1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ'

আরাফাতুল ইসলাম/এআই১৫ মে ২০১৬

বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর ধারাবাহিক হামলার কারণে দেশটিতে বাকস্বাধীনতা চর্চার পরিধি ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সব হত্যাকাণ্ডের কারণে অনলাইনে অনেকেই ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ' বেছে নিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/1ImF3
প্রতীকী ছবি
ছবি: picture-alliance/dpa

বাংলাদেশে গতমাসে তিনজন অ্যাক্টিভিস্ট, এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, এক হিন্দু দর্জি ও একজন পীর খুন হয়েছে৷ দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাদের হত্যা করে৷ এ সব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' এবং জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার আল-ইসলাম'৷

স্থানীয় গণমাধ্যমে জানাচ্ছে, গত ১৪ মাসে দেশটিতে অন্তত ৩৪টি মোটামুটি একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে যাতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৩৫ ব্যক্তি, আহত ১২৯৷ অধিকাংশক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মুক্তমনাদের হত্যা করেছে, যেগুলোর মধ্যে ২৩টি হামলার দায় স্বীকার করেছে মৌলবাদীরা৷ তবে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই দেশটির মাটিতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে আসছে৷

ভুক্তভোগীদের দোষারোপ

গতবছর ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স' অ্যাওয়ার্ডজয়ী মুক্তমনা ব্লগের মডারেটর বন্যা আহমেদ সাম্প্রতিক ধারবাহিক হত্যাকাণ্ড খুব শীঘ্রই বন্ধ হবে বলে মনে করেন না৷ চলতি মাসের শুরুতে বার্লিনে রি:পাবলিকা সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘যেসব লেখক এবং অ্যাক্টিভিস্ট গত কয়েকমাসে খুন হয়েছেন, তারা বাংলাদেশের সমাজে নারী, সংখ্যালঘু এবং সমকামীদের সমান অধিকারের পক্ষে কাজ করেছেন৷ নিহতদের কয়েকজন ধর্মান্ধতার সমালোচনাও করেছেন৷''

রি:পাবলিকায় দেয়া বক্তব্যে আহমেদ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির প্রধানমন্ত্রীসহ একাধিক রাজনীতিবিদের সমালোচনা করেছেন, কেননা তারা সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর শিকারদের দায়ী করে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন৷

এদিকে, মুক্তমনাদের উপর হামলার পরিধি বাড়ায় আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম সূচকগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থানের আরো অবনতি ঘটেছে৷ প্যারিসভিত্তিক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান বেনজামিন ইসমাইল মনে করেন, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ তিনি বলেন, ‘‘গত দু'বছর ধরে একের পর এক গুপ্তহত্যা এবং হামলা সাংবাদিক এবং ব্লগারদের মধ্যে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ' বাড়িয়ে দিয়েছে৷ যদি সরকার এসব প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেয় তাহলে এখনই যেসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচিত, সেগুলো নিষিদ্ধ বিষয়ে পরিণত হবে৷''

সামাজিক যোগাযোগ গবেষক ফাহিম হোসেইন মনে করেন, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর কারণে বাংলাদেশের মানুষ সামগ্রিকভাবে নিজেদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই নিরাপত্তাহীনতা ব্যক্তি পর্যায় থেকে অনলাইন এবং অফলাইন মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ছে৷''

আইসিটি অ্যাক্ট ‘বাকস্বাধীনতার পরিপন্থি'

বন্যা আহমেদ, যিনি ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম' অ্যাওয়ার্ডের একজন বিচারক, বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অ্যাক্টের সমালোচনা করেছেন৷ তিনি মনে করেন, এই অ্যাক্ট ব্যবহার করে দেশটিতে বাকস্বাধীনতার পথরুদ্ধ করা হচ্ছে৷

আহমেদ বলেন, ‘‘সংশোধিত আইসিটি অ্যাক্টে ইন্টারনেটে ধর্মের সমালোচনাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে যার শাস্তি ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড৷ আর এই আইন ব্যবহার করে ইতোমধ্যে অনেক সমালোচনামূলক লেখালেখি করা লেখক, ব্লগার এবং সাংবাদিককে হেনস্থা করা হয়েছে৷ পুলিশে এই আইনের আওতায় অনেককে গ্রেপ্তার করেছে৷''

দ্য স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক ইন কোরিয়া-র সহকারী অধ্যাপক ফাহিম হোসেইনও আহমেদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে মুক্তমনারা সরকার এবং মৌলবাদী – উভয়পক্ষ থেকেই চাপের মধ্যে রয়েছে৷ আর তাই মুক্তমনারা অনলাইনে নিজেদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে হুমকি অনুভব করছেন, বলেন হোসেইন৷

বাংলাদেশে মুক্তমনাদের কি নিজস্ব মত প্রকাশের আর কোনো জায়গাই নেই? জানান মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান