1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাদ্রাসায় খেলার সময়ও লেখাপড়া!

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

খেলার সময় খেলা, পড়ার সময় পড়া- কিন্তু বাংলাদেশে মাদ্রাসাপড়ুয়া শিশুদের অনেককে খেলার সময়ও পড়তে হয়৷ দুরন্ত শৈশবের দেখা পায় না ওরা, হারিয়ে যায় কৈশোরকালও৷

https://p.dw.com/p/3igEP
ছবি: DW/M. Mamun

রাজধানী ঢাকার স্কুলে শিক্ষকতা করেন মুহিব নেছার৷ বাংলায় স্নাতকোত্তর এই শিক্ষকের শৈশব ও কৈশোরকাল কেটেছে ছারছিনা দরবারের আলিয়া মাদ্রাসায়৷ বছর কয়েক আগের সেই স্মৃতি জানালেন এভাবে, ‘‘মাদ্রাসায় আমাদের অবসর সময় ছিল শুধু আসরের নামাজের পর ঘন্টাখানেক৷ তা-ও মাদ্রাসার গণ্ডির ভেতরেই থাকতে হতো৷ ফুটবল-ক্রিকেট এ ধরনের খেলার কোনো সুযোগ ছিল না৷ হাঁটাহাঁটি বা একটু দৌড়াদৌড়ি এই ছিল আমাদের খেলা৷ আমাদের বাজারে যাওয়ার অনুমতি ছিল সপ্তাহে শুধু এক দিন৷’’ পরিস্থিতি এখনো অনেকটা আগের মতোই রয়ে গেছে বলে মনে করেন মুহিব৷

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের শিক্ষার পাঠক্রম আর পরীক্ষার চাপে সদাই ব্যস্ত থাকতে হয় খুদে পড়ুয়াদের৷ শহুরে শিশুদের জীবন আরো ঘরবন্দি৷ এতে আবার পড়ার তাড়ার পাশাপাশি মাঠ ও নিরাপত্তার ঘাটতিও জড়িত৷ তবে দেশের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ খেলাধুলাসহ সব ধরনের বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়ে বেড়ে ওঠে ঐতিহ্যগত কারণেই৷ কঠোর নিয়মের মধ্যে থাকতে হয় বেশিরভাগ মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থীদের৷

তবে সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা আলিয়া মাদ্রাসার পরিবেশ তুলনামূলক মুক্ত৷ সেখানে পাঠ্যক্রম অনেকটা স্কুল-কলেজের মতো৷ খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চারও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ আর সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কওমি মাদ্রাসায় আছে অনেক সীমাবদ্ধতা৷ পুরনো দিনের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করছে তারা৷ এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী৷ আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের এই সহকারি অধ্যাপক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়৷ জাগতিক বিষয়গুলো সেখানে গৌণ৷ শরিয়তের কারণে কিছু বিষয়, যেমন টিভি দেখার মতো বিনোদনমূলক বিষয়গুলো সেখানে নিষেধ৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও তারা নিরুৎসাহিত থাকে৷ এই কারণে কওমির ছাত্র-ছাত্রীরা ঘুমের সময় বাদ দিয়ে, বাকি সময় লেখাপড়ার মধ্যে থাকে৷’’

কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের বাইরে থাকা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)৷ তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দেশে মোট কওমি মাদ্রাসা সংখ্যা ১৩৭১০৷ এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ৯১০৮টি, আর নারীদের ৪৬০২টি৷ গত বছর তাদের পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৬১ হাজার ৬৩১ জন৷ বেফাকের বাইরেও আরো কওমি মাদ্রাসা আছে৷ অন্যদিকে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি বলে সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে জানা যায়৷ এই তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, দেশের শিশুদের বড় একটা অংশ বিনোদনের কোনো খোরাক না পেয়েই বড় হচ্ছে৷

তবে কওমিতে না থাকলেও আলিয়া মাদ্রাসায় সৃজনশীল চর্চার অনেক দিক আছে৷ তাই এই ধারার শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্য বিষয় জানার সুযোগ বেশি রয়েছে বলে মনে করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরচিালক (সম্পাদক, প্রকাশনা বিভাগ) আনোয়ার কবীর৷ এই সাংবাদিক ও লেখক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি ধারায় সৃজনশীল চর্চার সুযোগ অনেক কম৷ কারণ, তারা নিজেরাই সিলেবাস নিয়ন্ত্রণ করে৷ তাই রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে৷ তবে কর্তৃত্ব নয়, সহযোগিতার মানসিকতা দেখাতে হবে৷ এগিয়ে আসতে হবে কওমি পক্ষকেও৷’’

কওমি শিক্ষাধারাকে মূলধারার সমান্তরাল করতে সরকারি কিছু উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে৷ বেফাক নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ এরই অংশ হিসেবে বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে৷ তাদের দাওরায়ে হাদিস পেয়েছে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তরের সমমান৷ একে তখন যুগান্তকারী ঘোষণা হিসেবে দেখেছেন অনেকে৷ তবে কওমি-পড়ুয়া শিশুদের গোঁড়ামিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে তৃণমূল পর্যায়ে সৃজনশীল চর্চা প্রসারিত করতে হবে বলে মনে করেন সাংবাদিক ও লেখক আনোয়ার কবীর৷ এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসার শিশুরা রাষ্ট্রের একটি বড় অংশ৷ এদেরকে গোঁড়ামি বা কুসংস্কার মুক্ত করতে হলে সৃজনশীল বইপত্র দেয়া প্রয়োজন৷ এজন্য সরকারের পাশাপাশি কওমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷’’

এদিকে সময়ের পরিবর্তনে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে৷ তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়৷ গতবছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মুভ ফাউন্ডেশনের এক জরিপমতে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করে৷ তাদের প্রায় সবার আছে স্মার্টফোন৷ এ বিষয়ে আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বলেন, ‘‘মাদ্রাসায় যারা আবাসিক থাকে, সেই ছাত্রছাত্রীদের বয়স ২০-এর নীচে হলে তাদের সাধারণত স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয় না৷ অনাবাসিক যারা বা যারা মাদ্রাসার গণ্ডি পার হয়ে গেছেন, কিংবা বয়স ১৮ পার হয়েছে, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়৷ তারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকে৷’’

গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...