1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাত্র এক তৃতীয়াংশ হতদরিদ্রের ভাগ্যে সরকারি সহায়তা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ এপ্রিল ২০২১

দেশে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা এক কোটির বেশি৷ অথচ করোনার সময় তাদের মাত্র এক তৃতীয়াংশের ভাগ্যে জোটে সরকারের দেয়া বিশেষ নগদ সহায়তা৷ এককালীন নগদ সহায়তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম৷

https://p.dw.com/p/3s8gO
ফাইল ছবি৷ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

দেশের নাগরিকদের আয়ভিত্তিক সঠিক ডাটাবেজ না থাকায় নিম্ন আয়ের সব মানুষ সহায়তার আওয়তায় আসে না৷ তাদের নিয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা৷
গত বছর স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে তালিকা তৈরি করা হয়৷ সেসময় একটি অংশের অসততার কারণে যাদের সহায়তা পাওয়া উচিত, তাদের অনেকে বঞ্চিত হয় বলে অভিযোগ উঠে৷ ‘দরিদ্র' নয়, এমন লোকদেরও তালিকাভূক্ত করা হয়৷ ভাসমান ও শহরের গরিব বাসিন্দাদের অনেকেই থেকে যান তালিকার বাইরে৷  

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আবার ঈদ উপহার হিসেবে ৩৫ লাখ পরিবারকে এককালীন দুই হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়া হবে৷ আগামী ১৮মের মধ্যে এই সহায়তা প্রদানের কথা রয়েছে৷ এই অর্থ বিতরণ করা হবে বিকাশ, রকেট, নগদ ও সিওর ক্যাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে৷ 

তবে একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ সংখ্যা ৫০ লাখও  হতে পারে৷ তবে তা নির্ভর করছে এ সংক্রান্ত ডাটাবেজ কতটা আপডেট করা যায় তার ওপর৷ সেই হিসেবে এই খাতে বরাদ্দ এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা৷

প্রতি পরিবারে চারজন করে সদস্যের হিসাব করা হয়েছে৷ অর্থাৎ এ আর্থিক সহায়তার আওতায় আসবেন প্রায় দুই কোটি মানুষ৷
গত বছরের  মে মাসে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হলেও  শেষ পর্যন্ত ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়৷ প্রতি পরিবারকে দুই হাজার পাঁচশ' টাকা করে সহায়তা দিয়ে মোট ৮৭৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিতরণ করা গেছে৷ বাকি টাকা বিতরণ করা যায়নি৷

‘হতদরিদ্র মানুষের সঠিক ডাটাজে দরকার’

এদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি৷ আর মোট জনসংখ্যার সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করেন৷ কিন্তু সবাইকে ডাটাবেজের আওতায় না আনতে পারায় তাদের তালিকাভুক্ত করা যাচ্ছে না৷
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘গত বছর প্রধানমন্ত্রী এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু সঠিক ডাটাবেজ না থাকায় ৩৮ লাখের বেশি পরিবারকে সহায়তা দেওয়া যায়নি৷ এবারও আগের তালিকা ধরেই সহায়তা প্রদান করা হবে৷ যারা আগে পেয়েছেন, তাদেরও প্রয়োজন আছে৷ কিন্তু তালিকা আরো বাড়ানো দরকার৷ যারা তালিকার বাইরে আছেন তাদেরও অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন৷’’

দেশে যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আছে তাদের সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ এই সুবিধা পাচ্ছেন৷ বাকিরা বঞ্চিত হচ্ছেন৷ যে ব্যক্তির আয় দৈনিক ১৬০ টাকার কম তিনি দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন বলে ধরা হয়৷

  
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘গত বছর মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ স্খানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এই তালিকা করা হয়েছিল৷ পরে দেখা গেল দু-তলা ভবনের মালিকও তালিকায় রয়েছেন৷ আবার একটি মোবাইল নাম্বারের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তি তালিকাভূক্ত হয়েছেন৷ ফলে শেষ পর্যন্ত পুরো বরাদ্দ বিতরণ করা যায়নি৷''
তিনি বলেন, ‘‘নতুন কোনো ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই৷ আমাদের হতদরিদ্র মানুষের সঠিক ডাটাবেজ দরকার৷  
তিনি জানান, যদি সরকারের হিসাবে মোট জনগোষ্ঠীর শতকার ২০ ভাগ দরিদ্রও ধরে নিই, তাহলে সংখ্যাটি হবে চার কোটি৷ করোনায় দারিদ্র্য আরো বেড়েছে৷ সব মিলিয়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি নিম্ন আয়ের গরিব৷ কিন্তু সহায়তা পাচ্ছে দেড়কোটির মতো মানুষ৷  

তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার হিসাব ধরে বাংলাদেশে একটি চার সদস্যের পরিবারের চলতে মাসে সর্বনিম্ন ছয় হাজার টাকা লাগে৷ এককালীন দুই হাজার ৫০০ টাকার এই নগদ সহায়তা প্রশংসার দাবি রাখলেও বাস্তবতার নিরিখে তা অনেক কম৷ শুধু বলা যায়, তবুও তো তারা পাচ্ছেন৷''
তার মতে, ‘‘করোনা তো সহজে যাবে না, তাই গরিব মানুষকে সহায়তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা দরকার৷ সঠিক উপকারভোগীদের তালিকা করে এই সহায়তা বাড়াতে হবে৷ অনেক খাত আছে, যেখানে এখন খরচের দরকার নেই৷ সেখান থেকে ফান্ড আনা যায়৷ গরিবদের দিলে এটাও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে৷ কারণ, তারা তো টাকা খরচ করবেন৷ এই টাকা জমিয়ে রাখার মতো অবস্থা তাদের নেই৷ টাকা খরচ করলেই অর্থনীতির লাভ৷''
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও মনে করেন, এই সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো দরকার৷ সেটা বছরে কয়েকবার হওয়া প্রয়োজন৷ একই সঙ্গে সঠিক ডাটাবেজ তৈরি করে সব নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তার আওতায় আনতে হবে৷
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, বিশেষ নগদ সহায়তার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত বছর তৈরি করা হয়েছে৷ এবারও সেখান থেকেই যা করার করা হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনো নতুন নগদ সহায়তার কোনো নির্দেশনা পাইনি৷ পেলে আমরা অংশগ্রহণ করবো৷''
তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ৫৭২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷

‘তালিকা আরো বাড়ানো দরকার’