1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিশরে বিবাহবিচ্ছেদের কাহিনী প্রচারের জন্য রেডিও

৩ মার্চ ২০১০

মহসিন সাবের’কে চার বছর পার করতে হয় বিবাহিত সম্পর্কের ইতি টানতে৷ বিচ্ছেদের পর, মিশরের রক্ষণশীল সমাজে নানা গালগল্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন তিনি৷ আর এ হাঙ্গামাময় পরিবেশ থেকে পুত্রকে বাঁচাতে এখনও লড়াই করে চলেছেন সাবের৷

https://p.dw.com/p/MIEm
এবার বিবাহবিচ্ছেদের কাহিনী প্রচার করছে রেডিওছবি: Himalaya

এই সব কিছুর পর সাবের সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর বিয়েই করবেন না৷ আর সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে তিনি ‘রেডিও ডিভোর্সিস' নামে একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক বেতারকেন্দ্র গড়ে তোলেন৷

৩০ বছর বয়সি মহসিন সাবের বলেন, মিশরের সমাজ বিবাহবিচ্ছেদের জন্য নারীদেরকেই শুধুমাত্র দায়ী করে৷ তারা মনে করে, সব ভুল নারীর, তারাই খারাপ, তারাই মূলত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দায়ী৷

‘রেডিও ডিভোর্সিস' তার অনুষ্ঠানে বলে যে নারীরা খারাপ নন৷ যখন মানুষ রেডিও শুনবে তখন তারা বুঝতে পারবে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া মহিলারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে৷ তাছাড়া স্বামীর সঙ্গে যাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তারা যে স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে এমন নয়৷

আরবী ভাষায় এই ইন্টারনেট রেডিও-র নাম ‘‘মোতালাকাত রেডিও''৷ মাত্র কয়েক মাস আগে এর শুরু৷ নানা নামের অনুষ্ঠান প্রচার করছে এই রেডিও৷ তার কোনটার নাম ‘আপনাকে ভুল বোঝা হয়েছে' বা ‘বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া এক পুরুষের দিনলিপি'৷ এছাড়া আরও একটি অনুষ্ঠান প্রচার করছে এই রেডিওটি আর তার নাম হচ্ছে ‘আমি বিচ্ছেদ চাই একথা বলার আগে'৷ এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেয়েদের বড্ড তাড়াতাড়ি বিচ্ছেদের দাবি তোলার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷

ইন্টারনেট ভিত্তিক এই রেডিও প্রচারের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে এবং মিশরের গণমাধ্যমগুলোতে তার খবর ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে৷ সাবের জানান, রেডিওতে তাঁর সহযোগী মাত্র ২০ জন৷ কিন্তু শ্রোতার সংখ্যা অনেক৷ মরক্কো ও লেবাননেও তাদের শ্রোতাও রয়েছে৷ ‘মোতালাকাত রেডিও' র ফেসবুক সদস্য সংখ্যা ১,৭০০ এর বেশি৷

মিশরে দিনদিন বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ফলে এই ইন্টারনেট রেডিওর অনুষ্ঠান অত্যন্ত সময় উপোযোগী হয়েছে৷ সরকারি এক তথ্যানুযায়ী, মিশরে প্রতি ছয় মিনিটে একটি দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে৷যদিও সামাজিক দিক তেকে বিবাহের মূল্যবোধের ওপর জোর দেয়া হয়৷ বিচ্ছেদকে দেখা হয় অবমাননাকর ব্যাপার হিসেবে৷

রেডিওর এই প্রকল্পে সাবের-এর সঙ্গে কাজ করেন তাঁর বন্ধু দোওয়া ইওয়েদা সমাজে নারীর উপর সামাজিক চাপের মাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতার দিকে নির্দেশ করে বলেন, আরব সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ প্রেম ঘটিত কারণে অথবা বাবা-মার চাপে আরবে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়৷ আর এই চাপই একসময় বিবাহবিচ্ছেদের রূপ নেয়৷

২০০০ সাল থেকে মিশরের নারীরা স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছেনা, শুধু এই কারণেই তালাক পেয়ে যেতে পারেন৷ আর কিছুই প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় না৷ এই প্রথা ‘খুলু' নামে পরিচিত৷ তবে সেক্ষেত্রে সেই নারীর সব আর্থিক অধিকার রদ হয়ে যাবে৷ এবং বিয়ের সময় পাওয়া পণও তাকে ফেরত দিতে হয়৷ এই প্রক্রিয়া শেষ হতে ছয় মাস লেগে যেতে পারে৷ তবে নিজের আর্থিক অধিকার বজায় রাখতে চাইলে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং খুবই কষ্টকর হতে পারে মেয়েদের জন্য৷

আরব সমাজে পুরুষদের ক্ষেত্রে অবশ্য স্ত্রীকে তালাক দেয়ার প্রক্রিয়া খুব সহজ৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের ৮০ শতাংশ মামলাই হয়ে থাকে পুরুষদের কারণে৷

প্রতিবেদক : আসফারা হক

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক