1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মূর্তি ও ভাস্কর্য বিতর্ক এবং সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা

১১ ডিসেম্বর ২০২০

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক ভাস্কর্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার৷ যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে যে কট্টর ইসলামপন্থিদের হাতে রেখেছিল ক্ষমতাসীন দল, তারা বলছে সেই ভাস্কর্য স্থাপন না করতে৷ আমার চিন্তা অবশ্য অন্যত্র৷

https://p.dw.com/p/3mYul
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়ছবি: bdnews24

বঙ্গবন্ধুর যেই ভাস্কর্য নিয়ে এতকাল আওয়ামী লীগের হাতে থাকা কট্টর ইসলামপন্থিদের আপত্তি, সেটি বসানোর কথা ঢাকার দোলাইরপাড় মোড়ে৷ দক্ষিণাঞ্চলগামী বা ফিরে আসা মানুষদের সহজেই চোখে পড়বে ভাস্কর্যটি৷ ইতোমধ্যে সেই ভাস্কর্য চীনে তৈরি করে নিয়েও আসা হয়েছে৷ এখন শুধু সেটি বেদিতে বসানো বাকি৷

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর ভাস্কর্যটি উন্মোচন করার পরিকল্পনা ছিল৷ তবে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন৷

বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা যারা করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম৷ গত কয়েকবছরে এই গোষ্ঠীর নানা দাবি মেনেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ৷ আর তা দেখে জনমনে এমন এক ধারনা তৈরি হয়েছিল যে গোষ্ঠীটি ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ বিতর্কিত নির্বাচন জিতে আর বিরোধী দল, মতকে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা একটি দলের জন্য এরকম একটি শক্তিকে আয়ত্ত্বে রাখা জরুরি৷ আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই সেটা ভালোভাবেই করতে পেরেছিল৷

কিন্তু, বিপত্তি সৃষ্টি করলো ভাস্কর্য ইস্যু৷ হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দিয়েছেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে’, কেননা তার ভাষায়, তার ‘আব্বার’ ভাস্কর্যও যদি স্থাপন করা হয়, সেটা ‘শরিয়ত সম্মত হবে না’৷

বাবুনগরীর ‘আব্বার’ ভাস্কর্য অবশ্য তৈরি করা হয়নি৷ তবে যারটা তৈরি করা হয়েছে তিনি জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি৷ পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নিজেদের জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক মনে করেন, তারা এমন হুমকি শোনার পরও তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি৷ বরং তাদের আচরণে মনে হচ্ছে, তাদের মধ্যে একধরনের ভয় কাজ করছে৷ সেই ভয় কী ক্ষমতা হারানোর, নাকি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্যের, সেটা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না৷

আরাফাতুল ইসলাম
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

বরং যেটা দেখছি তাহচ্ছে, ভাস্কর্য ও মূর্তিকে আলাদা করার একটি চেষ্টা হচ্ছে৷ সরকারের নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, ‘‘ভাস্কর্য আর মূর্তি- দুটো এক জিনিস নয়, বিষয়টি নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে৷’’

খানের এই বক্তব্যে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে৷ তার বক্তব্যের একটি অর্থ হতে পারে মূর্তির বিরোধিতা করা যাবে, ভাস্কর্যের নয়৷ আর তিনি যদি আসলেই এমন কিছু বুঝিয়ে থাকেন তাহলে তা বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ অবস্থানের উপর একটি আঘাত হবে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ যেসব ধর্মের অনুসারীরা উপাসনায় মূর্তি ব্যবহার করেন তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিঘ্নিত করার সুযোগ করে দেবে৷

এটা সত্য যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমান৷ তবে, এটাও সত্যি ইসলাম একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম৷ আর বাংলাদেশ শুধু মুসলমানের দেশ নয়৷ এই দেশে জন্ম নেয়া প্রতিটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ৷ এই দেশে সব ধর্মের মানুষেরই স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চার অধিকার ছিল, আছে এবং থাকবে৷

ভাস্কর্য আর মূর্তি এক বিষয়, নাকি আলাদা কিংবা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য না মূর্তি বসানো হচ্ছে দোলাইরপাড় মোড়ে - তা নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক, সমালোচনা হতে পারে৷ কিন্তু সংখ্যালঘুদের উপর যেন এর কোন বিরুপ প্রভাব না পড়ে৷ সরকার, রাজনীতিবিদ, ধর্মচিন্তাবিদসহ সকলের প্রতি এই অনুরোধ রইল৷