1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মারিও ভার্গাস ইয়োসা - এক রাজনীতিক লেখকের নোবেল জয়

২৬ অক্টোবর ২০১০

‘‘আমি এতই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে, প্রথমে তো ফোন কলটি পেয়ে ভেবেছিলাম কেউ হয়তো ঠাট্টাই করছে৷’’ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের খবর পেয়ে এইভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন মারিও ভার্গাস ইয়োসা৷

https://p.dw.com/p/Po3w
মারিও ভার্গাস ইয়োসাছবি: AP

মারিও ভার্গাস ইয়োসার লেখায় কল্পনা ও বাস্তবতা যেন একাকার হয়ে গেছে, যা পাঠকদের আকৃষ্ট না করে পারেনা৷ নিজের জীবনের খণ্ডচিত্রই যেন তুলে ধরেছেন তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে, যেখানে অকপটে ঠাঁই পেয়েছে রুঢ় বাস্তবতাও৷

‘‘৭৪ বয়সি এই লেখক ব্যক্তির প্রতিরোধ ও বিচার ক্ষমতা এবং পরাজয়ের মর্মভেদী অভিব্যক্তির এক অসাধারণ চিত্র এঁকেছেন, সেজন্যই তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া৷'' বলা হয়েছে সুইডেনের নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে৷ এই প্রসঙ্গে সাহিত্য সমালোচক ও ল্যাটিন অ্যামেরিকা বিশেষজ্ঞ কের্সটেন ক্নিপ বলেন, ‘‘তাঁর এই নোবেল জয় খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল৷ এ ব্যাপারে কোরিয়া ও আফ্রিকার কোনো কোন লেখকের নাম শোনা গিয়েছিল, অবশেষে পুরস্কারটি পেলেন মারিও ভার্গাস ইয়োসা৷ অন্যদিকে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর লেখা ল্যাটিন অ্যামেরিকার সাহিত্যকে একটা দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছে৷ তাই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যথার্থই যোগ্যতা রাখেন বিশিষ্ট এই লেখক৷''

নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে একটা প্রবণতা কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ আর তা হল সমাজ ও রাজনীতি ক্ষেত্রে যে সব লেখক উচ্চকন্ঠ, পুরস্কার দেওয়ার ব্যাপারে সেই সব লেখককেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ যেমন উল্লেখ করা যায় হ্যার্টা ম্যুলার এবং ওর্হান পামুক'এর নাম৷ এই সারিতে এবার যুক্ত হল ল্যাটিন অ্যামেরিকার একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক কন্ঠ মারিও ভার্গাস ইয়োসার নামও৷

ল্যাটিন অ্যামেরিকার 'বুম লাটিনোআমেরিকানো' সাহিত্য আন্দোলনের পুরোধা মারিও ভার্গাস ইয়োসার জন্ম পেরুর আরেকিপায় ১৯৩৬ সালের ২৮ মার্চ৷ ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতা ও সেই সাথে লেখালিখি শুরু৷ লিখেছেন ৩০টিরও বেশি উপন্যাস, প্রবন্ধ ও নাটক৷ গোয়েন্দা উপন্যাস থেকে শুরু করে প্রেমের কাহিনি ও কমেডি কিছুই বাদ যায়নি৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম সাড়া জাগান ১৯৬০ সালে 'দ্য টাইম অব দ্য হিরো' এই উপন্যাসের মাধ্যমে৷ ইয়োসার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল 'দ্য গ্রিন হাউস', 'কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথেড্রাল', 'আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড স্ক্রিপ্ট রাইটার' ইত্যাদি৷ তাঁর সর্বনতুন বই ‘‘দ্য ড্রিম অব দ্য কেল্ট'' এক আইরিশ বিদ্রোহীকে নিয়ে লেখা৷ ৩ নভেম্বর এ বই প্রকাশ পাওয়ার কথা৷

নোবেল পাওয়ার পর বিশ্বের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এল দক্ষিণ অ্যামেরিকার সাহিত্য, বলেন ইয়োসা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এখন আমরা জানলাম, ল্যাটিন অ্যামেরিকা সংগীতকার, চিত্রশিল্পী ও দার্শনিক সৃষ্টি করতে পারে৷''

এক সময় বাম ঘরানার ইয়োসা ছিলেন কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মতাদর্শের অনুসারী ৷ কিন্তু কিউবায় ভিন্ন মতাদর্শী এক লেখকের লেখালিখির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় রাজনৈতিক চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন আসে ইয়োসার৷ শিল্পীর স্বাধীনতাকে বিপন্ন মনে হয়েছে তাঁর৷ হয়তো বা সে কারণেই ঝুঁকে পড়েছেন তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে৷

কর্মসূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে তাঁকে৷ সেই থেকে ভালবাসা ভ্রমণে৷ জীবনের অনেকটা সময়ই কেটেছে ইউরোপ ও উত্তর অ্যামেরিকায় ৷ ১৯৯৩ সালে নিয়েছেন স্পেনের নাগরিকত্বও৷ নোবেল জয়ের আগেও অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্পেনের বিখ্যাত সারভান্তেস পুরস্কার, জার্মান পিস প্রাইজ ইত্যাদি৷

চার সন্তানের জনক ইয়োসা এখন নিউ ইয়র্কের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে ল্যাটিন অ্যামেরিকান সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করছেন৷ স্প্যানিস ভাষার প্রতি অপরিসীম ভালবাসা ফুটে ওঠে ইয়োসার কন্ঠে, ‘‘স্প্যানিশ একটি শক্তিশালী সৃজনশীল ও আধুনিক ভাষা, যা বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষের যোগসূত্র৷''

তাঁকে ঘিরে প্রচার মাধ্যমগুলির হৈচৈ প্রসঙ্গে ইয়োসা ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ‘‘কিছুটা পাগলাগারদে থাকার মত অবস্থা হবে আর কি৷ তবে আমি তা সামলে উঠতে পারব৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক