1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুসলমানদের শান্তি শোভাযাত্রা শেষ হলো ‘শান্তিতেই’

সুলাইমান নিলয়
১৭ জুন ২০১৭

সম্প্রতি ইউরোপে যেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার অধিকাংশের দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’৷ ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে শান্তিপ্রিয় মুসলমানরা জার্মানির কোলন শহরে শান্তি সমাবেশে মিলিত হন৷

https://p.dw.com/p/2esCi
Köln Muslimischee Demonstration gegen Terror
ছবি: DW/S. Niloy

তবে জার্মানিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন তুর্কি-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স (ডিটিব) এই সমাবেশে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে কিনা, সেটা নিয়ে কারো কারো মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ ছিল৷ সব উদ্বেগ ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ শেষ হয়েছে৷

মূলত দু'জন সাধারণ মানুষ এই সমাবেশের আহ্বান জানালেও দ্রুতই তাতে সাড়া দেন জার্মানির মূলধারার কয়েকজন রাজনীতিবিদ এবং মুসলমানদের ছোট ছোট কয়েকটি সংগঠন৷ সমাবেশের আয়োজকদের যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতরা নিজেদের মুসলিম পরিচয়কে বড় করে দেখায়, তাই মুসলিমদেরও এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শক্ত প্রতিবাদ জানানো উচিত৷ 

আর এমন সমাবেশের বিরোধিতকারী তুর্কি সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে, এ ধরণের সমাবেশ আয়োজন করলে প্রথমে মুসলমানদেরকে দায় দেয়া হয়৷ এরপর প্রতিবাদ জানানো হয়৷ এটা করা উচিত না৷ কেননা সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই৷ পাশাপাশি রোজার সময় মুসলমানদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদের মধ্যে এধরনের সমাবেশ করা উচিত নয় বলেও মনে করে জার্মানিতে মুসলামানদের সবচেয়ে বড় এই সংগঠনটি৷

কোলনের হয়মার্কটের সমাবেশে অংশ নেয়া মুসলমানরা মনে করেন, রোজার মাসে আমাদের স্বাভাবিক জীবনতো থেমে থাকে না৷ চাকুরি করি, ব্যবসা বাণিজ্য করি, সব কাজ করি, প্রতিবাদ জানাতে আসলেই সমস্যা? সে যাইহোক, সমাবেশ উপলক্ষ্যে আশপাশে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েছে৷

জার্মান পুলিশ সম্পর্কে একটা কথা বলা হয়, তারা সহজে নিজেদের উপস্থিতি দেখাতে চায় না৷ কিন্তু এই সমাবেশে ব্যতিক্রম দেখা গেছে৷ বিপুল পরিমাণ পুলিশ বেশ আগে থেকেই সমাবেশস্থলে হাজির ছিলো৷ সমাবেশের মাঝে শোভাযাত্রাও বের হয়৷ যা কোলন শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসে৷ এ সময়ও শোভাযাত্রার সামনে পেছনে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল৷

মুসলিম শান্তি শোভাযাত্রা ও সমাবেশে মুসলমানরা যেমন এসেছেন, তেমননি ভিন্ন ধর্মের মানুষও এসেছেন৷ অংশগ্রহণকারী মুসলমানদেরও সমাবেশে অংশগ্রহণের কারণে বৈচিত্র্য রয়েছে৷ আবার অংশগ্রহণকারীদের অনেকের মধ্যে দু'টো জায়গায় মিলও রয়েছে৷ তারা সবাই বলতে চান, ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ অভিজ্ঞতার ফলে নেওয়া সিদ্ধান্তই তাদের সমাবেশে আসার কারণ হিসাবে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকে জানিয়েছেন৷

ফ্রাঙ্কফুট থেকে আসা ইমানের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, প্রাকটিসিং মুসলিম দেখলেই আশপাশের অনেক মানুষ তাদেরকে এখন ‘‘সন্ত্রাসী'' মনে করে৷ তিনি এই ধারণার প্রতিবাদ জানাতে চান৷ এই ধারণা যে সত্য না, সেই  বার্তা সবাইকে দিতে চান৷ তাই তিনি এই সমাবেশ এসেছেন৷

জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি মো. বেলাল হোসেন তাঁর ১০-১২ বছরের ইউরোপের জীবনে কখনো মুসলমান হিসেবে বৈষম্যের শিকার হননি বলে জানিয়েছেন৷ তবে তাঁর ধারণা, মুসলমানদের নামে সন্ত্রাসী হামলা হলে তাদের ইমেজ খারাপ হয়ে যায়৷ এটা আর বাড়তে দেয়া যায় না৷ এর বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলে সন্ত্রাসীদের মত দুর্বল হবে৷ এটা তাদের শক্তিকেও আঘাত করবে৷

‘‘নেটওয়ার্ক ফর উইমেন'' নামের একটি সংগঠনের অ্যাকটিভিস্ট হেইদা বন থেকে এসে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন৷ তাঁর পরিচিতদের অনেকে মুসলমান৷ কিন্তু তাদের মাঝে তিনি কোনো অস্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখেননি৷ এরপরও যখন মুসলমানদের সমষ্টিগতভাবে দোষ চাপানো হয়, তখন তিনি ব্যাথা পান৷ এ কারণে তিনি এ ধরনের একটা সমাবেশের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন৷ সন্ধান পাওয়া মাত্রই ছুটে এসেছেন৷

তুর্কি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এই সমাবেশের বিরোধিতা করলেও তুর্কি বংশদ্ভূত জার্মানদেরও সমাবেশে দেখা গেছে৷ ইউদানুর কারাকাস নামে একজন জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত জীবনে মুসলিম হিসাবে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি৷ এ কারণে তিনি এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন৷ কে আসলো, না আসলো-সেটা তাঁর বিষয় নয়৷

শান্তির এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বেশ কিছু মানুষও৷ আয়োজকরা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোয় তুর্কিদের সংগঠন ডিটিব এই শোভাযাত্রায় অনাগ্রহ দেখিয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন৷ তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি৷

আয়োজকরা এই সমাবেশে ১০ হাজার মানুষকে সমবেত করার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত উপস্থিতি দুই হাজার ছাড়ায়নি বলেই মনে হয়েছে৷ ডিটিব যোগ না দেয়ার কারণে জনসমাগম কম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷