1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ জানুয়ারি ২০১৭

২০১৫ সালে নড়াইলে এক গৃহবধুকে গাছের সঙ্গে বেধে মারধোরের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসায় বেশ আলোচিত হয়েছিল৷ ঘটনায় গৃহবধু ববিতার স্বামী সেনা সদস্য মো. শফিকুল শেখসহ ন'জন আটক হলেও, কাজটা কিন্তু এত সহজ ছিল না৷

https://p.dw.com/p/2VlNF
বাংলাদেশ পুলিশ
ছবি: picture-alliance/dpa

নির্যাতিত গৃহবধু ববিতা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘২০১৫ সালের ৩০শে মার্চ আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের লোহাগড়ার কাশিপুর ইউনিয়নের এড়েন্ডা গ্রামের বাড়িতে আমাকে গাছের সঙ্গে বেধে নির্যাতন চালায়৷ এ ঘটনার পর আমি থানায় মামলা করতে গেলে লোহাগড়া থানা মামলা নেয়নি৷ তবে তার মধ্যে সেই নির্যাতনের ছবি প্রকাশ হয় পত্র-পত্রিকায়৷ এরপর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে রিট করেন৷ তখন হাইকোর্ট জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়৷ একইসঙ্গে আমার চিকিৎসারও নির্দেশ দেয় হয়৷''

ববিতা

ববিতা জানান, ‘‘পাঁচদিন পর, অর্থাৎ ৫ই মে পুলিশ মামলা নেয় এবং আমার স্বামীসহ আটজনকে আটক করে৷ আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং আমাদের আবসস্থল একই উপজেলার শালবরাত গ্রামে আমার বাবার বাড়িতে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়৷''

 

এরপর ‘‘আসামিরা আটক হওয়ার তিন-চার মাস পর জামিন পেয়ে যায় এবং আদালতে এখনও মামলাটির বিচার চলছে'', জানান ববিতা৷

সুপ্রিমকোর্টে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আর কেউই নন৷ তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ বা এইচআরপিবি-এর প্রেসিডেন্ট৷ এই সংগঠনের পক্ষ থেকেই তিনি রিট আবেদনটি করেছিলেন৷ মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার এবং আইনগত অধিকারের পক্ষে কাজ করছি৷ যেখানেই এটা লঙ্ঘিত হয় সেখানেই আমরা আইনগত লড়াই চালাই৷''

তাঁর কথায়, ‘‘এর মধ্য দিয়ে দেশের নাগরিকরা যেমন উপকৃত হন, তেমনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অনেক আদেশ ও নির্দেশনাও পাওয়া যায়, যা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য অনুকরণীয়৷''

সর্বশেষ চিকিৎকদের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশনের ব্যাপারে একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত৷ তাতে হাইকোর্ট স্পষ্ট অক্ষরে এবং বড় হরফে পড়ার উপযোগী করে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে লেখার নির্দেশনা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সার্কুলার জারি করার নির্দেশ দিয়েছে৷ কারণ অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনও রোগিদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে৷ অ্যামেরিকার ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিন বা আইওএম-এর এক প্রতিবেদন বলছে, প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকদের হাতের লেখা বুঝতে না পারার কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ হাজার রোগীর মৃত্যু  হয়৷

মনজিল মোরসেদ

মনজিল মোরশদে জানান, ‘‘আমরা এই প্রেসক্রিপশন নিয়ে রিট করা ছাড়াও নিম্নমানের ওষুধ, ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক এবং ৩৪টি কোম্পানির বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ নিয়ে হাইকোর্টে রিট করে ফল পেয়েছি৷ এরফলে জনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷''

এইচআরপিবি এ পর্যন্ত ২৮০টি জনস্বার্থ মামলা বা রিট করেছে উচ্চ আদালতে৷ এরমধ্যে ৪৮টি মামলায় রায় পাওয়া গেছে৷ জনস্বার্থে এইসব মামলার মধ্যে আইনগত অধিকার, নদী ও পরিবেশ রক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতন, বিচার না পওয়া, অবৈধ আদেশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ঐতিহাসিক স্থান এবং স্থাপনা রক্ষা প্রভৃতি বিষয় রয়েছে৷''

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘আমরা সংবিধানের ষোড়শ সংশোনী নিয়ে রিট করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় যেমন কাজ করেছি, তেমনি লালবাগ কেল্লার স্থাপনা ভাঙার বিরুদ্ধে রিট করেও ফল পেয়েছি৷ এছাড়া সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ও ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের জন্য রিট করে আমাদের পক্ষে আদেশ পেয়েছি৷''

মনজিল মোরসেদের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো সার্বিকভাবে মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার এবং আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা৷ তবে এতে সরাসরি অনেক ব্যক্তি এবং পেশাজীবীরা উপকৃত হয়েছেন৷ খুলনার পাইকগাছার পাক্ষিক গণমিছিল পত্রিকার সম্পাদক এস এম এ রাজ্জাক এর একটি উদাহরণ৷ তিনি বারবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রোষানলে পড়ে নির্যাতন ও আটকের শিকার হন৷ এমনকি পুলিশের সহায়তায় তাঁকে হত্যা চেষ্টারও অভিযোগ আছে৷ রাজ্জাক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘২০১১ সালে মনজিল মোরসেদ তাঁর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে হাইকোর্টে রিট করলে আমার গ্রামের বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হয়৷ এতে করে হয়রানি, আটক বন্ধ হয়৷''

নড়াইলের ববিতা বলেন, ‘‘মনজিল মোরসেদের রিটের পর আমি নিরপত্তা পেয়েছি, চিকিৎসা পেয়েছি, আসামিরাও আটক হয়েছে৷ তবে এখন আসামিরা আবারো হুমকি দিচ্ছে৷ আমার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে৷ পুলিশি নিরাপত্তা হঠাৎ করেই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে৷ আমার মনে হয়, মনজিল মোরসেদ আবার বিষয়টি আদালতে তুললে আমি প্রতিকার পাবো৷''

এস এম এ রাজ্জাক

এটা ধরেই মনজিল মোরসেদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আপনারা কি পরে আদালতের রায়ের ফলোআপ করেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই করি৷ আদালতের আদেশ কার্যকর হলো কিনা, তা আমরা মনিটর করি৷ যদি না হয়, তাহলে আমরা আদালত অবমাননার মামলার মাধ্যমে রায় কার্যকরের পদক্ষেপ নিই৷''

মনজিল মোরসেদ আরো জানান, ‘‘আমরা চাই আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা৷ আইনজীবী হিসেবে তাই আমরা এই পথ বেছে নিয়েছি৷ এটা আমাদের একটা ‘কমিটমেন্ট'৷ আমরা চাই দেশের মানুষ যেন তাঁদের সব ধরনের অধিকার ভোগ করতে পারেন৷ তাঁদের কেনো অধিকারই যেন লঙ্ঘিত না হয়৷''

বন্ধু, মনজিল মোরসেদের এই উদ্যোগটি কি আপনি সমর্থন করেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান