1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা বাড়ছে

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকে জন্ম নিচ্ছে মানসিক অবসাদ৷এ প্রবণতা মহিলাদের, বিশেষ করে বিবাহিতা মহিলাদর মধ্যে বেশি৷ ওই অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করছেন তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/35BPU
Symbolbild Tabletten Selbstmord
ছবি: picture-alliance/PYMCA/F. Finn

এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷ বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানি ডা. আর. নিয়োগী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানসিক অবসাদ যে একটা অসুখ, তার যে চিকিত্সা দরকার, সেটা মনে রাখেন না শতকরা নব্বই জন৷''

বিশ্বে যত মহিলা আত্মহত্যা করেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তার ৩৭ শতাংশ ভারতীয়, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে৷ অধিকাংশই বিবাহিতা৷ সমীক্ষা বলছে, ভারতে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পঞ্চম বড় কারণ আত্মহনন৷ বিবাহিতা মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কেন ? প্রথম এবং প্রধান কারণ লিঙ্গ বৈষম্য৷ দ্বিতীয় কারণ, ভারতে বিবাহ নামক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় মেয়েদের আশা-আকা্ঙ্খা পূরণের পরিসর তেমন নেই বললেই চলে৷ একদিকে সাংসারিক তথা সামাজিক প্রত্যাশার চাপ, অন্যদিকে আর্থিক স্বনির্ভরতার অভাব৷ অল্প বয়সে বিয়ে এবং অল্প বয়সে মাতৃত্বের দায় দায়িত্ব৷ মেয়েদের জীবনে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা৷ সেই চাপটা এসে পড়ে মনের উপর৷ এই চাপ উপশমে যদি সে কাউকে, বিশেষ করে স্বামী বা অন্য পরিজনকে পাশে না পায়, তাহলে সেটা পরিণত হয় মানসিক অবসাদে৷ জীবন সম্পর্কে দেখা দেয় এক অনীহা, বিতৃষ্ণা৷ বাঁচার ইচ্ছেটা চলে যায়৷ আত্মহননকে এই চাপ থেকে মুক্তির সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয়৷ এর পাশাপাশি আরো একটা বড় কারণ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞানতা৷

‘ মানসিক অবসাদের পেছনে আছে নানা কারণ, সামাজিক লিঙ্গ বৈষম্য অন্যতম’

সমীক্ষার এক পরিসংখ্যানে বলা হয়,  ১৯৯০ সালে যেখানে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার, ২০১৬ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৩১৪ অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি৷ এ বিষয়ে ডা. আর. নিয়োগী বললেন, ‘‘মূলত এর বড় কারণ হচ্ছে জেনেটিক বা জিনঘটিত, যদিও এটা প্রমাণ করার মতো বৈজ্ঞানিক স্টাডি এই মূহুর্তে আমাদের হাতে নেই৷ তবে আগামী দিনে আমরা সেটা করবো, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে৷ যদিও অন্যান্য রাজ্যেও আত্মহত্যার ঘটনা যথেষ্ট বেশি৷ দ্বিতীয়ত, মানসিক অসুস্থতার চিকিত্সা দেশে খুব কম৷ বস্তুত মানসিক অসুস্থতার প্রধান কারণ অবসাদ৷ দেখা গেছে, ভারতে ১০০ জন মানসিক অবসাদে ভুগলে ৯০ জন চিকিত্সা সহায়তা নেন না৷ অন্যদিকে জার্মানি বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মানসিক অবসাদের চিকিত্সা সহায়তা নেন না মাত্র ৩০ থেকে ৪০ জন৷ এক কথায় ভারতে যেখানে চিকিত্সা সহায়তা নেন না শতকরা ৯০ জন, সেখানে ঐসব দেশে নেন না শতকরা ৩০ থেকে ৪০ জন৷''

মানসিক অবসাদের প্রধান কারণ সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানি ডা. নিয়োগী ডয়চে ভেলেকে বললেন, মানসিক অবসাদের পেছনে আছে নানা সামাজিক কারণ. সামাজিক লিঙ্গ বৈষম্য যার অন্যতম৷ তৃতীয়ত, পশ্চিমী মিডিয়া, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে সুইসাইডের ব্যাপক প্রচার৷ কোনো আত্মহত্যার ঘটনার বিভিন্ন দিক অনুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়৷ যেমন, কেন, কিভাবে এবং কী অবস্থায় আত্মহত্যা করলো ইত্যাদি৷ সেই মেথডটা তাঁরা নিয়ে নেয় এবং সেইভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করে৷ যেমন ধরুন, ২০১৪-১৫ সালে কলকাতায় কিছু হাইরাইজ বিল্ডিং তৈরি হয়, সেখান থেকে অনেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ এইসব ঘটনা ফলাও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরা হয়৷ অবশ্য, উঁচু বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল বয়স্করা বেশি৷ এসবের পরও একটা কথা বলা যায়, আত্মহননের সব থেকে বড় ভূমিকা গার্হস্থ্য হিংসা৷ যেমন ধরুন, কাজ করতে ইচ্ছা করছে না অবসাদের কারণে৷ ঘরের অন্যরা মনে করছে, সে ইচ্ছা করে কাজ করছে না৷ মহিলারা এমনিতেই জেনেটিক্যালি বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়৷ তার সঙ্গে আছে প্রেম-ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যান, ব্যর্থতা, বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি৷

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আত্মহত্যার হার সমান নয়৷ দক্ষিণী রাজ্য কর্নাটকের প্রতিলাখে ৩০ জন. তামিলনাড়ুতে ৩০ জন. অন্ধ্রপ্রদেশে প্রতিলাখে ২৫ জন৷ আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে সবথেকে কম জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং দিল্লি,পাঞ্জাব, ঝাড়খন্ড এবং বিহারে৷ পুরুষদের আত্মহত্যার পেছনে সাধারণত কাজ করে মদ ও মাদকাসক্তি, গার্হস্থ্য হিংসা, দারিদ্র্য তথা বেকারত্ব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান