1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, এভাবে সব ধামাচাপা দেয়া যায়?

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
২৮ এপ্রিল ২০২২

বুধবার সব জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই বৈঠক সরাসরি সম্প্রচারিত হলো টিভিতে।

https://p.dw.com/p/4AXZ3
Indien Westbengalen | Mamata Banerjee, Chief Minister
ছবি: Prabakhar/DW

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ ও প্রশাসনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কি নিজের সব দায়, সরকারের সব ব্যর্থতা এড়ানো যায়? বিশেষ করে বগটুই, হাঁসখালি, তপন কান্দু, আনিস খান থেকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার দায়? কারণ, পুলিশ ও প্রশাসন তো আপনিই চালাচ্ছেন। তাহলে পুলিশের ব্যর্থতা মানে তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যর্থতা, সরকারের ব্যর্থতা। আর রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

এভাবে বৈঠক করে, সেটা টিভি-তে সরাসরি দেখিয়ে, ডিএম, এসপি সহ অন্য অফিসারদের ধমক দিয়ে, নরমে-গরমে কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছে নিজের ভাবমূর্তি ভালো করার চেষ্টা করা যায়, ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করা যায়, কিন্তু দায় কি এড়ানো যায়? এই প্রশ্নের জবাবও তো মেলে না, কেন একের পর এক মামলার তদন্তভার রাজ্য পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিবিআইয়ের হাতে দিচ্ছে কলকাতা হাইকোর্ট? কেনই বা নির্যাতন হলে বা কোনও বড় ঘটনা ঘটলে পরিবারের তরফ থেকে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তের ভার দেয়ার দাবি ওঠে?

মানুষ তো এটাও জানেন যে, সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে খাঁচাবন্দি তোতাপাখি্ বলেছে, তারা যে কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিহেলনে কাজ করে, সেই অভিযোগ তুলে তুলে বিরোধী নেতারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তো এই অভিযোগ অসংখ্যবার করেছেন। তারপরেও রাজ্যের পুলিশ নয়, সিবিআই-তেই কেন আস্থা রাখছে মানুষজন? 

পুলিশের উপর এই অনাস্থার দায় কি গুটিকয় এসপি ও ডিএমের, সরকারের নয়? কেন বারবার অভিযোগ ওঠে, পুলিশ দলদাস হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের কেউ কোনো অভিযোগে জড়িত থাকলে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না? 

হাঁসখালির ১৪ বছর বয়সিকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তার মৃত্যু হয়েছে। তারপর দ্রুত তার শেষকৃত্য করা হয়েছে। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন... না কি শরীরটা খারাপ ছিল, না কি কেউ ধরে মেরেছে? ... মেয়েটার না কি লাভ অ্যাফেয়ার ছিল, শুনেছি।' এই সংবেদনহীন মন্তব্য নিয়ে কম তোলপাড় হয়নি।

প্রশাসনিক বৈঠকে এসপি-কে তিনি কী বললেন? বললেন, ‘‘হাঁসখালিতে এই ঘটনা ঘটল কী করে? তোমরা খবর নাওনি কেন আগে? তোমাদের কোনও সোর্স নেই। তোমাদের একটু গাফিলতির জন্য সরকার কেন ভুগবে বলো তো? সরকার তো কোনও জিনিস লুকোতে চায় না। সরকার চায়, যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক, সে যেই হোক।'' তিনি আরো বলেছেন, এই কেসগুলো সিরিয়াসলি দেখে নিতে বলো স্থানীয় স্তরে। তা না হলে আইসিদের থাকার দরকার কী? আইসিরা যদি ঠিকমতো না দেখে।''

তদন্ত যখন সিবিআইয়ের কাছে চলে গেছে, তখন পুলিশকে কিঞ্চিত বকুনি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যস হয়ে গেল? যদি গাফিলতি হয়েছে, তাহলে পুলিশের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না? অপরাধ করলে, সে যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ তো আইনত বাধ্য। এটা মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হবে কেন? তাকে করে দেখাতে হবে। তৃণমূলের কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা ধামাচাপা না দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই কথা বলবেন, তার সরাসরি সম্প্রচার হবে, বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাবে, তারপর? তারপর তো যে কে সেই।

আনন্দবাজার লিখছে, বগটুই নিয়ে পুলিশ সুপার মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ''একমাত্র রামপুরহাটে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা ছাড়া গোটা জেলা শান্ত। এসপি-র মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সেটাও ঘটত না, যদি সেদিন তোমার ডিএসপি ওখানে ছুটে যেত! এটা তোমাদের নেগজিলেন্স!'' এসপি কিছু বলতে চাইছিলেন। তাঁকে থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে কোনও ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হতে পারে। একটা দেশলাই জ্বাললেই তো আগুন লাগতে পারে। তোমাদের এইটুকু বুদ্ধি নেই?'' পুলিশ সুপার স্বীকার করেন, তাঁদের তরফে ভুল হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘অনেক ভুল হয়েছে। তার জন্য সরকারের ফেস লস হয়েছে।'' পুলিশের জন্য সরকারের কেন মুখ পুড়বে, প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।''

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে।
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে।ছবি: privat

আবার সেই একই কথা উঠবে। ভুল করলে তো শাস্তি প্রাপ্য। দোষী পুলিশকে কী শাস্তি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী? পুলিশ সুপার স্বীকার করলেন, ভুল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ডিএসপি যাননি বলে বগটুইয়ের ঘটনা ঘটেছে, তারপর সব ঠিক হয়ে গেল? ঘটনা তো সামান্য কোনো সংঘর্ষ নয়। এতগুলি মানুষকে পুড়িয়ে মারারা ঘটনা। তাতে কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ পেয়েও সরকার ব্যবস্থা নেবে না?

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও এসপির মধ্যে সম্পর্কে সমস্যা আছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসককে বলেছেন, অভিযোগের কথা তাকে আগে জানানো দরকার ছিল। জানিয়েছেন, বাঁকুড়ার ডিএম-এর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেছেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসককে বলেছেন, আগে তিনি প্রো-অ্যাকটিভ ছিলেন, এখন ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেছেন। 

এ সব জেনে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কী লাভ হবে? আসলে আমাদের লাভ না হলেও সরকারের লাভ হতে পারে। কারণ, মানুষ তো এই সব কথা থেকে বুঝবেন, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররাই সব সমস্যার জন্য দায়ী। তারা কাজ করেন না, দায়িত্ব পালন করেন না বলে গোলমাল হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাজ শুধু বকে দেয়া, মাঝেমধ্যে নির্দেশ দেয়া, যাতে তারা ঠিক কাজ করেন। এরপরেও কিছু হলে, ওই আইএএস ও আইপিএস অফিসাররাই দায়ী। এসব দেখেশুনে একটাই কথা জানতে ইচ্ছে করছে, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীদের কি কোনো দায়ই নেই?

আর এই বৈঠক কেন সরাসরি সম্প্রচার করা হবে? সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য।  মানুষ তো কথা শুনতে চায় না। তারা কাজ চায়। তারা চায়, রাজ্যে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা বন্ধ হোক। হত্যা বন্ধ হোক। ধর্ষণ বন্ধ হোক। আর কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায় নিক সরকার, পুলিশ ও প্রশাসন। শুধু মৌখিক দায় নয়, তখন শাস্তি দিতে হবে তাদের। না হলে, ঘটনা ঘটতেই থাকবে, তারপর এরকম বৈঠকও হবে, হতেই থাকবে।