1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুম্বই : স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন ?

২৭ জুলাই ২০১০

ভারতের সবচেয়ে বড় শহর মুম্বই-এ দু’কোটি মানুষের বাস৷ আরব সাগর তীরবর্তী এই বন্দর নগরতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রাচুর্যের পাশাপাশি অকল্পনীয় দারিদ্র্যও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ এ বৈপরীত্যই তুলে ধরেছেন আলতাফ টাইরেওয়ালা৷

https://p.dw.com/p/OViF
‘নো গড ইন সাইট' নামক উপন্যাসের লেখক আলতাফ টাইরেওয়ালাছবি: presse

৩৩ বছর বয়সি আলতাফ টাইরেওয়ালা বাস করেন মুম্বাই-এর দক্ষিণে শহরতলী বাইকালাতে৷ তবে লেখালিখির জন্য তাঁর প্রিয় জায়গা দু'কিলোমিটার দূরে শান্ত ও সবুজ এক পার্ক৷ এখানেই আসেন তিনি প্রতিদিন৷ ফুলের সমারোহ ও পাখির কলকাকলিতে খুঁজে পান লেখার প্রণোদনা৷ তাঁর প্রথম ইংরেজি উপন্যাস ‘নো গড ইন সাইট'-এ ফুটে উঠেছে আজকের মুম্বই শহরেরই বৈচিত্র্যময় এক চিত্র৷

আলতাফ টাইরেওয়ালার ভাষায়, ‘‘মুম্বই আমার জন্মভূমি৷ এই শহর অপ্রত্যাশিতভাবে আমার দৃষ্টির পরিধি বিস্তৃত করেছে, সাহায্য করেছে আমার মানসিক বর্ধনে৷ অন্যদিকে কখনও সখনও আমার পিছিয়ে পড়ার জন্যও দায়ী এই শহর৷''

চোখ ঝলসানো এক শহর মুম্বই৷ যেখানে রয়েছে এক দিকে অঢেল প্রাচুর্য, অন্যদিকে দারিদ্র্যের তীব্র কষাঘাত৷ জনসাধারণের অর্ধেকেরও বেশি বাস করে দারিদ্র্যসীমার নীচে৷ বস্তিতে অনাহারে অর্ধাহারে অতিবাহিত করতে হয় তাদের জীবন৷ অন্যদিকে ২০০-এরও বেশি ডায়েট ক্লিনিক গড়ে উঠেছে এই শহরে, যেখানে এক শ্রেণির মানুষ সখের তাগিদে ডায়েটের নিয়ম কানুন শিখছেন৷ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অর্ধাহারে থাকার৷

Altaf Tyrewala Autor
লেখালিখির জন্য তাঁর প্রিয় জায়গা শান্ত ও সবুজ এই পার্কছবি: DW

মুম্বই নগরটিই যেন এক উপন্যাস৷ অদ্ভুত আকর্ষণীয় শক্তি এই নগরীর৷ উত্তেজনাকর কিন্তু জটিল৷ আলতাফ টাইরেওয়ালা স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন অ্যামেরিকার নিউইয়র্কে৷ কিন্তু মুম্বই-এর টানে আবার ফিরে এসেছেন তিনি এই শহরে৷ আলতাফ বলেন, ‘‘আমি নিউইয়র্ক শহরের এমন সব দিক লক্ষ্য করেছি, যা বিদেশি ছাত্রদের সচরাচর চোখে পড়েনা৷ এক সাথে তিনটি কাজ করতে হোত আমাকে৷ বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে না খেয়ে পয়সা বাঁচাতে হয়েছে আমাকে৷ এই সব কিছুই কাল্পনিক অ্যামেরিকার চিত্রটা নষ্ট করেছে আমার মন থেকে৷''

আলতাফ টাইরেওয়ালা স্ত্রী, মা ও ১০ মাসের সন্তানসহ বাইকালার এক বিশাল দালানের ছোট্ট এক অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন৷ ইসলাম ধর্মের ইসমাইলি সম্প্রদায়ের এক উদারমনা পরিবারে জন্ম তাঁর৷ যাদের ইমাম আগা খান৷ মুম্বইকে বহু ধর্মের শহর বলা যায়৷ কিন্তু তবুও মুসলমানদের সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা যেন মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে আছে৷

আলতাফ টাইরেওয়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমার বইটি লেখার শুরুতে আমি অন্যদের দৃষ্টিতে সবকিছু দেখার চেষ্টা করেছি৷ আমার কাছে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগলো, এই সব মানুষের জীবন খুব কঠিন৷ এরপর থেকে আমি আমার কর্মস্থলে তুচ্ছ বিষয়ের দিকে লক্ষ্য করার চেষ্টা করেছি৷ মনে হয়েছে বন্ধু বান্ধব কিংবা পরিচিতদের কাছে অন্য কিছুর চেয়ে আমার মুসলমান পরিচয়টাই বড়৷''

আলতাফ তাঁর নতুন উপন্যাসটিতেও তুলে ধরেছেন হিন্দু মুসলমানের সমস্যাটি৷ দেখিয়েছেন কী ভাবে এক হিন্দু তরুণী পরিবারের মতের বিরুদ্ধে এক মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে সামাজিক ও পারিপার্শ্বক নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে৷

প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভাগ্যান্বেষণে আসেন মুম্বই শহরে৷ কেউ সফল হয় কেউ হয় না৷ একটু ভাল এলাকায় নিজস্ব একটি বাড়ি কেনার স্বপ্নও সফল হয়নি আলাতাফ টাইরেওয়ালার৷ মুম্বই শহরকে নিয়ে আগেও অনেক গ্রন্থ লেখা হয়েছে কিন্তু সবগুলো যে সমাদর পেয়েছে, তা বলা যায় না৷ এ প্রসঙ্গে টাইরেওয়ালা বলেন, ‘‘মুম্বই সম্পর্কে এমন কিছু ভাল বই রয়েছে, যাতে তুলে ধরা হয়েছে এই শহরের হুবহু এক চিত্র৷ যেমন ইউনিস ডি সুসার ‘ডেঞ্জার লুক' উপন্যাসটি৷ যে অল্প কয়েকটি বইতে মুম্বই-এর সঠিক চিত্র উঠে এসেছে, তার মধ্যে এই বইটি অন্যতম৷ লেখিকা দেখিয়েছেন কী ভাবে শিক্ষিত অবিবাহিত এক বয়স্ক মহিলা শহরের নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করছেন৷''

মুম্বই শহরকে ঘিরে কোনো কোনো মুহূর্তে আলতাফ টাইরেওয়ালার মনে যে আতঙ্ক এসে ভর করেনি, তা নয়৷ স্ত্রী অ্যামেরিকান নাগরিক হওয়ায় গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি৷ দুমাস থেকেও এসেছেন অ্যামেরিকায়৷ কিন্তু মুম্বইকে ছেড়ে থাকা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে৷ তাই তো আবার ফিরে এলেন তিনি এই শহরটিতে৷

টাইরেওয়ালার ভাষায়, ‘‘অ্যামেরিকায় অভিবাসীদের জন্য সুযোগ সুবিধাগুলি যে লোভনীয়, তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ আমার পক্ষে দেশ ত্যাগ করা কঠিনও নয়৷ কিন্তু আমি যে এই শহর ছাড়তে চাইনা, সেটা বোঝার জন্য এটা যেন এক পরীক্ষা ছিল৷ কেননা হৃদয়ে যে গভীর শান্তি আমি এখানে অনুভব করি, তা অন্য কোথায় পাবনা৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক