মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বছরপূর্তিতে হরতাল
এক বছর আগে সেনা বিদ্রোহে ক্ষমতা হারিয়েছিল মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকার৷ অভ্যুত্থানের এক বছরে প্রতিবাদে সামিল অসংখ্য মানুষ৷ তারা সামরিক আদেশ অমান্য করেছেন, হরতালে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বেরোননি কেউ৷
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফাঁকা ইয়াঙ্গন
স্ট্র্যান্ড রোড হলো ইয়াঙ্গনের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা৷ মঙ্গলবারে সেটি একেবারে শুনশান ছিল৷ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দক্ষিণ এশীয় দেশ মায়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছিল এক বছর আগে৷ সামরিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রতিবাদ জানিয়ে হরতালের ডাক দেয়া হয়েছিল মিয়ানমারে৷
ব্যবসা চালু রাখার আদেশ অমান্য
মান্দালায় রেলস্টেশনের সামনের প্লাজাটি ছিল একেবারে ফাঁকা৷ অ্যাক্টিভিস্টদের কথায়, এটি ছিল ‘নীরব হরতাল’৷ হরতালে অংশ নিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দিয়েছিল জুন্টা৷ প্রতিবাদ জানালে কিংবা সেনার বিরুদ্ধে কোনওরকম মিছিল বা সমাবেশ বা প্রচার করলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের হুমকি দেওয়া হয়েছিল৷
পথে নেমে প্রতিবাদ..
গ্রেপ্তারের হুমকিকে পরোয়া করেননি অনেক প্রতিবাদী৷ মান্দালায় বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল গণতন্ত্রপন্থী ব্যানার৷ তাতে লেখা ছিল, ‘জনগণের ইচ্ছার বিরোধিতা করার স্পর্ধা দেখায় কে’৷ তবে সেদিন কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷
জুন্টাকে সমর্থন
মিয়ানমারের স্টেট নিউজ সার্ভিস জানিয়েছে, রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার সেনাশাসকদের সমর্থনে সমাবেশ হয়েছিল৷ জুন্টা কিছু ক্ষেত্রে সমর্থন পেলেও তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে যথেষ্ট প্রতিরোধ রয়েছে৷ জাতিসংঘ জানিয়েছে, একাধিক হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণ করছে জুন্টা৷ পাশাপাশি, সহিংসতার অভিযোগে জুন্টার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা যৌথভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷
বিচার চলছে সু চির
মিয়ানমারে নেত্রী অং সান সু চি সেনা অভ্যুত্থানের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হন৷ সরিয়ে দেওয়া হয় তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে (এনএলডি)৷ গ্রেপ্তার করা হয় সু চিকে৷ একাধিক ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা চালু করা হয়েছে৷ এর ফলে ১৫০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে নেত্রীর! ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷
‘সিভিল ডিসওবেডিয়েন্স’
গত এক বছরে, বিক্ষোভকারীরা অহিংসভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ একাধিক কর্মসূচি সংগঠিত করেছেন৷ সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী এবং একাধিক পরিষেবার কর্মীদের হরতালে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল৷ এর আগে সর্বশেষ দেশব্যাপী ধর্মঘট হয়েছিল গত ডিসেম্বরে৷ মিয়ানমার জুড়ে শহর ও শহরতলি ছিল একেবারে ফাঁকা৷ মঙ্গলবার ইয়াঙ্গনের বিখ্যাত শোয়েডাগন প্যাগোডার সামনে দেখুন, কোনও মানুষজন নেই৷
সংঘর্ষের এক বছর
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে, মিয়ানমারে একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রতিরোধকে সমূলে বিনাশের চেষ্টা করেছে৷ অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে অহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে৷ ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভের আঁচ আরও বেড়ে গিয়েছিল৷ তখনকার ছবিতে ধরা পড়েছে, ব্যারিকেডের পিছনে লুকিয়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি৷
নথিভুক্ত হওয়া প্রথম মৃত্যু
স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির অনুমান, মিয়ানমারে সামরিক শাসনকালে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷ জাতিসংঘ মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে৷ গত ২১ ফেব্রুয়ারি একজন প্রতিবাদীকে হত্যা করা হয়েছিল৷ তার অন্তিমযাত্রার ছবি দেখা যাচ্ছে এখানে৷ এই মৃত্যুটি প্রথম নথিভুক্ত হয়েছিল৷