1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মুক্তিযুদ্ধ করে বাঙালিরাই দেশ স্বাধীন করেছে’

২৯ ডিসেম্বর ২০১০

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ এক বিস্ময়৷ কাদের সিদ্দিকী তৈরি করেছিলেন এই বাহিনী৷ ডিসেম্বরে ঢাকা জয়েও বিশেষ ভূমিকা রাখে কাদেরিয়া বাহিনী৷

https://p.dw.com/p/zqzX
Kader Siddique
ছবি: Mustafiz Mamun

কাদের সিদ্দিকী কোন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না৷ মুক্তিযুদ্ধের আগে তাঁর কোন সামরিক পরিচয়ও ছিল না৷ তবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি৷ সেই কাদের সিদ্দিকী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন লক্ষাধিক যোদ্ধা নিয়ে৷ একাত্তরে ১৮ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা আর ৭২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে তৈরি হয় তাঁর বাহিনী, নাম ‘কাদেরিয়া বাহিনী'৷ অল্প সময়ে এত মানুষকে কিভাবে একত্রিত করেছিলেন কাদের সিদ্দিকী? এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সত্যিকার অর্থে কাদেরিয়া বাহিনী পৃথিবীর গেরিলা যুদ্ধের এক বিস্ময়৷ কিন্তু এই বাহিনী গঠনে আমি কোন ভূমিকা রাখিনি৷ আমার নামটা সাধারণ মানুষ, তারাই এর সঙ্গে যোগ করেছে৷ এবং তারা বুঝবার জন্যে এই নামটা এখানে জড়িত করেছে৷’’

আহত সিদ্দিকী

কাদের সিদ্দিকী'র এই গেরিলা বাহিনী যুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল অঞ্চলে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ পাকিস্তানি সেনারা একাত্তরে যেসব এলাকায় বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি, তারই একটি টাঙ্গাইল৷ এই অকুতোভয় সেনা ভূয়াপুরের কাছে মাকরাই'র যুদ্ধে আহত হন৷ এখনও সেসময়ের কথা পরিষ্কার মনে করতে পারেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘এই যুদ্ধে একদিকে পাকিস্তানিরা ছিল, অন্যদিকে আমরা৷ তিন দিন ধরে যুদ্ধ হয়েছে৷ আমার গায়ে গুলি লাগে ১৬ই আগস্ট৷ আমার হাতে এবং পায়ে গুলি লাগে৷ এবং আমি গৌরববোধ করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে আমি জীবন দিতে না পারলেও শরীরের পবিত্র রক্ত দিতে পেরেছি৷’’

বাঘা সিদ্দিকী

যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েও দেশ ছাড়তে রাজি ছিলেন না বাঘা সিদ্দিকী৷ বরং ভারতের সীমান্তে চিকিৎসা নিয়েই ফিরে আসেন আবার রণক্ষেত্রে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আহত হওয়ার পরে আমার মনে হয়েছিল, আমি যদি কোন কারণে অচল হয়ে যাই, তাহলে ওরা আমাকে বন্দি করতে পারে৷ বন্দি করলে হত্যা করতে পারে৷ সেজন্য আমি চিকিৎসা করতে ভারতের সীমান্তে গিয়েছিলাম৷ যেতে লেগেছিল সাতদিন, ছিলাম সাতদিন, চারদিন পর আমি আবার যুদ্ধে ফিরে আসি৷’’

Bangladesch Ermordete Intellektuelle
একাত্তরের নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের কঙ্কালছবি: Dhaka National Archives

জনসমর্থন

কাদেরিয়া বাহিনী পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে বহু গেরিলা যুদ্ধে জয়লাভ করে৷ রণক্ষেত্রের সাফল্য দিয়েই সাধারণ মানুষের মন জয় করে নেয় এই বাহিনী৷ পেতে থাকে মানুষের আস্থা, বাড়ে গ্রহণযোগ্যতা৷ কাদের সিদ্দিকী এই জনসমর্থনকেই গুরুত্ব দেন সবচেয়ে বেশি৷ তিনি বলেন, ‘‘১২ই মে বল্লার যুদ্ধের আগে মানুষ মনে করতো আমরা বক্তৃতা করতে পারি৷ কিন্তু আমরা যুদ্ধ করতে পারবো না৷ কিন্তু সেই যুদ্ধে জয়ের পর আমরা যখন পাচঁজন হানাদারের লাশ বল্লা হাইস্কুলের মাঠে এনে রাখি, তখন হাজার হাজার মানুষ এসে তাদের দেখেছে এবং বলেছে যে, আমাদের এই ছোট ছোট ছেলেরাও যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের হারাতে পারে৷’’

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণে কাদের সিদ্দিকী

একাত্তরের ডিসেম্বরে ঢাকা জয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে কাদেরিয়া বাহিনী৷ ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন কাদের সিদ্দিকী৷ সে এক বিরল মুহূর্ত৷ তিনি বলেন, ‘‘সেখানে (আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে) কোন দর্শক হিসেবে যাইনি৷ যুদ্ধ করতে করতে, যোদ্ধা বাহিনী সাথে নিয়ে, ঢাকা দখল করেছিলাম৷’’

বঙ্গবীর

মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য বীর উত্তম উপাধি লাভ করেন কাদের সিদ্দিকী৷ ‘বঙ্গবীর' নামেও পরিচিত তিনি৷ মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ গড়ার রাজনীতিতে নেমে পড়েন কাদের সিদ্দিকী৷ স্বাধীনতার পর থেকে আজকের বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের জনগণ আগের চেয়ে অনেক বুঝতে পারে৷ সচেতন হয়েছে৷ এখন শুধু তাদের অংশগ্রহণটা করাতে পারলেই আমি মনে করি, একাত্তরের চাইতেও আমরা খুব তাড়াতাড়ি যা চাই তা করাতে পারবো৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক