জোটের দখলে এল। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের পর মহারাষ্ট্রেও তারা দল ভাঙিয়ে সরকার গঠন করলো বিজেপি।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)