1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষের আয়ু বাড়াতে প্রাণীদের অনুকরণ

৬ আগস্ট ২০১৮

বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে অতীতের তুলনায় মানুষের গড় আয়ু অবশ্যই বেড়েছে৷ ভবিষ্যতে মানুষ কি আরও বেশিদিন বাঁচতে পারবে? জীবজগতের কাছে শিক্ষা নিয়ে গবেষকরা সেই পথেই এগোনোর চেষ্টা করছেন৷

https://p.dw.com/p/32fiV
ছবি: Imago/blickwinkel

আয়ু বাড়ানো সম্ভব৷ কমপক্ষে ল্যাবের পরিবেশে ফলের মাছির ক্ষেত্রে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে৷ কোলন শহরে মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটে গবেষকরা তাদের উপর বিশেষ খাদ্যের প্রভাব পরীক্ষা করছেন৷

মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের ল্যাবে দু'টি আধারে মাছি রাখা হয়েছে৷ বাম দিকের কাচের আধারে মাছিরা স্বাভাবিক খোরাক পাচ্ছে৷ ডান দিকের আধারের মাছিরা আজীবন বিশেষ খাদ্য খাচ্ছে৷ তারা খুবই চটপটে৷ কাচ বেয়ে আরও দ্রুত উপরে উঠছে৷ স্বাভাবিক খাদ্য খাওয়া মাছিদের তুলনায় তাদের আয়ুও বেশি৷ অথচ দুই আধারের মাছির একই বয়স৷ সেবাস্টিয়ান গ্র্যোনকে বলেন, ‘‘শুধু ক্যালোরির পরিমাণ আসল বিষয় নয়৷ প্রোটিনের মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ অর্থাৎ মাছিদের কম প্রোটিনযুক্ত খাবার দিলে তারা বেশিদিন বাঁচে এবং বয়স হলেও তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে৷''

পাশের ল্যাবেই বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষক মার্টিন ডেনৎসেল নেমাটোড প্রজাতির কীটের আয়ু বাড়ানোর কাজ করছেন৷ তিনি তাদের এমন এক অ্যাকটিভ এজেন্ট খেতে দিচ্ছেন, যা পশুদের সব কোষেই পাওয়া যায়৷ তার নাম গ্লুকোসামিন৷ খাবারে তা মেশালে কীটদের বয়সজনিত স্নায়ু ও পেশির রোগ প্রতিরোধ করা যায়৷ তার প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ গ্লুকোসামিন ছাড়া এই কীট বয়স হলে শক্ত ও অচল হয়ে পড়ে৷ গ্লুকোসামিন পেলে তারা সক্রিয় থাকে, তাদের আয়ুও বেড়ে যায়৷

দারিও ভালেন্সানোর নেতৃত্বে এক গবেষকদল কিলিফিশ প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে আরও একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছে৷ বিজ্ঞানীরা তাদের চারাপোনার মল সংগ্রহ করে বয়স্ক কিলিফিশদের খাওয়াচ্ছেন৷ এর মাধ্যমে কচি মাছের আন্ত্রিক ব্যাকটিরিয়ার মিশ্রণ বয়স্কদের শরীরেও প্রবেশ করছে৷ এক ফিটনেস পরীক্ষায় তার ফল দেখা যাচ্ছে৷

পরীক্ষামূলক জলাধারে একই বয়সি, বয়সের ভারে কাবু মাছ সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে৷ কম্পিউটারের পর্দায় গবেষকরা তাদের ফিটনেস পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তাতে দেখা গেল, যে সব বয়স্ক মাছ চারাপোনাদের মল খেয়েছে, তারা অনেক চাঙ্গা অবস্থায় ঘোরাফেরা করছে৷ তাছাড়া তাদের আয়ু বাকিদের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে

ইঁদুরের ক্ষেত্রেও গবেষকরা আয়ু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন৷ ছবির বামে ইঁদুরগুলি কম খোরাক পাচ্ছে৷ তাতে তারা শুধু রোগা হচ্ছে না, তাদের আয়ুও বাড়ছে৷ ইঁদুরও মানুষের মতোই স্তন্যপায়ী প্রাণী৷ মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের সেবাস্টিয়ান গ্র্যোনকে বলেন, ‘‘আমরা আরও জানি, যে ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষার সময় ওষুধপত্র বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের আয়ু বাড়ানো সম্ভব৷ অর্থাৎ মানুষের ক্ষেত্রেও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷''

তবে ইয়েনা শহরে লাইবনিৎস ইনস্টিটিউটে তাঁর সহকর্মীরা তা বিশ্বাস করেন না৷ কারণ মানুষের বার্ধক্যের প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল৷ ক্রিস্টফ এংলার্ট বলেন, ‘‘কোনো পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া আরও নিখুঁত করে তোলা যেতে পারে৷ তার ফলে সেটি আরও বেশিকাল চালু থাকে৷ যেমন গাড়ির ইঞ্জিন আরও উন্নত করলেও কখনো হতো ক্লাচ বা বডি খারাপ হয়ে যেতে পারে৷ অর্থাৎ সব সময় কোনো না কোনো অংশ সীমিতভাবে কাজ করতে পারে৷ সব মিলিয়ে আমরা ১২০ বছরের বেশি অতিক্রম করতে পারবো না৷''

কিন্তু ভবিষ্যতে কি আরও বেশি মানুষ শারীরিকভাবে সক্ষম ও সুস্থ থেকেও ১০০ বছরের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারবেন? জেব্রা মাছ সেই লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করতে পারে৷ গোটা জীবন জুড়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নবীকরণ করার অসাধারণ ক্ষমতা তাদের রয়েছে৷ লার্ভা বা শূককীট অবস্থায়ই তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গড়ে তোলার পেছনে যে জিন কাজ করে, ইয়েনা-র গবেষকরা তা শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷

যে জিন শুক্রকীটের মধ্যে স্নায়ুর বৃদ্ধি ঘটায়, সেটি বেশি বয়সেও খারাপ হয়ে যাওয়া যকৃতও পুরোপুরি মেরামত করতে পারে৷ গবেষকরা এখনো জানে না, জেব্রা মাছ ঠিক কীভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নবীকরণ করে৷ কিন্তু সেই জ্ঞান থেকে মানুষেরও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নবায়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে তাঁদের মনে আশা রয়েছে৷

ভবিষ্যতে আমাদের আয়ু কতটা বাড়বে, এখনো তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়৷ তবে গবেষকদের আশা, তাঁরা বার্ধক্যের প্রক্রিয়ার গতি কমাতে পারবেন৷

মাইকে শেফার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান